পর্ব ১৪

8 0 0
                                    

লোকটা আমার দৃষ্টিহারা হ‌ওয়ার আগেই দৌড়ে তার কাছে গেলাম কিন্তু এক দল বন্ধু আমার রাস্তার মাঝে চলে আসলো। তাদের ঠেলে বের হয়ে আবার চকলেট রঙ্গের জ্যাকেট খুঁজতে লাগলাম। সে ওই জ্যাকেট‌ই পরেছিল আমি নিশ্চিত কিন্তু উধাও হলো কোথায়? চারপাশে মাথা ঘুরিয়ে তাকে খুঁজতে লাগলাম। সূর্য ঢলে আসছে, হাত দিয়ে সূর্যের আলো আটকে যতদূর সম্ভব তাকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোথাও তার দেখা পেলাম না। আমি কি ভুল করছি? না, আমি নিশ্চিত সেই লোকটা ছিল তাহলে এখন কোথায় চলে গেল? ‌এত বড় জায়গায় আমি এভাবে খুঁজলেও তাকে পাবো না তাই ভাবলাম, এক‌ই হোটেলে যেহেতু থাকি, সেখানে গিয়েই তার সাথে কথা বলবো। তাকে বোঝাতে হবে পিস্তলটা আমি সাথে কেন রাখি না হলে কাউকে না বুঝে বলে দিলে আমার‌ই বিপদ হবে। কেউ জানে না পিস্তলের কথা, পরী আর পুরো পরিবার নিয়ে এই প্রথম আমরা এত বছর পরে বেরিয়েছি সেই ঘটনার পর তাই সব রকম সতর্কতা আমাকে অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু বাবা, পরী অথবা বাড়ির কেউ যদি বুঝে যায় আমি সাথে কি নিয়ে চলছি তাহলে অনেক বড় একটা ঝামেলা হয়ে যাবে। তার উপরে সাধারণ পাবলিকের ধারণা হলে আমার কথা বুঝবে তো পরে, শুনবেও না।
যেই আমি ঘুরে দাঁড়ালাম ঠিক তখন কোথা থেকে কয়েকটা বাচ্চা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এক সেকেন্ড পরে বুঝলাম সবগুলো আমার‌ বাড়ির‌ই বাচ্চা পার্টি কিন্তু সবাই এভাবে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো কেন?
"এই, তোমরা এখানে? ছাড়ো ‌দেখি আমাকে।  কি করছো? ঠিক আছো তোমরা?"
চারপাশে তাকিয়ে বাড়ির আর কাউকে দেখতে পেলাম না। এভাবে একা একা ঘুরছে কেন তারা? সবার কি মাথা খারাপ হয়েছে বাচ্চাদের এভাবে একা ছেড়ে রেখেছে?
"পরী, তনিমা, বাকিরা কোথায়? তোমরা একা কেন?"
আমার কথার কেউ কোন উত্তর দেয় না। আমি তাদের ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সবাই আমাকে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। শেষ মেষ  হাল ছেড়ে আমিও তাদের জড়িয়ে ধরে এই ভরা মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকলাম। চারিদিকে বেশিরভাগ মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল এরপর আবার নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এই ন্যাকামি আর কতক্ষণ চলবে আমি তাই ভাবতে লাগলাম!
বেশ কিছুক্ষণ পরে ছাড়া পেলে রতন আমার হাত তার হাতে নিয়ে বললো,
"স্যরি ফামুণি, আমার ওভাবে খাবার নেওয়া ঠিক হয় নি। তুমি প্লীজ আমার উপর রাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে যেও না।"
রতনের কথায় আমার মনে পরলো কিছুক্ষণ আগে কি ঘটেছিল আর আমি কিভাবে এই ছোট্ট বাচ্চাকে বাজে ভাবে বকেছিলাম। সেসব ভেবে আমার মন আবার খারাপ হয়ে গেল। এভাবে নিজের মেজাজ গরম না করলেও পারতাম কিন্তু আমার যেখানে ক্ষমা চাওয়া উচিত সেখানে রতন নিজেই এসে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। ইশশ! আমার বাড়ির বাচ্চাগুলো মাশাল্লাহ একেকটা হয়েছে! এত্ত কিউট!
