বার্থডে সারপ্রাইজ

536 14 17
                                    

আসছে...
ওর বার্থডে..
ফাহিমের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির বার্থডে।

কিভাবে খুশি করা যাবে ওকে? কি দিলে খুশি হবে? আবার অনেক বেশি দামি কিছু দিলে বলবে শুধু শুধু টাকাটা খরচ করেছে। আরেহ বাবা বুঝ না কেন? ফাহিম তোমাকে ভালোবাসে দেখেই সুন্দর আর দামি উপহার দিতে চায়।

হাতে বেশি সময় নেই। আজকে মাসের দুই তারিখ। কালকের মধ্যে টিউশনির টাকাটা পেয়ে যাবে ফাহিম। আর ৬ তারিখ ওর বার্থডে। জমানো আছে কত টাকা দেখল ফাহিম। এবার ওকে চমকিয়ে ছাড়বেই! কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়ল সে। কি কি কিনবে লিস্ট করতে লাগল।

১। একটা কেক,
২। দুটো সালওয়ার কামিয,
৩। হ্যান্ড ব্যাগ

এতটুকু লিখে আটকে গেল ফাহিম। আর কি লিখবে বুঝতে পারছেনা। ও কি কি পছন্দ করে? গল্পের বই কি দিবে? যদি না পড়ে? আচ্ছা ওর তো ঘড়ি খুব পছন্দ। ফাহিম লিস্টে এ্যাড করল 'ঘড়ি'।

আরেকটা আইডিয়া এলো। ওদের দুইজনের একটা ছবি বড় করে বাঁধাই করিয়ে আনবে। কি খুশিটাই না হবে ও ছবিটা দেখে!

এখন সমস্যা হচ্ছে এসব কেনাকাটা করবে কে। ফাহিম কি পারবে মেয়েদের জিনিসপত্র কিনতে? তার চেয়েও বড় কথা যে ফাহিম কিছু করতে গেলেই ও বুঝে যায়। কই, ফাহিম তো কখনো কিছু বুঝতে দেয় না। তারপরেও এত চালু সে!!

উত্তেজনায় উত্তেজনায় দিন কাটছে। ওর বার্থদের দিনও ঘনিয়ে আসছে।

কেনাকাটা করে ফেলল সব ফাহিম একাই। কেক কেনাটা বাকি আছে শুধু। আচ্ছা ও কতটা খুশি হবে??

রাত ১১:৪৫। কালকে সেই কাঙ্খিত দিন। ফাহিম একটা কার্ডে লেখা শুরু করে...

ডিয়ার ভালোবাসা,
আমার এই জীবনে তোমার থেকে ভালো আর কাউকে বাসি নাই। আমার জীবনের সুখ, দুঃখ সব কিছুতেই পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

জানি, ধন্যবাদ দিয়ে তোমার ঋণ শোধ করা যাবেনা। আমার ভালোলাগার সকল উৎস তুমি। তুমি না থাকলে আমি নাই। ইউ কমপ্লিট মি। তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি আর সম্মান করি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমি জানি বাকিদের তুলনায় আমি আর তুমি অনেক বেশি ক্লোস আর ফ্রি। আর এটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে আমার ভাগ্য আর আমার প্রতি তোমার নিঃশর্ত ভালোবাসার জন্য।

কি? বেশি কাব্যিক হয়ে যাচ্ছে নাকি? হাহা। এই কাব্যিকতাও যে তোমার জন্য কম। তোমার তুলনা হয় না। তুমি অতুলনীয়। জানো, আমার সব বন্ধুরা অনেক জেলাস করে আমাদের রিলেশনটা নিয়ে। আমার আর তোমার মধ্যে যে ভালোবাসা আছে তা তো অবর্ণনীয়।

সবসমসয় আমার বার্থডে তে তুমি আমাকে সারপ্রাইজ দাও। এবার আমিও চেষ্টা করলাম। হয়ত তোমার মত ভালো হয়নি, কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

সব শেষে...
শুভ জন্মদিন। অসংখ্য শুভকামনা। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি।

ইতি,
তোমার ফাহিম।

১১:৫৮ বাজে। ফাহিম গিফটের প্যাকেট আর কার্ডটা নিয়ে আম্মুর রুমে গেল। কাপড় ইস্ত্রি করছিল।

- আম্মু!
- বল কি বলবি।
- এদিকে তাকাও।
-উহ! এই নে তাকালাম। বল এবার।
- হ্যাপি বার্থডে!!!!

আম্মুর চোখ থেকে যেন দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। ইস্ত্রির সুইচটা অফ করে দৌড়ে এসে ছেলেকে ধরল।

- আম্মু এগুলো তোমার জন্য।
- এত কিছু কেন কিনেছিস ফাহিম!?
- উফ আম্মু! আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই কিনেছি। তোমার পছন্দ হয়েছে কিনা বল।
- অনেক পছন্দ হয়েছে বাবা। অনেক বেশি।
- থ্যাংক ইউ! আচ্ছা এখন টেবিলে আসো।
- কেন? খিদা লেগেছে? এমাত্র না ভাত খেলি?
- আহা আম্মু আাসো তো!!

টেবিল রুমে গেল তারা দুজন। কেকটা কে টেবিলের মাঝখানে রাখল ফাহিম। বাড়ির বাকিরাও অন্যান্য রুম থেকে চলে এল। কারো মনেই ছিলনা যে আজকে আম্মুর জন্মদিন। কেকটা কাটা হলো। খাওয়া হলো। মাখামাখিও হলো।

এরপর ফাহিম বাঁধাই করা ছবিটি এনে আম্মুকে দিয়ে বলল,
- থ্যাংক ইউ ফর বিং দ্যা বেস্ট মাদার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, আম্মু।
- এ্যান্ড থ্যাংক ইউ ফর বিং দ্যা বেস্ট সান ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড, বাবা।

একটু পর সবাই যে যার রুমে চলে গেল। কেউ জানল না যে আম্মু সেই ছবিটি জড়িয়ে ধরে রাত পার করেছিল।

-সমাপ্ত-

[আমাকে সবসময় সাপোর্ট করে যাওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালোলাগলে প্লিস ভোট এবং কমেন্ট করবেন। সকলকে ভালোবাসা]

ছোট গল্পসমূহWhere stories live. Discover now