দেখতে দেখতে কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। পরীর পরীক্ষা শেষ হলো আর আমিও আমার কাজে বেশ এগিয়ে গিয়েছি। এখন সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছি কক্স বাজার ঘুরতে যাবো আর সেখান থেকে যাবো কুয়াকাটা। পরীর বুদ্ধি এটা যদিও দুই জায়গা দুই মাথায়। আমরা সবাই বুঝালাম যে দুইটা জায়গা একই রকম প্রায় কিন্তু পরীর কথা একটাই যে দুটো জায়গায় নিশ্চয় ভিন্ন কিছু আছে আর সেটাই সে আবিষ্কার করতে চায়। পরীর সামনে আমাদের আর কারো কোন কথা নেই। সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু ঘুরতে যেতে পারলেই বাঁচে এবার আমরা যেখানেই যাই। এই উপলক্ষে নতুন বছর সমুদ্রের পাড়ে উদযাপন করা যাবে।
নাদিমকে নিয়েও তেমন আর কিছু হয় নি আমার সাথে। টুকটাক দেখা হয় আমাদের, কথা বার্তা, হাসি ঠাট্টা। এভাবেই দিন পার হয়ে গিয়েছে। আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি নাদিমের সামনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কারণ এই মন তো আর মানে না। এটা সত্য যে আমি নাদিমের প্রতি একটু একটু করে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। ভালোবাসা কাকে বলে জানি না কিন্তু সেই পর্যায় পর্যন্ত আমি এখনও যাই নি। শুধু জানি নাদিম যখন আমার দিকে তাকিয়ে হাসে, তার দুষ্টুমি দিয়ে আমাকে হাসানো, তার চোখের চাহনি, রাত বিরাতে কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করা, ছাদে গেলে হুট করে তার সাথে দেখা হয়ে যাওয়া এসব আমার মন উৎফুল্ল করে রেখেছে। আমাদের মাঝে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমরা যখন একসাথে সময় কাটাতে চাই তখন কেউ একজন ছাদ পেরিয়ে আরেকজনের ছাদে চলে যাই আর বসে বসে আড্ডা দেই। নাদিমের সাথে থেকে গাছের পরিচর্যা করা বেশ শিখে গেছি আমি আর সেই সাথে সেও টুকটাক গান শিখেছে আমার কাছ থেকে। গান গাইতে বেশ পছন্দ করি আমি আর সেই অর্থে নাদিমও তার ভাঙ্গা গলা দিয়ে আমাকে গান শোনানোর চেষ্টা করে। এত সবকিছু দেখেই তার প্রতি আমার মায়া আরো প্রবল হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে তার প্রতি ঝুলে যাচ্ছি আর নিজেই ভাবছি এর পরিণতি কি হবে। সেটাই বা আমি সামাল দিবো কিভাবে!সবাই এখন গোছগাছ নিয়ে ব্যস্ত। আজকে রাতেই আমাদের সবার ট্রেন তাই ফাইনাল প্রস্তুতি নিয়ে যে যার যার ঘরে। আমার ব্যাগ আগে থেকেই কিছুটা গোছানো ছিল তাই আমার বেশি একটা কাজ নেই। ঝামেলা হয়েছে পরীকে নিয়ে। সে কি পরে যাবে আজকে আর সেখানেই বা বীচের পাশে কি পরবে সেসব ভেবে মাথা নষ্ট করছে। তাই এখন আমরা পরীর সব কাপড় বের করে বিছানায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।
"মামণি, এটা কেমন? রাতের জার্নি যেহেতু আরামদায়ক হবে আর তুমি ঘুমিয়েও আরাম পাবা। আবার বীচেও চাইলে পরতে পারবে যদি আজকে পরে যেতে না চাও।"
একটা ফ্রক আর ট্রাউজার তাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
"ইম্মা, ওই ফ্রকটা আমার ছোট হয়। রঙটাও দেখো কি রকম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। না, ওটা বাদ।"
"তাহলে এটা?" এবার একটা সালোয়ার কামীজ বের করলাম কাতানের। ড্রেসটা দেখে আমারই লোভ লেগে গেল। কাতানের কাপড় আমার পরতে খুব ভালো লাগে আর এখন ইচ্ছে করছে জামাটা পরীর না হয়ে আমার হলে ভালো হতো। আমি পারলে এটাই পরে থাকি সবসময়।
"না ইম্মা, ভারি একটা জামা। অনেক বিরক্তিকর লাগবে আমার আর সমুদ্রে এত সুন্দর জামা পরে তো নামাই যাবে না। অসম্ভব!"
"তাহলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এটা নিয়ে নাও। দেখতে তো বেশ ভালো এটা। তোমাকে মানাবে।"
পরী দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। আমি একটা উপায় বের করে তারপর তাকে কাছে নিয়ে বসালাম।
"পরী, শোনো একটা বুদ্ধি দেই। তুমি জার্নির জন্য যে কোন একটা জামা সিলেক্ট করো। ঢাকা টু কক্স বাজার, কক্স বাজার টু কুয়াকাটা আর কুয়াকাটা টু ঢাকা। এই তিনটা সময়ের জন্য একটা ড্রেস যেটা পরে তুমি ঘুমাতে পারবে, যেভাবে ইচ্ছা বসতে শুতে পারবে, ওয়াশরুমে ঝামেলা হবে না। এরকম একটা জামা বের করো।"
পরী তার পুরো লাগেজ উলটে সব কাপড় বের করে ফেললো। সেখান থেকে একটা জিন্স আর টপস বের করে আমার হাতে দিলো।
"এবার, বীচের জন্য তিনটা ড্রেস বের করো। আবারও, আরামদায়ক এবং যেটা পড়তে-খুলতে সহজ যেন ভেজা শরীর থেকে নিমিষেই খুলতে পারবে। সেই সাথে একটা ভিজলে আরেকটা অন্যদিন পরতে পারবে সেটা না শুকানো পর্যন্ত।"
এবার তিনটা নিজের পছন্দের মত জামা বের করলো। আমি সেগুলো এক দিকে সরিয়ে রাখলাম। এভাবে তার ঘুরাঘুরির জন্য, সুইমিংএর জন্য আর অতিরিক্ত আরো দুইটা কাপড় ঠিক করে তার লাগেজ ফাইনাল করলাম। সেই সাথে তার জরুরী জিনিস পত্র, অর্নামেন্টস আর টুকটাক তার যেটা ইচ্ছা সেটা নিলো। শেষমেষ সব গোছাতে গোছাতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে আসলো।
"ইম্মা, চলো এবার তোমার ব্যাগ গোছাবো। তুমি কি পরে যাবে?"
আমার সোজা সাপটা হিসেব তাই বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। আমি বোধহয় পরীর কাপড়ের তুলনায় অর্ধেক কাপড়ও গুছাই নাই। দুইটা জিন্স, দুইটা কোট, বেশ কয়েকটা টপস আর লঙ ড্রেস দিয়েই আমার কাজ সেরে গেল। সেই সাথে আমার ব্যাগ আমি একটু ফাকাই রাখলাম যেন সেখান থেকে শপিং করলে সহজে নিয়ে আসতে পারি।
সবকিছু ঠিকঠাক করে পরী নিচে চলে গেল অন্যদের দেখার জন্য। আমি ল্যাপটপ নিয়ে একটু বসলাম আর টুকটাক কাজ করতে লাগলাম। এমন সময় হঠাৎ পরীর চিৎকার শোনা গেল। কোন রকম সময় নষ্ট না করে আমি দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।
YOU ARE READING
সুহাসিনী
Mystery / Thrillerভাইয়ের খুনের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা এক বোনের গল্প...