তিন

797 14 0
                                    

এরপরের দিনগুলীও কেটে যেতে লাগল চমৎকার ভাবেই।দুজনেই সকালে ক্লাস করতে নিজ নিজ কলেজে যাই, তবে খানিকক্ষন পর দেখা যায় হয় আমি মহসীন কলেজে গিয়ে বসে আছি, নতুবা মায়া এসে পড়েছে আমাদের কলেজে।একে অপরের কলেজে যাতায়াতের সুবাদে পরস্পরের বন্ধুদের সাথে আমরা পরিচিত হলাম, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলটাও বড় হতে লাগল।


¡Ay! Esta imagen no sigue nuestras pautas de contenido. Para continuar la publicación, intente quitarla o subir otra.


মায়া আর আমি মোটামুটি সবগুলো সাব্জেক্টই একই স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করলাম।এখন আমাদের কলেজে দেখা হয়ই, আবার দেখা হয় স্যারের বাসায়ও।

তারওপর এল ডিজুস জমানা।রাতে গল্প, খরচ অল্প।সারাদিন একসাথে থাকার পরও রাতের বেলা দুজনের গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর। এখন মাঝে ভাবি, সারাদিন একসাথে থাকার পরও এত কথা খুজে পেতাম কোথায়?
দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল স্বপ্নের মত।

এরই মাঝে এল ডিসেম্বর মাস। দুজনেরই টেস্ট পরীক্ষা শুরু হল। একসময়ের নিজ নিজ স্কুলের সেরা স্টুডেন্ট বলতে গেলে সারা বছর কোন পড়ালেখাই করিনি, এবার একটু সিরিয়াস হতেই হল।

টেস্ট পরীক্ষা চলে গেল।এরপরেই চলে এল মডেল টেস্টের দিনগুলো।কেউ কেউ ভাইয়াদের কাছে পরীক্ষা দিতে লাগল আর কেউ কেউ কোন কোচিং সেন্টারে। আমি আর মায়াও ঠিক করলাম দুজন একই জায়গায় মডেল টেস্ট দেব।

এরই মধ্যে বাসায় কিছু সমস্যা হয়ে গেল। আম্মু আমার পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করছিল। তার সারাসিন পড়ুয়া ছেলেটা হঠাত করেই বদলে গেছে, কলেজ আর স্যারের বাসার নাম করে সারাদিন বাইরে থাকে আর রাতের বেলা মোবাইলে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর আম্মুর চোখ এড়াল না।

এরই মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় রেজাল্টও খুব বেশি ভাল হল না। অপশনাল সহ কোনরকমে টেনেটুনে ফোর পেলাম।এরপর থেকেই আম্মু আমাকে চোখে চোখে রাখা শুরু করল।

মডেল টেস্ট শুরু হয়ে গেল। আম্মু হঠাত করেই নিয়মিত কোচিং সেন্টারে আসা শুরু করলেন।আমাকে পরীক্ষা শুরুর আগে দিয়ে যান, যতক্ষন পরীক্ষা হয় কোচিং সেন্টারের বাইরে অপেক্ষা করেন আর পরীক্ষা শেষে আমাকে বাসায় নিয়ে যান। আবার নিয়মিত বিরতিতে কোচিং সেন্টারের অফিসে গিয়ে খবর নেন পরীক্ষাগুলোতে আমি কেমন করছি।

কোচিং-এ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু হয়ে গেল। এতবড় একটা ছেলে, দুদিন পর এইচ এস সি পরীক্ষা দেবে, তাকে কিনা তার মা কোচিং-এ আনা নেওয়া করে।

তবে সেটা আমার জন্য সমস্যা ছিল না। মানুষের কথায় কান লোক আমি কখনোই ছিলাম না।সমস্যা ছিল আম্মুর কারনে আমি মায়ার সাথে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আম্মু সারাক্ষন গার্ড দেয় বলে কোচিং-এ ওর সাথে কথা বলা যায় না। টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে বলে কলেজেও যাওয়া হয় না।বিশাল পেইন।

এর মধ্যে আম্মু নতুন ফন্দি আটল আমাকে জব্দ করার। আগে আব্বু প্রতি মাসের শুরুতে আমার মোবাইলে ৩০০ টাকা রিচার্জ করে দিত। আম্মুর সুপারিশে হঠাত আমার সারা মাসের মোবাইল বাজেট হয়ে গেল ৫০ টাকা।অনেক গাইগুই করলাম। আম্মু তখন বলল, যদি ৫০ টাকায় না হয় তো আমাকে বলবা। আমার মোবাইল থেকে প্রয়োজনে ফোন করবা। কিন্তু তোমার মোবাইলে ৫০টাকার এক টাকাও বেশি দেয়া হবে না।
বাসায় চিল্লাপাল্লা করেও লাভ হল না।

অবশেষে সুযোগ এল।সেদিন ছিল কোচিং ফি জমা দেওয়ার শেষ দিন।আম্মুর আগে টাকা দিতে মনে ছিল না।আবার সদিন আমাদের এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিল। আম্মুকে যেতেই হত। বললাম, আমাকে টাকা দিয়ে দাও। আমিই পরীক্ষার ফি দিয়ে দেব।

আম্মু অনিচ্ছা সত্বেও আমাকে টাকা দিল।
কোচিং-এ গেলাম মনে ব্যাপক ফূর্তি নিয়ে। আজ পরীক্ষা শেষে মায়াকে নিয়ে একটূ ঘুরব।আম্মু দেরী হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে কিছু একটা অজুহাত দেয়া যাবে। আর হাতেও কিছু টাকা এসেছে।

শুধু ক্লাস থেকে বেরোবার আগে মায়া হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল।পহেলা ফাল্গুন কোন পরীক্ষা নেই, সেদিন দুজন মিলে দেখা করব।
আমি তখনো জানতাম না এই একটা চিরকুটই আমার জীবন চিরদিনের জন্য বদলে দেবে।

তোমার বসন্ত দিনে ... ...Donde viven las historias. Descúbrelo ahora