"আপনি এখন আসতে পারেন।"
আয়নার সামনে রায়া বসে আছে। লাল লেহেঙ্গা পড়ে। তাকে অপূর্ব লাগছে। এমনিতেই সে অনেক সুন্দরী কিন্তু আজ তার চেহারায় এক অদ্ভুত মায়া দেখা যাচ্ছে।
রায়ার মেকআপ শেষ। তাই রায়া এখন একটু একা থাকতে চায় পারলারের রুমটাতে।সেজন্য মেকআপের মেয়েটাকে সে পরে আসতে বললো। নিচে তার মা গাড়ি নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু সে এখনই যাবে না। কিছুক্ষণ পরে যাবে।
ফোনটা তার সামনেই ছিল। হাতে নিয়ে কন্টাক্টসে ঢুকে পরিচিত এক নাম্বারে সে কল করলো।
রায়া- হ্যালো!
ফোনের অপর দিকের মানুষটি- হুম বলো।
রায়া- আজকে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।খুব কষ্ট করে কথাটা মুখ দিয়ে বের করলো রায়া। কান্নায় বুক ফেঁটে যাচ্ছে তার। কিন্তু তবুও ফোনের ওপার থেকে তার যন্ত্রণাটা হয়তো বুঝতে পারছে না অনিক। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সে বললো,"তো?"
রায়া- তো মানে?
অনিক- তো আমি এখন কি করবো?
রায়া- তুমি কি বুঝতে পারো না যে আমি কতোটা কষ্টে আছি। আমি দিন রাত শুধু কাঁদছি। তোমার জন্য, তোমাকে পাওয়ার জন্য।
অনিক- কেনো? আমি তো ভালো ছেলে না। তোমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে আমি তোমাকে ঠকিয়েছি। আমার জন্য কেন তুমি কষ্ট পাচ্ছো?
রায়া- তুমি আমাকে না ভালোবাসতে পারলেও আমি তোমায় ভালোবেসেছি। নিজের থেকেও বেশি তোমায় ভালোবেসেছি। আমি তোমার কাছে আর কিচ্ছু চাইনি, শুধু একটু ভালোবাসা ছাড়া।
অনিক- আমি তো সে টুকু দিতেও ব্যর্থ হয়েছি। আমি তোমাকে ঠকিয়েছি। আমি আসলে তোমার ভালোবাসার যোগ্য না।
রায়া- একবার তুমি বলেছিলে যে তোমার আমার বিয়েতে আমি লাল লেহেঙ্গা পড়বো, মনে আছে?
অনিক- হ্যা, মনে আছে।
রায়া- আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি। আমি লাল লেহেঙ্গাই পড়েছি। শুধু তোমার জন্য। আর তুমি যদি বলো আমি এক্ষুনি, এই লাল লেহেঙ্গা পড়েই ছুটে চলে আসবো, তোমার কাছে।
অনিক- রায়া, পাগলামি করো না। তোমার সাথে এখন দুইটা পরিবার জড়িয়ে আছে। তোমার আর জামিল ভাইয়ের পরিবার। এভাবে তুমি দুটা পরিবারের মান সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দিয়ো না।
রায়া- হ্যা আমি পাগল, আমি তোমার জন্য পাগল। পাগল তো পাগলামি ই করবে নাকি? (চিৎকার করে)
অনিক- ভুলে যেয়ো না রায়া, তোমার বিয়ের কাবিননামা দুই মাস আগেই হয়ে গেছে। অর্থাৎ তুমি দুই মাস আগেই অন্য কারো হয়ে গেছ। এটা শুধুই অনুষ্ঠান মাত্র। এভাবে আমার জন্য নিজের জীবনটা নষ্ট করো না। আজকের অনুষ্ঠানের পর তুমি তোমার শশুড়বাড়িতে প্রথম পা রাখবে। সেখানে তুমি নিজেকে মানিয়ে নাও। আমার কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলো। দেখবে তুমি তখন তোমার সংসারের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে। আর আমাকে মনে রাখলে শুধুই কষ্ট বাড়বে। কোনো লাভ হবে না।
রায়া- (চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে) কেনো আমার সাথে এমনটা করলে তুমি? আমি কি দোষ করেছিলাম? আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি। এটাই কি আমার অপরাধ?
অনিক- তুমি কিছু করোনি। আমিই তোমাকে ঠকিয়েছি, আমি ই অপরাধ করেছি। আর তার শাস্তিও আমি পেয়েছি। আমি বলছি তুমি শোনো, আমাকে তুমি ভুলে যাও। এভাবে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করো না।
রায়া- আমার জীবনটা তো জাহান্নাম হয়েই গেছে। আর কিছু বাকি নেই। সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাকে এই ভাবে দেখে তোমার খুব শান্তি হচ্ছে আমি জানি। এটাই তো চেয়েছিলে তুমি। যাতে আমি একটা জীবিত লাশ হয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকি। আমি এখন একটা জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। ভালো থেক তুমি।
অনিক- তোমার নতুন জীবনের জন্য আমার শুভকামনা রইলো।রায়া ফোন রেখে দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। বুক ফাঁটা কান্না। চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও সে পারলো না। তার কন্ঠরোধ হয়ে এলো। তার মুখ রক্তিম হয়ে গেছে।
এমন সময়ে তার ফোনটা বেজে উঠলো। সে ভেবেছিল অনিক ফোন দিয়েছে। কিন্তু ফোনটা হাতে নিয়ে সে নিরাশ হলো। ফোনটা সে রিসিভ করলো,
রায়া- হ্যা আম্মু, বলো।
রায়ার মা- সেই কখন থেকে তোর জন্য নিচে অপেক্ষা করছি, তুই কি আসবি না??
রায়া- হ্যা আম্মু এইতো আসছি।
রায়ার মা- হ্যা তাড়াতাড়ি আয়।ফোন রেখে দিলো রায়া। একবার সে আয়নার দিকে তাকালো। কান্নায় তার মেকআপের বেশিরভাগই ধুয়ে গেছে। কিন্তু তাতে তাকে খারাপ দেখাচ্ছে না। মেকআপ ছাড়াই রায়াকে অনেক সুন্দরী লাগে। অনিক রায়া কে মেকআপ দিতে মানা করতো এককালে। সে বলতো, "তুমি ন্যাচারালি অনেক সুন্দর। মেকআপ দিয়ে নিজের সৌন্দর্যটা নষ্ট করবা না।"
অনিকের সেই কথা গুলো এই বন্ধ কুঠুরিতে যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে রায়ার কানে ভেসে এলো। তার মনে হলো আজ সে মেকআপ করেছে বলে অনিক হয়তো তাকে দূর থেকে ভর্ৎসনা করছে। আর কিছুক্ষণ পরই সে জামিলের বাসায় চলে যাবে। সব কি তবে এখানেই শেষ?
ŞİMDİ OKUDUĞUN
পরিণতি
Genç Kurguভালোবাসার পরিণতি নিয়েই এই গল্প। যেখানে নিজের ভালোবাসার জন্য বারবার কাঁদতে হয়েছে রায়াকে। যাকে সে মন থেকে ভালোবেসেছিল সে তাকে ভালোবাসেনি। যার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার সাথে সে সুখি থাকতে পারে নি। আর যে ভালো এক বন্ধুর মতো সারাজীবন তার পাশে ছিল সেও শেষ পর্যন...