"রতন, বাবা আমার, আমি স্যরি। খুব বে‌শি বলে ফেলেছিলাম। তুমি আমার উপর রাগ করো না।"
"না ফামুণি, আমি তোমার উপর রাগ করি নি। একটু খারাপ লেগেছিল যখন তুমি বকেছো কিন্তু পরে যখন তুমি চলে গেলে আর আমরা কেউ তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না তখন আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। মনে হলো আমার জন্য তুমি রাগ করে চলে গিয়েছে।"
"না বাবু, তোমার উপর রাগ করি নি তো আমি। সত্যি বলছি। তুমি‌ও আমার উপর রাগ করো না প্লিজ? ‌প্রমিজ আমি এভাবে আর বকবো না।"
"আমি যাই করি তুমি আমাকে বকো, কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমাদের ছেড়ে যেও না। আমার তোমার সাথে থাকতে খুব ভালো লাগে।"
"হ্যা ফামুণি, আমাদের সবার তোমার সাথে থাকতে খুব ভালো লাগে আর তাই আমরাই তোমাকে খুঁজে বের করেছি," তনিমা বললো।
"ইম্মা, এভাবে আমাদের কিছু না বলে কোথাও যেও না। খুব ভয় পেয়েছি আমি, জানো!"
"তাই নাকি!"
বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরে তাদের আশ্বস্ত করলাম আমি কোথাও যাবো না। মুহূর্তের জন্য আমার মন বেশ ভালো হয়ে গেল কিন্তু ঠিক তখন‌ই সেই লোকটা আমার চোখে পরলো। আমার দিকে একবার তাকিয়ে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল।
"সায়কা, তুই ঠিক আছিস?"
মা আমার সামনে চলে আসলো আর সেই লোকটাকে দেখতে পেলাম না। আমার কি চোখে কোন সমস্যা হয়েছে নাকি মনের ভুল হচ্ছে বারবার?  আমি তাকেই কেন দেখছি সব জায়গায়? তাকে নিয়ে বেশি ভাবছি?
"এই সায়কা, কোথায় হারিয়ে গেলি আবার? তুই ঠিক আছিস? এভাবে না বলে চলে আসলি কেন? দেখ, তোর জন্য আজকের সূর্যাস্ত মিস হয়ে গেল!"
আপাতত সেই লোকটার কথা আর না ভেবে আমার মমতাময়ী মায়ের দিকে তাকালাম। আমার জন্য চিন্তিত ছিল কিন্তু সেটা না দেখিয়ে তিনি সূর্যাস্তের কথা লাগিয়ে দিয়েছে মাঝখানে।
"মা, আমরা এখানে অনেকদিন আছি। চিন্তা করো না, পরের বার ঠিক দেখতে পারবে। চলো আইসক্রিম খাই।"
এটা বলেতেই আমার পিঠে একটা থাপ্পড় পরলো।
"বাবা, দেখো মা মারছে।"
"কি হলো? হঠাৎ এভাবে সবার সামনে এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তুললা কেন?"
"তোমার মেয়ে শীতের সময় কি খাওয়ার কথা বলছে? এই মেয়ে বড় হয়েছে কেউ বলবে? আর তুই, তোর ভাইয়ের ছেলে মেয়েরা আছে চারপাশে। তুই এরকম করলে ওদের কি বলে থামাবি?"
"ওদের থামাবো কেন? ‌ওদেরকে সাথে নিয়ে খাবো। এই যেমন এখন তোমাকে নিয়ে পানিতে নামবো!"
এক চিৎকার করে মাকে টেনে এনে সমুদ্রের পানিতে দাঁড় করালাম। শাড়ি পড়ার কারণে পানিতে মা নামতে পছন্দ করে না আর এখন এই কাজ করায় মারাত্মক ক্ষেপেছে আমার উপর। এবার তার রাগের সামনে যেই পরবে সেই শেষ!

সুহাসিনীWhere stories live. Discover now