আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনস্থির করে ফেলল ফাহিম। যে করেই হোক মনের কথাটা আজ শ্রাবণীকে বলবেই। মনের গভীরে লুকায়িত সেই অনুভূতি বাড়ছে আর তাকে কষ্ট দিচ্ছে। শ্রাবণীকে বলে আজ মন হালকা করবে। শ্রাবণী তাকে খারাপ ভাবলে ভাবুক। কিন্তু এভাবে আর বেঁচে থাকা সম্ভব না ফাহিমের পক্ষে।
ফাহিম আর শ্রাবণী একই এলাকায় থাকে। ফাহিমদের দুই বিল্ডিং পরেই শ্রাবণীদের বাসা। দুজনের বাবাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে। এলাকার কোনো উৎসব-অনুস্ঠানে ফাহিম আর শ্রাবণীর প্রায়ই দেখা হয়। শ্রাবণী পড়ে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে আর ফাহিম অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। শ্রাবণীর হাসিখুশি আর প্রাণচঞ্চল দিকটাই ফাহিমকে প্রথমে আকৃষ্ট করেছিল। কথা বলার সময় শ্রাবণী কোনো ধরনের জড়তায় থাকেনা। ফলে ওর সাথে কথা বলার সময় অস্বস্তিও হয়না ফাহিমের।
মেয়েটার মধ্যে কি যেন আছে। ফাহিম মন্ত্রমুগ্ধের মত প্রতিদিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার কলেজে যাওয়া দেখে। ফাহিম জানে যে এলাকার অনেক সুন্দর আর ভালো ছেলেই শ্রাবণীর জন্য পাগল প্রায়। কিন্তু ফাহিম কিভাবে বুঝাবে যে ওর মধ্যে যে অনুভূতিটি আছে তা আলাদা? সে যে ভীষণ ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে শ্রাবণীকে। তার খিলখিলানো হাসি, টানা টানা চোখ, কোমর পর্যন্ত কেশ, চাল-চলন সব কিছুর প্রেমে পড়েছে ফাহিম। সারা দিন-রাত মাথায় শুধু শ্রাবণী আর শ্রাবণী। মা যখন ভালো মন্দ কিছু রেঁধে দিয়ে বলে আন্টিদের বাসায় দিয়ে আসতে; তখন সকল কাজ কর্ম ফেলে ফাহিম ছুটে আসে। শুধুমাত্র শ্রাবণীকে এক ঝলক দেখবার আশায়।
একদিনের কথা এখনো মনে আছে ফাহিমের। দুপুরবেলা কি যেন একটা কাজ শেষে শ্রাবণীদের বিল্ডিংয়ের সামনে দিয়ে ফিরছিল সে। পানির বোতল ব্যাগ থেকে বের করে দেখে যে শেষ। আর কয়েক কদম দূরেই বাসা। তবুও প্রখর রোদে যেন পা আর চলছে না। ঠিক তখনই বারান্দা দিয়ে শ্রাবণীর মা ফাহিমকে বাড়িতে ডাক দিলেন। ফাহিম আসতে চাইছিল না কিন্তু তিনি জোর করে নিয়ে এলেন এবং বললেন যে আজকে উনাদের সাথে ভাত খেতে হবে। মুখে ' না না ' বললেও মনে মনে খুশিতে আত্মগারা হয়ে গিয়েছিল ফাহিম। শ্রাবণীর বরাবর সামনের চেয়ারটায় বসেছিল সে। কত কথা তাদের! শ্রাবণীর মধ্যে জড়তা নেই কোনো, লজ্জাও নেই। সাবলীল ভাবেই কথা বলছিল ফাহিমের সাথে যেন তাদের কত দিনের পরিচয়!
দুই বছর হয়ে গিয়েছে এ ঘটনার। ফাহিমের ভেতর শ্রাবণীর জন্য ভালোবাসা শুধুই বাড়ছে।
ফাহিম হাঁটছে। ঐ তো দেখা যায় শ্রাবণীকে, কলেজের ইউনিফর্মে। এই সাধারণ বেশেই কি অসাধারণই না লাগছে তাকে! শ্রাবণীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ফাহিম। তাকে ডেকে নিয়ে রাস্তার একপাশে চলে আসে। ফাহিমকে দেখেই স্বভাব সুলভ মৃদু হাসল শ্রাবণী। ফাহিম মুখ খুলল,
- শ্রাবণী.. কেমন আছো?
- এইতো ভালো আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি?
- হুম ভালোই.. শ্রাবণী আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। আসলে অনেক দিন ধরেই চাচ্ছিলাম বলার তবে সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
- জ্বি জ্বি ভাইয়া। বলুন না!
- প্লিজ শ্রাবণী আমায় ভুল বোঝো না। আমি..আমি আসলে তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছি। আ..আসলে অনেক বেশি। না না, আমি তোমার কাছে কোনো জবাব চাইতে আসেনি। শুধু তোমাকে জানালাম মাত্র। গত কয়েক বছর ধরে এই কথা মনের মাঝে বন্দি ছিল। আজ মনটা একটু হালকা হলো।এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে একটু থামল ফাহিম। শ্রাবণীর দিকে তাকাল। এবং এই প্রথম তার চোখে ফাহিম লজ্জা দেখতে পেল। গাল গুলো তার লাল হয়ে গিয়েছে। শ্রাবণী ছুটে চলে এল সেখান থেকে। আসার আগে একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে আসতে ভুলল না।
এই হাসির মানে কি তা জানে ফাহিম। অদ্ভূত এক ভালোলাগায় মনটা ভরে গেল তার। এই কি তাহলে ভালোবাসা?
~সমাপ্ত~
[আস্সালামু আলাইকুম। আশা করি প্রিয় পাঠকরা ভালো আছেন। গল্পটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই ভোট এবং কমেন্ট করুন।
সবাইকে রমজানুল মুবারাক <3]
YOU ARE READING
ছোট গল্পসমূহ
Short Storyমানুষের বাস্তব জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটা ঘটনা গুলো এখানে তুলে ধরতে চাই। কল্পনামূলক গল্পও হয়তো থাকবে। জানিনা সফল হতে পেরেছি কিনা। আপনাদের ভাল্লাগলেই আমি নিজেকে সার্থক মনে করব :) সম্পূর্ণ নিজের মন থেকে লিখেছি। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। [ Highest ran...