গভীরতা

192 18 4
                                    

গ্রামের মেয়ে মিতু। পড়ালেখায় অসম্ভব ভালো। কলেজ শেষ করে এখন সে ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে সে কখনো ভাবতেও পারে নি। গ্রামের সহজ-সরল মেয়েকে ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে মিতুর বাবা মা পাঠাতে চাননি। কিন্তু নাছোড়বান্দা এই মেয়ের কাছে শেষে বাবা-মাকে পরাজয় মেনে নিতেই হয়। মিতু চলে আসে ঢাকা, তার স্বপ্নের শহরে।

ঢাকায় ভার্সিটির হোস্টেলে তার দিনকাল ভালোই যায়। ক্লাস, বন্ধু-বান্ধব, টিউশানির মাঝে জীবনটা বন্দি হয়ে যায়। এই এক বছরের মাথায় সে দু'বার গ্রামে গিয়ে বাবা-মা কেও দেখে আসে। সবমিলিয়ে জীবন চমৎকার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল।

দিনে দিনে মিতু আর সেই গ্রামের মিতু থাকে না। ঢাকা শহরের অন্য দশটা তরুণীর মতো সেও নিজেকে স্মার্ট করে গড়ে তোলে।

এক শীতের বিকেলে মিতু তার বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খেতে বের হলো। মিতুর পরনে একটি লাল রঙের কার্ডিগান। সে সচরাচর সাজগোজ করে না। কিন্তু কি মনে করে সে সেদিন চোখের কোহায় কাজলের ছোঁয়া আর ঠোটে হালকা কররে লিপস্টিকও লাগিয়ে নিল মনে হয়। মিতু জানত না যে সেদিনই তার সাধারণ জীবনে একটি অসাধারণ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল।

মিতুরা ছোট, ছিমছাম একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। ফুচকার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। আসতে কিছুটা সময় লাগবে। মিতুর হ্যান্ড ব্যাগটা তার পাশেই রাখা ছিল, চেয়ারের উপর। হঠাৎ টেবিলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটা ছেলে ব্যাগটা নিয়ে ছুটে গেল। মিতুরা সাথে সাথে 'চোর চোর' বলে তার পেছনে ধাওয়া করতে লাগল।কিন্তু কতক্ষণই বা পারা যায়। চোরটা যেন চোখের সামনে মিলিয়ে গেল। মাত্র দু'দিন অাগে টিউশনির টাকাটা পেয়েছে মিতু। গত মাসে কেনা নতুন মোবাইলটা তো ব্যাগের মধ্যেই আছে! পৃথিবীটা যেন টুকরো টুকরো হয়ে যেতে লাগল মিতুর চোখের সামনে। শুকনো মুখে সবাই আবার ফিরে এল রেস্টুরেন্টে। ফুচকা চলে এসেছে। সবাই খাচ্ছে। মিতুর যেন খাওয়ার দিকে মন নেই।

হঠাৎ পেছন থেকে সুদর্শন,  লম্বামতো একটা ছেলে এসে মিতুকে বলল,"আপনার ব্যাগ।"
মিতুর চোখে খুশিতে পানি চলে এল। সে মানুষটিকে বলল,
- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিভাবে যে থ্যাংক ইউ জানাবো বুঝতে পারছি না।
- আরেহ না না। থ্যাঙ্কস বলে লজ্জা দিবেন না।
- না হবে না। আপনি বলুন আপনার কি চাই।
- আচ্ছা ঠিকাছে এতো করে যখন বলছেন, আপনাদের সাথে এক প্লেট ফুচকা খাইয়ে দেন।
- অবশ্যই। বসুন।

এরপর ওদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ গল্প চলল। পরিচয় বিনিময় হলো। নাম্বার বিনিময় হতেও ভুল হলো না।

তিনমাস পার হয়ে গেছে। ফয়সাল প্রায়ই মিতুকে ফোন দেয়। মিতুও খুশি হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা কথা বলে। মাঝে মাঝে দেখাও করে।

কে জানে। হয়তোবা এভাবেই মিতু ও ফয়সালের মধ্যে গভীর কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। নাকি ইতিমধ্যেই সেটি হয়ে গেছে?

[পড়ালেখার ব্যস্ততার মাঝে আর সময় করে গল্প লিখা হয়না। তবুও প্রাণপন চেষ্টা করছি। আপনাদের ভালো লাগলেই নিজেকে সার্থক মনে করব। ভোট দিতে এবং কমেন্ট করতে ভুলবেন না!]

ছোট গল্পসমূহWhere stories live. Discover now