#আজ_তার_বিয়ে #লেখিকা-নাইমা জাহান রিতু #পর্ব-২

1.3K 36 1
                                    

ইতিরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ভোর ৫ টার দিকে।এখন বাজে দুপুর ৩ টা।গুলশান তো দুরের কথা এখনো ঢাকার কাছেই এসে পৌছায়নি তারা।রাস্তায় প্রচুর জ্যাম।আসলে রোড গুলোতে কাজ চলছে।একদিকের রোডগুলো তে পিচ ঢেলে ব্লক করে রেখেছে।আর অপর পাশের একটি রাস্তা দিয়েই কিছু গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে আবার কিছু সিলেটের উদ্দেশ্যে বা তার আশেপাশে।আর তাই দুই দিক থেকে আসা গাড়ি গুলোর মাঝে প্যাচ লেগেই জ্যামটা বেধেছে।ট্রাফিকপুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও তারাও পেরে উঠছে।টানা ১০ ঘন্টা হলো মাইক্রো তে বসে থাকতে থাকতে ইতি হাপিয়ে উঠেছে।এইদিকে মন টা পড়ে আছে তার বাবার বাড়ি।আজ তার ছোট ভাই ইমতির বিয়ে।অথচ এখনো সে ঢাকায় পৌছতেই পারছে না।রাস্তার যা অবস্থা তারা কি আদৌ আজ ঢাকায় পৌছাতে পারবে কি না এটা নিয়েই সংশয় হচ্ছে।কিন্তু ইতির তো এখন তার মা ভাইয়ের পাশে থাকার কথা ছিল।ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে এখন তার হৈচে করার কথা ছিল।কাজের চোটে এখন তার দম ফেলানোর সময় টুকু থাকতো না,যদি সে এখন ঢাকায় তার বাবার বাড়িতে থাকতো।মুখে বিরক্ত নিয়ে ইতি তার বর পল্লবের দিকে তাকালো।আজ যদি ইতি তার ভাইয়ের হলুদে উপস্থিত হতে না পারে তাহলে এর জন্য শুধু মাত্র এই লোকটাই দায়ী।ইতিকে নিজের দিকে এভাবে রাগী মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পল্লব ভ্রু কুচকে বললো
-"এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?"
-"তো কি করবো?চোখ বন্ধ করে বসে থাকবো?"
-"সেটা কি বলেছি নাকি?স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকো।"
ইতি তার গলার স্বর কিছুটা বাড়িয়ে বললো
-"তো কি আমি স্বাভাবিক ভাবে বসে নেই?বাদরের মতো লাফাচ্ছি?"
-"অযথা আমার সাথে রাগ দেখাবে না।"
-"অযথা দেখাচ্ছি?"
-"অবশ্যয় এটা অযথা।রাস্তায় কাজ চলছে।আর কাজ গুলো সরকার করাচ্ছে।আমি করাচ্ছি না।সো রাস্তার জ্যামের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।"
-"তোমার এমন যুক্তির খ্যাতাপুড়ি।আমি গতকালই রওনা দিতে চেয়েছিলাম।তোমার জন্য আসা হয় নি।যার কারণে আজ আমি আমার ভাইয়ের হলুদে উপস্থিত থাকতে পারছি না।"
-"চা বাগানের ঝামেলা টা না হলে আমরা কালই আসতে পারতাম।কারণটা তোমাকে আমি কতো বার এক্সপ্লেইন করবো?"
ইতি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।তার এখন মোটেও কিছু ভালো লাগছে না।আর তার স্বামী নামক এই লোকটাকে তো আরো না।হারামি একটা,খাটাশ একটা।মাঝেমাঝে ইতির প্রায়ই এমন টা হয়।পল্লব কে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না সে।কিন্তু এই মাঝেমাঝে সময়টা খুব বেশি না।বেশির ভাগ সময়ই সে পল্লব কে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না।তার মনের মধ্যে আছে শুধুই পল্লব।খুব বেশি ভালোবাসে তাকে ইতি।৫ বছর আগেই তো তার মনটা সে পল্লব কে দিয়ে দিয়েছে।পল্লবকে নিয়েই তো এখন তার এই জগৎ। ৫ বছর হলো বিয়ে হয়েছে তাদের।৪ বছরের একটা পরী ও আছে তাদের জগতে। কিন্তু রাগ উঠলেই একদম মাথা ঠিক রাখতে পারে না ইতি।
-"আম্মু,আর কতক্ষন।বসে থাকতে ভালোলাগছে না আর।"
পল্লব আর ইতির মাঝেই বসে ছিল তাদের একমাত্র মেয়ে প্রাপ্তি।মেয়ের কথা শুনেই পল্লব হাসি মুখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো
-"আর একটু সময় লাগবে,মামুনি।"
-"সেই কখন থেকেই তো একটা কথায় বলছো বাবা।"
-"এখন একদম সত্যি বলছি।ঢাকার মাঝে ঢুকে পড়েছি অলরেডি।"
প্রাপ্তি তার বাবার দিক থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে নিল।তারপর মায়ের সাথে গা ঘেঁষে বসে বললো
-"আম্মু,আমি আজ যে শাড়িটা পড়বো ওটা নানুমনি কিনেছে তো?"
-"হ্যা"।
-"আমি কিন্তু একদম আখিমনির মত শাড়ি পড়বো।"
ইতি কপাল টা ভাজ করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো
-"অসভ্যতারমির জায়গা পাস না?আখিমনি আবার কি?মামি শব্দ টা কি মুখ দিয়ে বের হয় না?আর সরে বস।একদম গা ঘেঁষবি না।"
