বিখ্যাত ঔপন্যাসিক সতীনাথ ভাদুড়ী রচনা করেন গাজরী, ঢোঁড়াই চরিতমানস। এ ছাড়া বিভাগপূর্বকালেই উপন্যাস রচনায় খ্যাতি অর্জন করেন এমন আরও কয়েকজন হলেন: মোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ নজিবুর রহমান, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, মনোজ বসু, সৈয়দ মুজতবা আলী, প্রবোধকুমার সান্যাল,
বুদ্ধদেব বসু, সমরেশ বসু প্রমুখ। এ সময়ের কয়েকজন খ্যাতনামা মহিলা ঔপন্যাসিক হলেন: ইন্দিরা দেবী, অনুরূপা দেবী, নিরুপমা দেবী, সীতাদেবী, আশাপূর্ণা দেবী প্রমুখ।১৯৪৭ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অর্ধশতককালের উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর সমকালীন জীবন-নির্ভরতা। এ সময় ঔপন্যাসিকদের শিল্পভাবনার বিশিষ্টতায় সমাজবাস্তবতার রূপায়ণ ঘটেছে বহু মাত্রায়। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যের প্রাথমিক পর্বে ঔপন্যাসিকরা তাঁদের রচনা শুরু করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, পাকিস্তান আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশভাগের প্রেক্ষাপটে।
ক্রমশ গ্রামীণ ও শহুরে পটভূমি এবং ব্যক্তিজীবনের বহুবিধ জটিলতা এর উপজীব্যরূপে স্থান পেতে থাকে। তবে শুরু থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত প্রধান ঔপন্যাসিকদের প্রায় সকলেই ছিলেন গ্রামকেন্দ্রিক। পূর্ববাংলার কৃষিজীবী মানুষের জীবনসত্য অমর রূপ পরিগ্রহ করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালু। (১৯৪৮) উপন্যাসে। গ্রামীণ জীবনে ক্ষুধা, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, শোষণের বাস্তবতা প্রভৃতি এতে সত্যনিষ্ঠভাবে চিত্রিত হয়েছে। এরূপ গ্রামনির্ভর উপন্যাস তখন আরও অনেকেই রচনা করেছেন। আবুল ফজলের (১৯০৩-১৯৮৩) জীবন পথের যাত্রী (১৯৪৮), আবু ইসহাকের (জ. ১৯২৬) সূর্য-দীঘল বাড়ী (১৯৫৫), শামসুদ্দীন আবুল কালামের (১৯২৬-১৯৯৭) কাশবনের কন্যা (১৯৫৭), আবুল মনসুর আহমদের (১৮৯৮-১৯৭৯) জীবন-ক্ষুধা (১৯৫৭),
শওকত ওসমানের (১৯১৭-১৯৯৮) জননী (১৯৫৮) প্রভৃতি এ সময়কার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। এগুলির মধ্যে শওকত ওসমান, আবু ইসহাক, শামসুদ্দীন আবুল কালাম ও আবুল মনসুর আহমদের উপন্যাস বিষয়ভাবনা, জীবনদৃষ্টি ও চরিত্রচিত্রণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ জীবনের অভাব-বঞ্চনা- শোষণ ছিল তাঁদের উপন্যাসের বিষয়বিস্তৃত ।