সমুদ্রের বিশাল ঢেউ আমাদেরকে একের পর এক ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে আর আমরা শক্ত করে বালু আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। বেশ উত্তাল সমুদ্র আজ। আমার জন্য বেশ কষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাচ্চা সবাইকে এভাবে এক হাতে নিয়ে সাগরের মাঝখানে এসে দাঁড়াতে। অস্বীকার করার উপায় নেই, সবাই নাছোড়বান্দা সেই সাথে আমার শরীরে বল যেন একটু কমই। সাগরের ঢেউয়ের শক্তির সাথে পেরে উঠা চারটিখানি কথা নয়। তবুও বাচ্চাদের আনন্দ মুখ দেখেই কিভাবে যেন এই দুর্বল শরীরেও বেশ জোর চলে আসছে আর সেভাবেই তাদেরকেও আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ করে দিচ্ছি।
সময় যখন অনেকটা পেরিয়ে যায় তখন তাদের নিয়ে পানি থেকে বের হয়ে আসলাম। আমরা সবাই একসাথে ধপাশ করেই বালুর উপর বসে পরি। মা পাশে থেকে চেঁচাতে থাকে বেঞ্চে গিয়ে বসতে, রোদে সবার গায়ের রং খারাপ হয়ে যাবে, ইত্যাদি কিন্তু আমরা এতটাই ক্লান্ত যে হেঁটে বেঞ্চ পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি নেই। সেই সাথে বালুর উপর বসেই পানির আসা যাওয়া দেখতে বেশ ভালো লাগছে। আমি তো তাও বসে আছি, তনিমা তো আরেকটু হলেই শুয়ে পরবে।
"ইম্মা, আজকে আর রুমে ফেরার দরকার নেই। এখানেই থেকে যাই।"
"বলে কি মেয়ে! এখানে থেকে যাই মানে কি?"
"হ্যা ফামুণি, পরী ঠিক বলছে। এখানেই আকাশের নিচে, পানির মাঝে শুয়ে থাকতে কি ভালো লাগছে। রুমে ফিরতে হবে না।"
"ঠিকই তো, সমুদ্র ছেড়ে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না।"
ভাবি দেখার আগেই আমি তনিমাকে শোয়া থেকে উঠে বসালাম আর তিনজনের মাথাতেই থাপ্পড় দিলাম। পাগল হয়ে গেছে সবগুলো! এভাবে সমুদ্রে কেউ থাকে নাকি! মনে হচ্ছে এখানে এভাবে আর বসে থাকলে ওরা ঘুমিয়েই পরবে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই আমি উঠে দাঁড়ালাম আর সবাইকে টেনে তুললাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি মা রেদুকে কোলে নিয়ে বাবার সাথে বসে আছে। ভাইয়া-ভাবি আর আপা-দুলাভাই সুন্দর মত সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে প্রেম করছে। দূর থেকে দেখতে বেশ ভালোই লাগছে সবাইকে। দুপুর হয়ে গেছে প্রায় আর সবাই যেখানে ভালো সময় কাটাচ্ছে সেখানে তাদের বিরক্ত করার একদম প্রয়োজন নেই। মাকে বলে তাই আমি আমার পল্টন নিয়ে হোটেল ফিরে গেলাম।হোটেল এসে আরেক কাণ্ড। সবাইকে এক এক করে আমার কাপড় খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে বালু ছাড়িয়ে গোসল করিয়ে দিতে হয়েছে। এতটাই ক্লান্ত তারা যে তাদের হাত পা নাকি চলছেই না। এক জনের কথা, এক মনে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হচ্ছে যেন এখনও সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। পায়ের নিচে থেকে বালু সরে যাচ্ছে এরকম অনুভব হচ্ছে। আরেকজন বলে, পেটের মধ্যে ঢেউ এসে এখনও ধাক্কা দিচ্ছে। এসব আজব কথা বলতে বলতে এসেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েছিল সবাই। রুম সার্ভিসকে বলে পুরো ঘর পরিষ্কার করাতে হবে।
সবাইকে গোসল করিয়ে আমার গোসল শেষ করতে করতে বিকেল ৩টা বেজে গেল। এর মাঝে সবাই দিয়েছে ঘুম আর বাবা কমপক্ষে দশবার আমাকে ফোন দিয়েছে 'আর কতক্ষণ, সবাই ক্ষুধার্থ'। আরেহ বাবা, বললেই কি পরিষ্কার হওয়া যায়! আমিও তো মানুষ। তিন বিচ্ছুর কাজ সেরে এখন আবার নিজের কাজ সারতে হচ্ছে সেই সাথে ওই উদ্ভট অনুভূতিগুলো আমারও হচ্ছে। শরীর পুরো ভেঙ্গে আসছে। ক্ষুধা তো আমারও লেগেছে কিন্তু এই ময়লা শরীর নিয়েই বের হয়ে পরি কিভাবে! এতকিছু বোঝানোর যেমন সময় নেই হাতে, আবার এতকিছু না বুঝিয়েও পার পাওয়া যায় না। অবশেষে কাজ সব শেষ হলে আমার পল্টন নিয়ে বের হয়ে রুম সার্ভিসকে বললাম রুম পরিষ্কার করে দিতে আর আমরা চলে গেলাম পেট পূজা করতে।
খাওয়া দাওয়া সেরে আমি রুমে ফিরে আসলাম। আমার এক ফোটাও শক্তি নেই বাইরে আজকে আর ঘুরাফেরা করার। সবাই গিয়েছে আশে পাশে হাটতে, আমি ঘরেই থাকবো ভাবলাম। স্পিকারে 'বাজে স্বভাব' গানটা ছেড়ে আমি কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম। কখন যে ঘুম চলে আসলো টের পেলাম না।
YOU ARE READING
সুহাসিনী
Mystery / Thrillerভাইয়ের খুনের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা এক বোনের গল্প...