মায়ের এমন আচারণের সাথে অনেকটা পরিচিত প্রাপ্তি।৪ বছর বয়স হলেও সব কিছুতে পাকা সে।অবশ্য আজকের যুগের ছেলেমেয়েদের পাকতে বয়স লাগে না।আর প্রাপ্তি সেই তুলনায় কম না।বরং দুই ডিগ্রী বেশি।দাদি দাদি একটা ভাব আছে তার মাঝে।প্রাপ্তি মায়ের চোখ রাঙানো দেখে মায়ের কাছ থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে বসলো।তারপর বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।মেয়ের অসহায় দৃষ্টি দেখে পল্লব ইতিকে ডাকলো।তার এখন উচিৎ ইতির রাগ টা ভাঙানো।কিন্তু গাড়ির মাঝে কাজ টা কিভাবে করবে ভেবে পাচ্ছে না।বাসায় থাকলে ইতিকে রুমে ডেকে দুই একটা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে জড়িয়ে ধরে খানিকক্ষণ আদর টাদর দিলেই রাগ টা পরে যায়।মেয়েদের মন টা আসলেই অনেক নরম।হাজারো রাগ স্বামীরর উপর থাকলেও স্বামী যখন তাকে ভালোবাসা দিয়ে কাছে ডাকে,মিষ্টি করে দুটো কথা বলে তখনই রাজ্যের সব রাগ পানি হয়ে যায় তাদের।আর এই টেকনিকটাই কাজে লাগায় পল্লব ইতির রাগ ভাঙাতে।কিন্তু এখন গাড়িতে তো মেয়ের,ড্রাইভার এর সামনে এগুলো সম্ভব না।তাই ইতিকে অন্য কথার মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে রাগ টা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করলো পল্লব।
-"আচ্ছা,আজিজ মামা রা এসেছে?"
ইতির কোন উত্তর না পেয়ে ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে আসল কথায় চলে গেল পল্লব।
-"অদ্রির বিয়েতে আসাটা ঠিক হলো না।যাকে নিয়ে এত বছর হলো ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিল তার বিয়েটা আজ অন্য একটা মেয়ের সাথে নিজের চোখে দেখা চারটেখানে কথা না।কিন্তু কি এমন হলো ওদের মাঝে যে ওরা দুইজন একে অপর কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিল?"
পল্লবের কথা টা শুনে ইতির রাগে ফুলে উঠা মুখটি নিমেষেয় চুপষে গেল।একটা দুঃখের আভা নেমে এল তার চেহারায়।গলাটা কিছুটা স্বাভাবিক রেখেই পল্লবের দিকে তাকিয়ে বললো
-"আমার ইমতির কথা মনে হতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে পল্লব।ওদের মাঝে কিভাবে কি হলো কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।ইমতি কে বারবার কল করে জানতে চেয়েছি।কিন্তু ও কিছু বলছে না।শুধু তার একটাই কথা আপু যা হবার না সেটা বারবার কেন মনে করিয়ে দাও।আমার ভাইটা খুব কষ্টে আছে।কিন্তু আমি বোন হয়ে কিছু করতে পারছি না।"
পল্লব চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
-"হয়তো ব্রেকাপ হয়ে গেছে।এখনকার দিনে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।"
-"৬ বছরের সম্পর্ক এতোটাও ঠুনকো নয় পল্লব।কোনো ঝামেলা তো অবশ্যয় আছে।"
-"হয়তো।"
-"ওদের মাঝে একে অপরের জন্য ঠিক কতোটা ভালোবাসা আছে সেটা আর কেউ না জানলেও আমি অনেক ভালো করেই জানি।৬ বছর আগে যখন ওরা প্রেম শুরু করলো তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম।তারপর অনেল ঝামেলা করে ইমতির মুখ থেকে কথা গুলো বের করিয়েছি।আমার ভাই টাও একটা পাগল।জানো,যেদিন ইমতি আমার কাছে সব কিছু স্বীকার করলো সেদিন লজ্জায় একদম লাল হয়ে গিয়েছিল ও।মুখ টা নিচু করে কতো জড়তা নিয়েই না কথা গুলো বলছিল আমার সাথে।আর আমি ওর এক্সপ্রেসন গুলো দেখে হেসে গড়িয়ে পড়ছিলাম।"
-"বড় বোনের কাছে নিজের প্রেমের কথা বলা টা স্বাভাবিক কিছু না।লজ্জা লাগাটা স্বাভাবিক।"
মুখ কিছুটা বাঁকিয়ে ইতি বললো
-"আমরা কিন্তু আগে বন্ধু।তারপর ভাই বোন।আর ২ বছর খুব বেশি বড় ও না।"
-"হুম,জানি।আর এর কারণেই ইমতি আর অদ্রির রিলেশনের কথাটা শুধু তুমিই জানো পরিবারের মাঝে।অবশ্য তোমার কাছ থেকে পড়ে আমিও জানতে পেড়েছি।এখন আমরা দুজন জানি।"
মাঝখানে বসে এতোক্ষণ চুপচাপ বসে মা বাবার কথা মন দিয়ে শুনছিল প্রাপ্তি।কথা বার্তার এ পর্যায়ে প্রাপ্তিও বলে উঠলো
-"আমিও জানি।"
প্রাপ্তির হঠাৎ করে এমন কথা শুনে পল্লব আর ইতি প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পর মুহূর্তেই আবার দুজন দুজনের তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠল।বাবা মায়ের হাসির কারণ টা না বুঝলেও গাড়ির মাঝের পরিস্থিতি যে এখন অনেকটা স্বাভাবিক এটা বুঝতে পেরেই বাবা মায়ের সাথে হাসিতে যোগ দিল প্রাপ্তি।

  #আজ_তার_বিয়ে Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang