অদ্রি বিছানায় এসেছে তাও ঘন্টা খানেক হলো। কিন্তু চোখে ঘুম নেই। ঘুম টা থাকারও কথা না। কাল তার খুব কাছের একটা মানুষ তার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। যা আর ইচ্ছে করলেও নাগাল পাওয়া সম্ভব না। অবশ্য অদ্রি নাগাল পেতেও চায় না। অন্যের জিনিশ নিয়ে টানা হেচড়া করা তার ধাঁচে নেই। কারণ কালকের পর থেকে ইমতি নামের তার সবচেয়ে কাছের মানুষ টা আখির হয়ে যাবে। আখির সাথে মানিয়ে নিয়ে ইমতি চলতে পারবে কি? পারবে হয়তো। আজ যেভাবে হেসে হেসে কথা বলছিল দুজন, যেভাবে মুগ্ধ দৃষ্টি তে ইমতি তাকিয়ে ছিল আখির দিকে সেটা দেখেই বোঝা যায়, একটু কষ্ট হলেও ইমতি মানিয়ে নিতে পারবে আখির সাথে। পুরুষ মানুষ, কয়দিন আর বৌ কে কাছে না টেনে থাকতে পারবে! আখি মেয়েটাও অসুন্দর না। বরং একটু বেশিই সুন্দর। এই রূপের মোহে হলেও ইমতি আখিকে কাছে টানবে। এক সাথে থাকতে থাকতে ভালোলাগা টাও এসে যাবে হয়তো, কিন্তু ভালোবাসতে কি পারবে আখিকে? ইমতি যে অদ্রিকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই অদ্রির মাঝে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যে ইমতি সব ভুলে আখিকে মেনে নিয়ে নতুন জীবনে অগ্রসর হবে এটাই তো সত্য। আর অদ্রি নিজেও চায় ইমতি ভালো থাকুক, সুখে থাকুক। সেই ভালো থাকা আর সুখে থাকাটা অন্য কোনো মেয়ের সাথে হলেও ক্ষতি কি! ক্ষতি তো নেই। কিন্তু অন্য একজনের বুকে মাথা রেখে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমোবে, তার হৃদস্পন্দন শুনতে পাবে ইমতি এটা ভাবতেই বুকের মাঝে একটা হাহাকার শুরু হয়। কেমন যেন বুক টা খালি খালি লাগে।
অদ্রি কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে উঠে বসলো। তারপর ফোন টা হাতে নিয়ে ইমতির নাম্বার বের করলো। একটা বার খুব করে কথা বলতে ইচ্ছে করছে ইমতির সাথে। কল দিবে কিনা এটা নিয়ে কিছুক্ষণ দ্বিধায় ভুগলো অদ্রি। শেষমুহুর্তে ঠিক হলো কল করবে না সে ইমতিকে। ইমতিকে কল করে তার নিজের কষ্ট টাকে আর বাড়াতে চায় না সে। এই দুই মাসে অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করেছে সে। এখন আবার ইমতিকে কল দিয়ে সেই কষ্টটাকে মাথাচাড়া করার কি দরকার! দুই মাস আগেই তো ইমতি নামের একজন কে কোরবানি করেছে সে তার মন থেকে। এখন সে শুধুই অদ্রির জীবনের অতীত। ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো অদ্রি। হাজার বার চেষ্টা করার পরও সেই দিন টার কথোপকথন গুলো বারবারই তার কানে ভাসে। কেন ওই দিন টি এসেছিল তাদের জীবনে! আর কিছু না ভেবে আবারো বিছানায় শুয়ে পড়লো অদ্রি। চোখ টা বন্ধ করতেই তার সামনে ভেসে উঠলো সেই অভিশপ্ত দিনটির চিত্র।