পর্ব ৭

8 1 0
                                    

আচমকা এরকম প্রশ্ন শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। এলাকার কেউ আজ পর্যন্ত এভাবে আমাকে প্রশ্ন করে নি কিংবা জানতেও চায় নি আমি কে বা কোথা থেকে এসেছি। সেখানে এই ব্যাক্তি নিজে থেকে বলছে তার মানে সে জানে আমি কে আর তাকে বিপরীত বললে কোন লাভ হবে না। সুতরাং আমি আরেকটু কাছে গিয়ে, ছাদের লাইট জ্বালিয়ে তারপর উত্তর দিলাম। কথা যেহেতু বলবো চেহারা ভালো করে দেখে বলাটাই উচিত। যে কোন বিপদ থেকে সাবধানে থাকতে হবে।
"জ্বি। আপনি?"
"আমি শেরিয়ার নাদিম জয়, আপনার নাম জানতে পারি?"
"আমি সা..."
ঠিক তখন পরী দৌঁড়ে এখানে চলে আসলো।
"শেরিয়ার চাচ্চু, তুমি চলে এসেছো? কবে এসেছো? বাড়িতে আসলে না কেন?"
পরীর অমন উত্তেজনা দেখে আমি চোখ কুচকে ফেললাম। এত খাতির কিভাবে এই লোকের সাথে? কেন? সে কি এখানেই থাকে নিয়মিত? ভাইয়াকে কিভাবে চেনে? কতদিন ধরে থাকে এখানে?
"পরী, তুমি চিনো ওনাকে?"
পরীকে টেনে আমার কাছে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলাম। লোকটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন দূর থেকে দিনের আলোয় যতটা দেখেছি তার চেয়ে বেশি পরিষ্কারভাবে এখন রাতের আধারে চাঁদের আলোয় দেখতে পাচ্ছি। ফর্সা বলা যায়, চুলগুলো এলোপাথারী কপালের উপর এসে পরেছে যেন গোসল করেছে। পরণে একটা শার্ট আর ট্রাউজার সাথে হাতে তার ঘড়ি। কিন্তু লোকটার চাহনিতে ভিন্ন কিছু একটা আছে যা আমি ধরতে পারছি না। তার চোখগুলো টানা টানা, চিকন ঠোঁটের পাশে বোধহয় একটা তিল আছে আর যখন হেসে পরীকে উত্তর দিচ্ছিলো তখন তার গালের টোল দেখা গিয়েছে। হঠাৎ তার সেই হাসি দেখার লোভ হতে লাগলো।
"হ্যা ইম্মা, আমি চিনি। বাড়ির সবাই চিনে। চাচ্চু এখানেই এই বাড়িতে থাকে, কয়েকদিনের জন্য বাইরে ছিল। কখন এসেছে আমাকে বলেও নি।"
"মামণি," এবার সে কথা বলা শুরু করলো আরো কাছে এসে, "আমি এসেছি আজকে সকালেই আর তোমার দাদুমণির শরীর খারাপ তুমি তো জানোই। তাকে নিয়ে হাসপাতাল গিয়েছিলাম তাই তোমার কাছে আসতে পারি নি। আই এম স্যরি প্রিনসেস, এই দেখো কানে ধরলাম।"
সত্যি সত্যি লোকটা তার কান ধরে একটু ঝুকে গেল আর অমনি পরী হেসে দিয়ে তার অভিমান ভেঙ্গে বললো,
"ঠিক আছে। এবারের মত মাফ করে দিলাম।"
একটা অজানা চাপা রাগ হতে লাগলো আমার। পরীকে বাইরের কারো সাথে মিশতে দেখলে এরকম হয় আর এই লোকটা আদৌ কতটা পরীর জন্য নিরাপদ সেটা না জেনে আমি এদের দুইজনকে একসাথ হতে দিতে পারবো না।
"পরী, খাবার সময় হয়েছে, চলো খাবে।"
পরী আমার হাত ধরে আবার সেই লোকটার দিকে তাকালো,
"চাচ্চু, তুমিও আজকে আমাদের সাথে খাবে। চলে আসো।"
"মণি, উনি তো মাত্র‌ই বললো তার বাড়িতে একজন অসুস্থ। তাকে রেখে সে কিভাবে আসবে? তাই না, পরী?"
পরী মুখ কালো করে ফেললে সেই লোকটা বললো,
"পরী, মামণি, আমি আরেকদিন আসবো। তোমার ইম্মা তো ঠিক‌ই বলেছে। আজকে দাদুমণির সাথে থাকতে হবে আমাকে যে!"
পরী আর কথা না বাড়িয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে শেষবারের মত তাকিয়ে ভেতরে চলে গেলাম। তার দৃষ্টিতে আমার জন্য কি ছিল জানি না কিন্তু তার চারপাশে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এই শেরিয়ার নাদিম জয়ের ব্যাপারে সব খবর বের করতে হবে।

সুহাসিনীDonde viven las historias. Descúbrelo ahora