সেই দিনটির পর থেকে ইমতির সাথে একেবারে যোগাযোগ বন্ধ না করতে পারলেও কমিয়ে দিয়েছিল অদ্রি। বয়ফ্রেন্ডের কথা বলেও দূরে সরাতে পারেনি ইমতিকে সে। ভালোবাসা গুলো কি এমনই হয়? এর উত্তর জানা নেই অদ্রির। কিন্তু ইমতিকে ছাড়া পুরো জীবন টা কাটানো যে অনেকটা কষ্টের এটা পদে পদে উপলব্ধি করতে পারে অদ্রি। তবুও কিছু করার নেই আপাতত তার। এই বাড়িতে আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না অদ্রির। আর ইমতির বিয়েতে তো প্রশ্নই উঠে না। নিজের চোখে নিজের মরণ দেখা যতটা না কঠিন তার থেকে একশত গুণ বেশি কঠিন নিজের চোখের সামনে নিজের আত্মা, প্রিয়মানুষ টিকে অন্যের হতে দেখা। তার উপর ইমতির সাথে বিচ্ছেদ এর পর থেকে অদ্রির শরীর টা ও ভালো যাচ্ছে না। অবশ্য ভালো যাবার কথা ও না। দুই মাস হলো খাওয়া দাওয়া ঘুম কোনোটাই ঠিক মতো হচ্ছে না তার। খাবার দেখলেই বমি বমি লাগে। গলা দিয়ে খাবার নামে না, রাতও কাটে নির্ঘুমে। প্রথম কয়দিন অদ্রির খুব কষ্ট হতো। বলতে গেলে পুরো রাত কেঁদে কেঁদেই কাটাতো। কিন্তু এখন আর কাঁদতেও ইচ্ছে হয় না অদ্রির। কেঁদে কি হবে? যা হবার সেটা তো কেউ আটকাতে পারবে না। আর আসলেই তো, তারা হলো ফকির শ্রেণির মানুষ। তারা কেন বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে যাবে! যেসব কথা অদ্রির ফুপা আফজাল সাহেব তার মুখ দিয়ে বলেছেন তাতে কোনো দিনই তার মুখদর্শন করার ইচ্ছা অদ্রির ছিল না। কিন্তু তার ফুপু আয়েশা বেগমের করুণ আহাজারি তে সে আসতে বাধ্য হয়েছে। বাবা মা হাজার চাপাচাপি করলেও অদ্রি এখানে আসতো না যদি না তার ফুপু ফোন করে সেদিন তাকে অনুরোধ না করতো। কিন্তু অদ্রির মাথায় এটা কিছুতেই আসছে না তার ফুপু এই কাজ টা করলো কেন!!
-"অদ্রি জেগে আছিস?
...অদ্রি?"
ইতির ডাকে চিন্তায় ছেদ পড়লো অদ্রির। এতো রাতে ইতি আপু কেন ডাকছে? ইমতির কি কিছু হয়েছে? ভেবেই বুকের মাঝে গুঁতো দিয়ে উঠলো তার। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুললো অদ্রি। দরজা খুলে ইতির পাশে ইমতিকে দেখেই তার দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলো। দরজা টা খুলে কি সে ভুল করলো? অদ্রি যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলো নিজেকে সামলানোর। তারপর নরম গলায় ইতির দিকে তাকিয়ে বললো
-"কি হয়েছে? ডাকছো কেন?"
ইতি ইমতির দিকে তাকিয়ে বললো
-"কি বলবি বল।"
ইমতি বোনের কথার উত্তরে বললো
-"বলবো। আপু, তুই ঘরে গিয়ে ঘুমা।"
ইমতির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ইতি বললো
-"যা কথা বলার আমার সামনে বল। এতো রাতে আমি কোনো ঝামেলা চাই না।"
-"ঝামেলার কি আছে? আমি অদ্রির কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। তুই যা।"
-"আমি থাকলে কি সমস্যা?"
ইমতি আর কথা না বাড়িয়ে অদ্রিকে ঠেলে রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে নিজেও ঢুকে পড়লো। তারপর দরজার দিকে হাত বাড়ালো। অদ্রি এতোক্ষণ চুপচাপ ভাই বোনের কথা শুনছিল। কিন্তু যখন ইমতির তার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করতে লাগলো তখন অদ্রি ইমতির পাশে গিয়ে ইমতিকে দরজা বন্ধ না করার জন্য বাধা দিতে লাগলো। ইমতি অদ্রিকে উপেক্ষা করে দরজা টা বন্ধ করে দিল। তারপর ইতির উদ্দেশ্যে ঘরের ভেতর থেকে ইমতি বললো
-"যা, তুই গিয়ে ঘুমা। আমি একটু পড়েই বের হয়ে যাব।"
হঠাৎ ইমতির ভিতরে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে পারে এটা কোনো ভাবেই মাথায় আসে নি ইতির। তাহলে কিছুতেই সে তার ভাইকে অদ্রির কাছে নিয়ে আসতো না। এখন ভিতরে কি হচ্ছে সেটা দরজায় কান লাগিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো ইতি। কিছু না বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে একসময় নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইতি।