মৃত্যঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার |
মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার উইলিয়াম কেরির অধীনস্থ প্রধান পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার (১৮১৯) রাত্রিশ সিংহাসন (১৮০২) রাজাবলি (১৮০৮) হিতোপদেশ (১৮০৮), বেদান্তচ (১৮১৭) ও প্রবোধচন্দ্রিকা (১৮৩৩)- এই পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেন।মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার শুধু অধ্যাপক পণ্ডিতই ছিলেন না, তিনি সে যুগের বহু জনহিতক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তার শাস্ত্রজ্ঞান ও পান্ডিত্যের খ্যাতি সে আমলে প বাক্যের মত ছড়িয়ে পড়েছিল। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার। তিনি ছিলেন ভাষাবিদ ও ভাষাশিল্পী। প্রয়োজনানুসারী ভাষার প্রবর্তনে তিনি যুগোপযোগী সার্থকতা অর্জন করেছিলেন। তার বাক্যগঠনে ত্রুটি থাকলে বাক্যের প্রাঞ্জলতা ও গাল্পিক কৌতুহল অক্ষুণ রয়েছে। সংস্কৃত পঞ্চতন্ত্র থেকে অনূদিত হিতোপদেশ গ্রন্থের ভাষা সংস্কৃতানুগ।
কিংবদন্তি ও লোকপ্রসিদ্ধির উপর নির্ভর করে রচিত রাজাবলি গদ্যরীতি আরও সুস্থ রূপ নিয়েছে। আরবি ফারসি শব্দ বাহুল্যপূর্ণ গ্রন্থটি প্রাঞ্জল ভাষারীতির জন্য মৃত্যুঞ্জয়ের শ্রেষ্ঠ রচনা হিসে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বেদান্তচন্দ্রিকা গ্রন্থের নামপত্রে মৃত্যুঞ্জ নামোল্লেখ না থাকলেও তা তাঁর নিজের রচনা বলে অনুমিত। মধ্যে বহু সংস্কৃত গ্রন্থের এবং বেদান্ত সূত্র-ভাষ্যাদির অংশ েিব অনূদিত হওয়ায় তাকে স্বাধীন রচনা বলে মনে করা যায় প্রবোধচন্দ্রিকা ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে রচিত হলেও প্রকাশিত হয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর। গ্রন্থটি মূলত দার্শনিক নিবন্ধ।সংস্কৃত বিদ্যাভাণ্ডারের পরিচয় দেওয়ার জন্যই গ্রন্থটি রচিত। এতে কথা সাধু ও সংস্কৃত রীতির ভাষা অনুসৃত হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের গদে সংস্কৃতরীতির প্রয়োগে দোষত্রুটি থাকলেও বিষয়বস্তু ও রচন পদ্ধতিতে একটা সুষম রূপ ফুটে উঠেছিল। বাংলা গদ্যের ক্ষে ভাষাকে উদ্দেশ্যানুগ ও বিষয়োচিত করে তোলার অলিখিত সংস্কা তিনিই প্রথম প্রবর্তন করেন।
মৃত্যুঞ্জয়ের কৃতিত্ব সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, তিনি একদিকে যেমন সাধু ভাষার আদি লেখক- অপরদিকে তেমনি চলতি ভাষার ও আদর্শ লেখক।