অসহ্য গরম। আজকাল চিটাগাং এও ঢাকা শহরের মতো জ্যাম হয়।
বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। হঠাৎ চোখ পরল টোকাইটার উপর। ৮/৯ বছর বয়স হবে। কি সুন্দর মায়াবী চোখ জোড়া! মনে মনে ঈর্ষাই হলো! টোকাইটার কাধের উপর একটা চটের ব্যাগ ঝুলছে। টোকাইটা ব্যাগটা এমন ভাবে ধরে রেখছে যেন সেখানে অনেক দামী কিছু রয়েছে। তার চোখে ভয়। হঠাৎ করে কিছু বুঝে উঠার আগেই তার চেয়ে বয়সে ২/৩ বছরের বড় একটি ছেলে দৌড়ে এসে টোকাই টা থেকে ব্যাগ টা নিয়ে ছুটে চলে গেলো।
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম কয়েক সেকেন্ড। এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে গেলাম। আমাকে নামতে দেখে ততক্ষনে বাসে হইহুল্লর শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ আমি বাস ভাড়া দেই নি। কত আর হবে? ২ টাকা? আমি মাথা ঘামালাম না। টোকাই টা আর ঐ ছেলেটার পিছু পিছু ছুটতে লাগলাম। কেনো জানি মনে হলো টোকাই টাকে ব্যাগ টা খুঁজে দিতেই হবে। দৌড়াতে দৌড়াতে টোকাইটা নিজেই ছেলেটাকে ধরে ফেলল। আমিও থমকে দাঁড়ালাম। এবারে তিনজন ই একসাথে দাড়িয়ে হাপাতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর ছেলেটা মুখ খুলল। টোকাই টাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
- অই, তুই আমার ব্যাগ চুরি করসোস কেন্?
- এইডা আমি পাইসি। এইডা আমার।
- না, এইডা আমার।
- না, আমার।এভাবে কিছুক্ষণ টোকাই টা আর ছেলেটার মধ্যে ঝগড়া চলল। তারা দু জন ই আমার দিকে একবারের জন্য তাকিয়েছিল কিন্তু কিছু বলে নাই। ঝগড়া ধিরে ধিরে বাড়তে লাগল। রাস্তায় মানুষ জমে গেলো। এমন ভাব করতে লাগল যেন এখানে মজা চলছে। চোখের পলকেই ব্যাগ নিয়ে ঝগড়া হাতাহাতি তে পরিণত হতে লাগল। আমি সাথে সাথে দৌড়ে গেলাম ওদের আটকাবার জন্য। কিন্তু কথায় আছে না, 'যত বেশি বাধাগ্রস্ততা, তত বেশি উগ্রতা'। তার ই প্রতিচ্ছবি যেন দেখা যাচ্ছে। একে অপরের প্রতি তীব্রবেগে ছুটে আসতে চাইছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি চিৎকার করে উঠলাম, এই যে ভাইরা। দেখছেন না বাচ্চা দুইটা মারামারি করছে? আসুন, ওদের কে থামান।
আমার কথায় ম্যাজিক এর মতো কাজ হল। লোকেরা সবাই ছুটে আসতে লাগল ছেলে দুটোকে থামানোর জন্য। ছেলে দুটি কেউই কারো থেকে কম না। আমি বুঝে পেলাম না অতটুকু একটা ব্যাগের মধ্যে কি আছে যার জন্য ছেলেগুলো এভাবে মারামারি করছে।
পুলিশের গাড়ির সাইরেন শোনা গেলো। আর তা শুনে ছেলেগুলো ভুত দেখার মতো চমকে উঠল। তাড়াহুরো করে দাড়িয়ে পরল। মানুষ জন সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেগুলো কিছু করে উঠার আগেই পুলিশের লোকজন এসে ছেলে দুটিকে ধরে ফেলল। সবাই কে অবাক করে দিয়ে পুলিশের লোকগুলো ছেলেদুটি আর সেই ব্যাগটি নিয়ে গাড়িতে ওঠাতে লাগল। বাচ্চা গুলো ছোটার চেষ্টা করল। কিন্তু দৈত্যের মতো পুলিশ গুলোর সাথে পেরে উঠল না। গাড়িতে উঠার আগ মুহুর্তে টোকাই টা তার মায়াবী চোখ গুলো দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমার বুক টা মোচড় দিয়ে উঠল।
গাড়ি ছাড়ার আগে আমি একজন পুলিশ অফিসারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি হয়েছে?
পুলিশ টি যা বলল তাতে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
পুলিশ টি বলেছিল, "ভাই আর বইলেন না। এরা দুই বদমাইশ ড্রাগ ডিলার দের সাথে জড়িত। ঐ ব্যাগেই আছে ড্রাগ। কমপক্ষে ৭-৮ লাখ টাকার ড্রাগ তো হবেই। এদের মাধ্যমে এদের বস কে ধরতে হবে। আচ্ছা ভাই আসি।"
এই বলে পুলিশ টা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। আর আসল ঘটনা শুনে সব লোকজন ও চলে গেলো। শুধু আমি রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে রইলাম। এই ব্যস্ত রাস্তা টা কে আজ বড় বেশি নির্জন লাগতে লাগল। চোখের কোণে কি যেন চিকচিক করছে। অশ্রু? হয়ত।
একটু পরেই মনে হলো এই নিষ্ঠুর শহরে কারো জন্য দু:খ প্রকাশ করে লাভ নেই। করতে নেই।
টিউশনি আছে। যেতে হবে। আবার বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
-সমাপ্ত-
[সবাইকে সালাম। আশা করি গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের মতামত জানানোর জন্য প্লিস কমেন্ট করুন। এবং কি কি ভুল শুধরাতে হবে তাও বলবেন দয়া করে। উৎসাহ পেলে আরো লিখব। ধন্যবাদ। ]
YOU ARE READING
ছোট গল্পসমূহ
Short Storyমানুষের বাস্তব জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটা ঘটনা গুলো এখানে তুলে ধরতে চাই। কল্পনামূলক গল্পও হয়তো থাকবে। জানিনা সফল হতে পেরেছি কিনা। আপনাদের ভাল্লাগলেই আমি নিজেকে সার্থক মনে করব :) সম্পূর্ণ নিজের মন থেকে লিখেছি। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। [ Highest ran...