ছয় বছর।
ছয় বছর কোন কম সময় না। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় না। এই সময়ে অনেক কিছু হয়ে যায়, অনেক কিছু হতে পারে, বদলে যায় অনেক কিছু। হতে পারে এটা কোন অপেক্ষার প্রহর। হতে পারে কারো জীবন ঘুরে যাওয়ার সময়। আবার, হতে পারে প্রতিশোধ পরিকল্পনার প্রহর। অবশ্য, আমার জন্য সবগুলোই ছিল। ছয় বছরে আমার জীবনে অনেক কিছু পালটে গেছে, অপ্রত্যাশিতভাবে যদিও।
গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলে হাত দিয়ে চাপড় মেরে হতাশ হয়ে বসলাম। বাংলাদেশে এই রাস্তার জ্যাম কোনদিন ঠিক হবে না, দেশ যতই উন্নতি করুক। এক ঘণ্টা ধরে একটা জায়গায় বসে আছি তাও বাসার কাছে। হেটে গেলে এখান থেকে দশ মিনিট লাগবে আর গাড়ি থাকার সুবাদে বসে আছি এক জায়গায় এক ঘণ্টা ধরে। আসলে মানুষ যে বলে বাড়ি গাড়ি থাকলে সুখ আসে একদম ভুল বলে। ঢাকা শহরে নিজের বাড়ি আর নিজের গাড়ি কোনটাই থাকতে নেই। নিজের একটা বাড়ি থাকা মানে স্থায়ী হওয়া আর গাড়ি থাকা মানে যখন তখন যেখানে সেখানে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া। কিন্তু আমার মতে, একটা বাড়ি বানিয়ে ফেললে সারাজীবন সেখানেই থাকতে হয়। বাড়ির টানে অন্য কোথাও ঘর করার কথা মাথায়ও আসে না। আর গাড়ি? সেটার প্রমাণ তো আজকেই হয়ে গেল। থাকলেই সব হয়ে যায় না। সেই গাড়ি চালানোর জন্য রাস্তা আর জায়গা থাকতে হয়, নাহলে কোন লাভ নেই।
"তুই আজকে বাসায় আসবি নাকি না?"
হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আর তাকিয়ে দেখি মা। ফোনটা কানে দিতেই তার ঝাঁঝালো কণ্ঠ তবে মিস করেছি মায়ের এই বকুনি।
"ঢাকার রাস্তা আমাকে আসতে দিলে তো আসবো!"
"কোথায় তুই?"
"রাস্তার মোড়ে জ্যামে আটকে গেছি।"
"বাসার কাছে এসেও তুই এত দেরী করবি? আচ্ছা শোন, আমি শানুকে পাঠাচ্ছি একটা লিস্ট দিয়ে। তুই গাড়ি ওর কাছে দিয়ে, লিস্টের সব জিনিস সে কিনেছে কিনা দেখে ওগুলো নিয়ে বাসায় চলে আয়। তোর গাড়ি শানু নিয়ে আসবে।"
"উফফ মা!"
সবসময়ের মত কাজ উদ্ধার করেই আমাকে তার সামনে যেতে হয় কিন্তু ব্যপার সেটা না। কথা হচ্ছে আমার গাড়ি আমি শানুর হাতে কি করে দেই? মা কি ভুলে গেছে গতবার সে কি করেছিল?
"মা, ওই ছ্যামরার হাতে আমি আমার গাড়ি কোন ভরসায় তুলে দেবো?"
"সায়কা, এসব কোন ভাষায় কথা বলছিস তুই? হ্যা? তোকে এত পড়াশোনা করিয়েছি কি এসব শোনার জন্য?"
"মা, কথা ঘুরাবে না। তুমি কাকে পাঠাবা না কি করবা আমি জানি না কিন্তু আমার গাড়ি আমি ছাড়ছি না বলে দিলাম।"
"তো তুই কতক্ষণ ওখানে বসে থাকবি? ওই জ্যাম সহজে ছাড়ে না, তুই ভালো করেই জানিস সেটা।"
"কিন্তু মা, তুমি ভালো করেই জানো শানু গতবার কি করেছে তাহলে কেন বলছো আবার আমাকে এসব?"
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মা আবার বললো,
"ঠিক আছে, শানু তোর গাড়ি ধরবে না, ছুবেও না কিন্তু তুই বাসায় আয়। গাড়ি সাইড করে রেখে আয়, জ্যাম ছাড়লে শানু তোকে কল দিলে তুই গিয়ে নিজে গাড়ি নিয়ে আসিস।"
"কিন্তু মা..."
"আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না সায়কা। সোজা ঘরে আসবে তুমি সব জিনিসপত্র নিয়ে।"
বলেই ফোনটা কেটে দিল। মায়েদের উপরে বলার ক্ষমতা কি আমাদের কারো থাকে?
YOU ARE READING
সুহাসিনী
Mystery / Thrillerভাইয়ের খুনের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা এক বোনের গল্প...