৯ম পরিচ্ছেদ

826 36 18
                                    

দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো একটি বছর। এইতো কয়েকদিন হলো গরমের ছুটি শুরু হয়েছে। বাসার সবাই মিলে plan করল। এবারও তারা জাফলং যাবে অনেকটা প্রিয়ন্ময়ীর ইচ্ছাতেই। রাতে তারা জাফলং এর উদ্দেশ্যে বের হলো। পৌছুতে পৌছুতে সকাল হয়ে গেছে। সবাই ভীষণ ক্লান্ত। বিকালের দিকে প্রিয়ন্ময়ী একা একা চলে গেল ঐ ব্রীজটার দিকে। আজকের বিকালটা একটু বেশিই সুন্দর। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়েছে। দূর পাহাড়ে মনে হচ্ছে কেউ বাঁশি বাজাচ্ছে।হৃদয়ে দোলা দেয়ার মতো অসাধারণ এক সুর। অনেক নীচ থেকে ভেসে আসছে পানির কলকল ধ্বনি। প্রিয়ন্ময়ী দূর থেকে দেখতে পেল মধ্যবয়স পেরোনো এক দম্পপতি ব্রীজের ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে। তারা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নদীর পানির দিকে। এমন সময় মনে হলো প্রিয়ন্ময়ীকে কেউ নাম ধরে ডাকছে। অনেকটা পরিচিত কন্ঠ স্বর। পেছন ফিরে তাকিয়ে দ্যাখে উৎসাহ। সেদিন প্রিয়ন্ময়ী ওকে অন্ধকারে দেখেছিলো। তবুও চিন্তে কষ্ট হলো না। উৎসাহের কাছ থেকে অদ্ভুত, মস্তিষ্ক সম্মোহন করা একটা গন্ধ আসছে। এরুপ পারফিউম ওর কাছে একেবারেই নতুন।

---প্রিয়ন্ময়ী..।

---কেমন আছেন আপনি?

---এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। তুমি কেমন আছো প্রিয়ন্ময়ী?

---আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এভাবে আমাদের আবার দেখা হবে আমি ভাবতেই পারি নি। আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের হয়তো কোনদিন দেখাই হবে না।

---হা হা....!!

এমন সময় প্রিয়ন্ময়ী কান্নার শব্দ শুনতে পেল। অনেকটা চাপা কান্নার শব্দ। দম্পতিটি যেখানে দাড়িয়ে ছিলো ঠিক ঐদিক থেকে কান্নার শব্দ টা ভেসে আসছে। উৎসাহ দম্পতির দিকে ইঙ্গিত করে বলল, ওরা আমার বাবা মা।

---আচ্ছা ওরা কান্না করছে ক্যানো?

---আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে ঠিক এইদিনে সন্ধ্যায় এই ব্রীজটাতে এসেছিলাম। আকাশটা মেঘলা ছিল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে।মাঝে মাঝে ভেসে আসছে মেঘের মৃদু গর্জন। বাবা মার সাথে রাগ করে এখানে এসেছিলাম। সেদিন আমার ভীষণ মন খারাপ ছিল। আমি ব্রীজের রেলিং ধরে দাড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ একটু দূরে বিকট শব্দে বাজ পরে। আমি আকস্মিক শব্দে ভয় পেয়ে নদীতে পড়ে যাই। এর পরের দিন সকাল বেলা আমার লাশটা নদীর কিনারায় পাওয়া যায়।আমার মৃত্যুটা ছিল একটা দুর্ঘটনা। কিন্তু বাবা মা মনে করে আমি আত্মহত্যা করেছিলাম।সেই থেকে ওরা প্রতি বছর এই দিনে এখানে আসে। প্রিয়ন্ময়ী জানো,মায়ের অশ্রুসজল মুখটা আমি সহ্য করতে পারি না । আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি আমার মা বাবাকে খুব ভালোবাসি।।

প্রিয়ন্ময়ী পাশ ফিরে দেখে শেখানে কেউ নেই। কিন্তু পারফিউমের গন্ধটা এখনও আছে। গন্ধটা ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। সূর্য পশ্চিমে অস্তায়মান। চারদিকে হালকা অন্ধকারের আভা । পাখিরা নীড়ে ফিরছে। বাঁশির সূরটাও এখন আর নেই। আকাশটা বিকেলে পরিষ্কার ছিল কিন্তু এখন মেঘলা। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কিন্তু ঐ দম্পতি এখনো ব্রীজটার মাঝখানে দাড়িয়ে। এরপর আর কিছুই মনে নেই প্রিয়ন্ময়ীর।

প্রিয়ন্ময়ী যখন চোখ খুলেছিল তখন সে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করে। ওর মাথার কাছে ওর মা দাড়িয়ে।

---প্রিয়ন্ময়ী তোর কি হয়েছে?অজ্ঞান হলি কিভাবে?

প্রিয়ন্ময়ী কিছু বলতে পারে না শুধু ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। পাশ ফিরে তাকাতেই দ্যাখে উৎসাহের বাবা মা দাড়িয়ে আছে।

[সমাপ্ত]

প্রিয়ন্ময়ী [Completed]Where stories live. Discover now