#আজ_তার_বিয়ে #লেখিকা-নাইমা জাহান রিতু #পর্ব-১

2.6K 69 4
                                    

-"মা,আমি না এলেই কি হতো না?"
-"না হতো না।তোর ফুপু ফুপা কি ভাবতো?আর তোর বাবা ও রেগে যেত।আর এসে তো তোর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।"
একরাশ হতাশা নিয়ে অদ্রিকা তার মা শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো
-"আমার ভালোলাগছে না মা।মাথাটা ঘুরাচ্ছে।এই শরীরে আমাকে তোমরা বিয়ে বাড়িতে না আনলেও পারতে।"
-"এটা কি ধরণের কথা অদ্রি!একমাত্র ফুপুর ছেলের বিয়েতে আসবি না?"
-"আসবো না সেটা বলি নি।কিন্তু.."
শাহানা বেগম এ পর্যায়ে ভ্রু কুচকে বললো
-"বেশি কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে থাক।এতোটাও অসুস্থ না তুই।আমি একটু তোর ফুপুর কাছ থেকে ঘুরে আসি।"
অদ্রিকা মায়ের কথা শুনে চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মতো শুয়ে পড়লো।ইদানীং তার শরীর টা ভালো যাচ্ছে না।জ্বর,ঠান্ডা,শরীর ব্যথা,মাথা ঘোরানি,বমি বমি ভাব সহ আরো অনেক রোগ লেগেই আছে।অবশ্য এগুলো তো শরীরের রোগ,মেডিসিন নিলে ধীরেধীরে ঠিক হবে।অথচ তার মনে যে রোগটা হয়েছে তার কি হবে?এটার জন্য কি কোনো মেডিসিন আছে??

কটকটে সবুজ রঙ এর সিলকের পাঞ্জাবি,চোখে মোটা ফ্রেমের গ্লাস পড়ে ছাদের এক কোনায় বসে আছে ইমতিয়াজ।মাথা ভর্তি চুল গুলো আগোছালো।বোঝাই যাচ্ছে তার সোজা সোজা চুল গুলো জেল দিয়ে খাড়া করে রাখার চেষ্টায় সে আজ ব্যর্থ।মৃদু বাতাসে তার সামনের কিছু চুল ফর্সা কপাল বেয়ে চশমার উপর এসে পড়ছে।গোল দুটো ছোট ছোট চোখ দিয়ে সে একমনে তাকিয়ে আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।আর পুরু ঠোঁট দিয়ে সিগারেট শুষে নিচ্ছে।হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে তাকিয়ে সিগারেট টা হাত থেকে ফেলে মুচকি হেসে বললো
-"কিছু বলবে মা?"
-"হ্যা।তুই কি আখি কে একবার কল করে কথা বলতে পারবি?"
আখির কথা শুনে ইমতিয়াজের ঠোটের এর হাসি এক নিমিষে মিলিয়ে গেল।সে বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো
-"পারবো"।
-"নাম্বার টা না নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?"
হাটা থামিয়ে দিয়ে ইমতিয়াজ তার মা আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো
-"মা,আমার ফোনে কথা বলা টা পছন্দ না।"
-"আজ বাদে কাল ওর সাথে তোর বিয়ে।অথচ ওর সাথে একবারো দেখা করলি না তুই।অন্তত ফোনে কথা টা তো বলতে পারিস"।
-"বিয়ের পরেই না হয় একবারে কথা বলবো"।
-"একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর ব্যাপার আছে,ইমতি।সব বিষয়ে এমন উদাসীন হলে চলে না।"
-"তুমি দেখে শুনেই ঠিক করেছো।নাম্বার টা দাও"।
নাম্বার টা একটি কাগজে লিখে এনেছিল আয়েশা বেগম।ছেলের হাতে কাগজের টুকরো টা দিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ছেলের গমন পথে তাকিয়ে রইলো আয়েশা বেগম।ঢাকার মাঝে নিজস্ব বিশাল এক ৮ তলার বাড়িতে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করে সে।এই যুগে ঢাকা শহরে নিজস্ব বাড়ি থাকা মানেই অনেক কিছু।অবশ্য তাদের শুধু এখানেই না,গ্রামেও ২ টা বিশাল বিশাল বাড়ি আছে।টাকা পয়সার অভাব নেই বললেই চলে।কোন দিন টাকার অভাব কি সেটা বুঝতে ও দেয় নি তার স্বামি আফজাল সাহেব।পড়শু তাদের ছোট ছেলে ইমতিয়াজ এর বিয়ে।এটাই তাদের বাড়ির শেষ বিয়ে। তার বড় এক ছেলে আর মেয়ের বিয়েটাও সেরে ফেলেছে এর মাঝে।শেষ বিয়ে হিসেবে তেমন একটা হৈচৈ অবশ্য হচ্ছে না।পুরো বাড়ির বাইরে আলোক সজ্জায় ভরে আছে।অথচ বাড়ির ভেতর টা কতোটাই না নির্জন।অবশ্য যার বিয়ে তার নিজেরই মনে কোনো হৈচৈ নেই,প্রফুল্লতা নেই।সেখানে বাড়ির অন্যজন আর কি করবে!আয়েশা বেগম যখন এসব একমনে ভাবছিল ঠিক তখনি শাহানা বেগম তাকে ডাকতে ছাদে এল।আয়েশা বেগমরা দুই ভাই বোন।তার ছোট ভাই আজিজ সরকার গ্রামের একটা স্কুলের মাস্টার।ইমতিয়াজ এর বিয়েতে যে তারাও এসেছে এটা একদম ভূলেই গিয়েছিল আয়েশা বেগম।কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাহানাকে দেখে মনে পড়লো তার।অনেকটা কেপে উঠেই বললো সে
-"কখন এসেছো তোমরা?"
-"জ্বি আপা,কিছুক্ষণ হলো।মেয়েটার শরীর একদম ভালো না আপা।আসতেই চাইতেছিল না।জোর করে আপনার ভাই নিয়ে এসেছে।তার একটাই কথা,ভাগনের বিয়েতে কি দেড়ি করে এলে হয়!আরে এখানে দেড়ির কি হলো আপা বলেন তো?মেয়েটার দিকেও তো তাকাতে হবে।আর মেয়ে আমার গতকালই ভার্সিটি থেকে গ্রামে আসছে আর আজই জোড় করে ঢাকায় নিয়ে এল।আপনার ভাই টা খুব বেশি বাড়াবাড়ি....."
অন্যমনস্ক হয়ে আয়েশা বেগম চুপচাপ তাকিয়ে রইলো শাহানা বেগমের দিকে।শাহানা বেগমের কথা গুলো তার এখন আর কানে আসছে না।সে এখন গভীর এক চিন্তায় ডুবে আছে।এই চিন্তার শেষ কোথায়?

  #আজ_তার_বিয়ে Donde viven las historias. Descúbrelo ahora