তুমি, আমি মাঝে এক বিশাল সমুদ্র - ২

15 2 0
                                    

- হঠাৎ কেন যেতে হবে তোকে?
- মা, আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে এই বছর পরিবেশের উপর নোবেল বিজয়ীকে পুরষ্কার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।
- তোকেই কেন?
- কারণ সেই বিজয়ী একজন বাঙ্গালী আর আমিও বাঙ্গালী। আমি অনেক বড় একজন স্পিকার আর আমাদের এনজিও এখন আন্তর্জাতিক, সেই কারণেই আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে ডেকেছে। আর তোমার মনে নেই, কয়েক দিন আগে ইউনাইটেড ন্যাশনসেও তো আমাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডেকেছিল?
- হ্যা, সব মনে আছে আমার কিন্তু আরিয়ান তুই চোখের আড়াল হলে আমার ভালো লাগে না। সেই বার গিয়েছিলি এক সপ্তাহের কথা বলে কিন্তু ফিরেছিস এক মাস পরে, এইবার কি করবি আল্লাহ‌ই জানে!
- মা, ওইটাও তো কাজে থেকে গিয়েছিলাম। ওই এক মাস যদি না থাকতাম তাহলে আমাদের এনজিও সেখানে স্থাপন করতে পারতাম, বলো?
- এত সমস্যা হতোই না যদি তোর একটা ব‌উ থাকতো।
- ব‌উ থাকলে কি হতো?
- ব‌উ থাকলে তার টানে ঠিক‌ই ছুটে চলে আসতি আর তোর অনুপস্থিতিতে আমার খেয়াল‌ রাখার জন্য‌ও কেউ থাকতো। এখন আমি একা একা থাকি বাড়িতে, তোর বাবা গত হ‌ওয়ার পর থেকে তুইই আমার সব আর তুই দূরে গেলে আমি কিভাবে থাকি বলতো?
- মা মা, চিন্তা করো না। কথা দিলাম এবার সময় মত ফিরে আসবো, মন খারাপ করো না প্লীজ।
- বাবা, একটা বিয়ে কর। আর কতকাল একা থাকবি?
- মা, তোমার ছেলে চিরকুমার হয়েই থাকবে...হাহাহা...
- হাসতে থাক, নাতি নাতনির মুখ না দেখেই মরে যাবো, এটাই আছে আমার ভাগ্যে।
- আরেহ মা...

আরিয়ানের মা উঠে চলে গেলেন। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আরিয়ানের আমেরিকার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট। খুব গর্ব হচ্ছে তার জেনে যে এবার নোবেল বিজয়ী একজন বাঙ্গালী তার উপরে আরিয়ান নিজে সেই ব্যাক্তির হাতে পুরষ্কার তুলে দিবে। ভাবতেই কত ভালো লাগছে।

আরিয়ান তার ব্যাগ গুছিয়ে নিলো আর বের হ‌ওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নিলো। মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে আরিয়ান বের হয়ে পরলো তার বন্ধু সাগরের সাথে। আরিয়ানের মা বিশেষ অনুরোধ করে সাগরকে ডেকে পাঠিয়েছেন তার ছেলেকে বিমানবন্দর পৌঁছে দিয়ে আসার জন্য।

- ফিরবি কবে?
- বেশিদিন না, চার পাঁচ দিন।
- বিয়ে করবি কবে?
- তুই শুরু করিস না আবার দয়া করে।
- কতকাল তার জন্য অপেক্ষা করবি? এবার নিজের জীবন নিয়ে কিছু ভাবতে হবে তোকে। দেখ আরিয়ান, সবাই তার ভালোবাসার মানুষকে পায় না। সবার ভাগ্যে তা থাকে না কিন্তু তার মানে এই নয় যে জীবন সেখানে থেমে যাবে। কারো জন্য কোন কিছু থেমে থাকে না।
- আমি কারো জন্য অপেক্ষা করছি না, উল্টা পাল্টা কথা বলবি না। রাস্তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালা, এখন‌ই মরতে চাই না।
- বেঁচে আছিস নাকি তুই? এটাকে বাঁচা বলে? খালাম্মার দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস কি হয়েছে তার? ভেবেছিস তার কথা কখনো? কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করছিস একটা বাজে মেয়ের...
- বাজে মেয়ে না সে, মুখ সামলে কথা বল।
- দেখলি, তুই এখন‌ও তাকে ভালোবাসিস। কিছু একটা কর আরিয়ান, হয় তাকে খুঁজে বের কর নাহলে তাকে ভুলে এগিয়ে যা।
- থামা, আমি এখানেই নামবো।
- গেট পর্যন্ত নিয়ে যাই?
- লাগবে না, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
- আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছিস?
- আমি কারো উপর রাগ করি নি, আচ্ছা চল। উপর পর্যন্ত চল।

স্বপ্নপুরী (Completed)Wo Geschichten leben. Entdecke jetzt