পর্ব-০৪

31 4 0
                                    

Throwback

রিক্সায় বসে আছে রায়া আর তার মা। রিক্সা ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রায়াদের বাড়ির পথে।

রায়ার মা- নতুন স্কুল কেমন লাগছে, রায়া?
রায়া- ভালো।
রায়ার মা- বান্ধবীরা কেমন?
রায়া- আছে, ভালোই।
রায়ার মা- আর স্যার ম্যাডামরা? তাঁরা কেমন?
রায়া- মোটামুটি।
রায়ার মা- কারো সাথে ঝগরা  করো না তো?
রায়া- আম্মু, আমি কারো সাথে আজও ঝগরা করি নাই। তুমি জানোই।
রায়ার মা- হ্যা তা জানি। তাও বলি, কারো সাথে ঝগরা করবে না। সবার সাথে মিলে মিশে থাকবে। আর কোনো সমস্যা হলে আমাদের কে জানাবে। বা তোমার টিচারদের। নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না, ঠিক আছে?
রায়া- আচ্ছা।

রিক্সা  রায়াদের বাসার সামনে এসে দাঁড়লো। রায়া রিক্সা থেকে নেমে সোজা তিনতলায় তাদের ফ্ল্যাটে চলে গেল। রায়ার মা রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে তারপর উপরে আসলেন।

রায়ার দিনকাল খুব সাধারণ ভাবে যায়। স্কুল থেকে এসেই গোসল আর খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে একটু ঘুমিয়ে নেয়। তারপর বাসায় একজন স্যার সপ্তাহে তিন দিন আসেন। অংক, বিজ্ঞান, বাংলা আর ইংলিশ পড়ান। আর অন্যান্য বিষয়গুলোও মাঝে মাঝে সমস্যা থাকলে দেখিয়ে দেন। রায়ার বাইরে যাওয়া সাধারণত হয় না। আগের স্কুলের বান্ধবীদের সাথে ব্যাচ করে প্রাইভেট পড়ত। নতুন স্কুলের নতুন  বান্ধবীর মায়েদের সাথে এখনও সেভাবে পরিচিত হয় নাই রায়ার মা। মা বলেছে নতুন আন্টিদের সাথে প্রাইভেটের বিষয়ে কথা বলবে। আপাতত এই স্যারই থাকুক।

রায়ার বাবা বিজনেসম্যান।  আর মা কলেজের শিক্ষিকা। রায়ার ছোট ভাই আছে। ওরা দুই ভাই-বোন। আগে রায়া ইংলিশ ভার্সনে পড়তো। কিন্তু বাবা মা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন যে রায়া বাংলা ভার্সনে পড়বে আর রায়ার ভাই ইংলিশ ভার্সনে পড়বে। রায়ার তখন স্কুল পরিবর্তন করা লাগে এবং সে এই স্কুলে এসে ভর্তি হয়।

নতুন স্কুলে অন্য মেয়েদের সাথে রায়ার বন্ধুত্ব এখনও সেভাবে হয় নাই। কিন্তু সেই প্রথম দিন থেকেই শ্রীমা তার খুব ভালো বান্ধবী হয়ে গেছে। রায়ার আগের স্কুলেও তেমন বান্ধবী ছিল না। আসলে রায়া খুব সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না। সে সহজে কাউকে আপন করে নিতে পারেনা। তবে যাকে সে আপন করে নেয়, তাকে সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ও ভালোবাসে। তাকে সে ঠকানোর কথা ভাবতেও পারে না।

সচরাচর তার মন ভালো নাকি খারাপ তা বোঝা যায় না।  তবে আজ তার মনটা ভালো। স্কুল থেকে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে অন্য দিনের মতোই শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুমালো না। কেন যেন ঘুম আসলো না তার। এক-দেড় ঘণ্টা শুয়ে থেকেই উঠে পড়লো। তারপর একে একে ক্লাসের পড়াগুলো শেষ করল। রায়া ছাত্রী হিসেবে খুব ভালো। তবে ইংলিশ ভার্সন থেকে  বাংলা ভার্সনে  নতুন  এসেছে বলে মাঝে মাঝে একটু সমস্যা হয়। শিক্ষকরা বলেছেন কিছু দিনেই তার অভ্যাস হয়ে যাবে বাংলায় পড়াশোনা করার।

.......................................................................

পরদিন স্কুলে,
টিফিনের সময়ে।

শ্রীমা: রায়া, আজকে ঘুরবো না। তুই আমাকে গতকালের অংকটা বুঝিয়ে দিবি বলেছিলি। চল আমরা এখন অংকটা করি।
রায়া: হুম করি, আয়।

ওরা অংক করা শুরু করলো। রায়া খুব সুন্দরভাবে শ্রীমাকে অংকটা বুঝিয়ে দিল। অংক বুঝানোর শেষের দিকেই টিফিন টাইম  শেষ হওয়ার বেল বাজা শুরু করলো। রায়া মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠল। সে ভেবেছিল অংক শেষ করে ক্যাম্পাসে  ঘুরবে, কিন্তু সে সময় হলো না।

রায়াদের ক্যাম্পাসটা রায়ার খুবই পছন্দ হয়েছে। তাই সে প্রতিদিনই টিফিনের সময়ে তাদের ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখে, তার সাথে সঙ্গ দেয় শ্রীমা। তাদের ক্যাম্পাসে অনেক গাছপালা রয়েছে। যা তার মন জুড়িয়ে দেয়। সবুজ শ্যামল ক্যাম্পাসে যেন সে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারে। আগের স্কুলটির ক্যাম্পাস অনেক ছোট ছিল। তবে এই স্কুলটি অনেক বড়।

রায়া: ওগুলো কি গাছ? পাতা গুলো অনেক সুন্দর।
শ্রীমা: ওগুলো কে পাতাবাহার বলে। এই গাছগুলোর পাতায় নকশা থাকে। যেমন এই গাছটার পাতায়ও আছে।
রায়া: হ্যা, অনেক সুন্দর নকশাগুলো। তোদের এখানে ফুল গাছও আছে?
শ্রীমা: হ্যা আছে তো। নয়নতারা, জবা, গোলাপ, সূর্যমুখী, জুই, বেলি আরও অনেক রকমের ফুল আছে।
রায়া: তোদের ক্যাম্পাসটা অনেক সুন্দর, রে!
শ্রীমা: তোদের মানে? এটা তো এখন তোরও ক্যাম্পাস। তুইও এখন এই স্কুলের ছাত্রী। তাই এটা তোরও ক্যাম্পাস, কখনও "তোদের ক্যাম্পাস, তোদের ক্যাম্পাস" বলবি না।
রায়া: আচ্ছা বাবা, আচ্ছা বাবা।

পরবর্তীতে রায়ার আবারও স্কুল পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু শ্রীমা আর রায়ার বন্ধুত্বে কখনও ফাটল ধরেনি। বাবা-মা ব্যতীত শ্রীমাই হয়তো রায়ার সবচেয়ে আপনজন হয়ে ওঠে। সে ছাড়া আর যারা যারা রায়ার জীবনে এসেছিল কেউই সারাজীবন রায়ার পাশে থাকেনি বা  থাকতে পারেনি। সবাই একে একে রায়ার জীবন থেকে দূরে সরে গিয়েছে।

পরিণতি Donde viven las historias. Descúbrelo ahora