পর্ব - ১

45 3 1
                                    

" কোমড়ের ডান দিকের তিলটা সবসময় মানুষকে দেখানোটা বোধয় তোর মুখ্য কাজ হয়ে উঠেছে অ্যালোহা। তবে এসব যে হবি কোনদিনই মেনে নেবেনা! " উঁচু টোলের ওপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুল লাগাচ্ছিলাম, হুট করেই পেছন থেকে এই কণ্ঠটা শুনে তড়াক করে পেছনে ফিরতে গিয়েই পা ফসকে গেলো। তাড়াতাড়ি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। মনে মনে খুব করে বলছি, এ যেন সত্য না হয়! সবসময়ের মতো যেন আজও আমার শোনা এই কথাটা একটা ভ্রম হয়।
- " কী মনে করেছিস, দোষ করে চোখ বনধ করে ফেললেই সব মিথ্যে হয়ে যাবে?" আবারো সেই কণ্ঠস্বর! এক সেকেন্ডের মধ্যেই তাড়াতাড়ি করে চোখটা খুলে তাকাতেই দেখি আমি তার কোলে। মিনমিন করে বললাম,
- " কেন এসেছেন এখানে! ছেড়ে দিন আমায়।" আস্তে করে বললেও কথাটা বেশ জোরের সাথেই বললাম।
- " ঠিক বলছিস তো! ছেড়ে দেবো?" এবার আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। কারণ এ লোককে আমি কোনদিনই চিনে উঠতে পারিনি, ছেড়ে দেয়াটা অসম্ভব কিছু না। শক্ত করে তার ঘাড়টা জড়িয়ে ধরে আস্তে করে টুলে পা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
- " এক্ষুনি গিয়ে শাড়ি চেন্জ করে আয়। " আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে টুল থেকে নিচে নামিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন হবি ভাই। চুপ করে নিচে নেমে এলাম আমি। মাথাটা ভনভন করছে। আবারো কেন এলো এই লোক! কেন আমার গোছানো জীবনটাকে বারবার এলোমেলো করে দেয়! কেন!

ঘরে এসেই আমি চুপ করে বসে রইলাম। আজ সন্ধ্যায় নামজুন ভাইয়ার গায়ে হলুদ। তারই ডেকোরেশনের কাজ করছিলাম। সবই তো নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছিলাম আমি, তবে কেন আবার আমার জীবনে এই হবি ভাই এলেন! জীবনের প্রতিটা সুখের মূহুর্তে আমি একটা না একটা বিপদে পড়ি, এবারো যা ভয় পাচ্ছিলাম, তাই হলো। এই হবি ভাই হলো নামজুন ভাইয়ার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এর বাইরেও উনার সাথে আমি অন্য এক সম্পর্কে আবদ্ধ। তবে সেই কাহিনী সময় হলেই জানতে পারবেন। তাড়াতাড়ি করে শাড়িটা পাল্টে একটা হালকা গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ পরে নিলাম। তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে বের হয়ে এলাম, নয়তো ওরা এসে আবার আমাকে খুঁজতে শুরু করবে। ওহ্, আপনাদের তো বলাই হয়নি। নামজুন ভাইয়ার হবু বউয়ের নাম সুহি। এই বিয়ে উপলক্ষ্যে ভাইয়ার ছয় বন্ধু - হবি ভাই, জাংকুক, জিমিন, তেয়, সুগা, জিন ভাইয়া এসেছেন। বিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত তারা আমাদের বাড়িতেই থাকবেন। আর আমার পাঁচ বান্ধবী - লিয়া, ইউনা, হানা, ইনহা, সুজিনও এসেছে, আন্টিদের বলে আমি ওদের এখানে থাকার অনুমতি নিয়ে নিয়েছি।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছি ছাদে যাওয়ার জন্য, সেখানেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনতলা ওঠার পরেই চোখে পড়লো এক ভয়ানক কাহিনী। জাংকুক ভাইয়ার শার্টের বুকের কাছটায় শক্ত করে খামচে ধরে চোখ বনধ করে আছে হানা, আর হানাকে জড়িয়ে ধরে আছে নারীবিরোধী জাংকুক ভাইয়া। অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছি, আমার ভাইয়ের এই নারীবিরোধী বন্ধুর কী হয়ে গেলো! আর হানা! ওর আবার কী হলো! আমাকে দেখেই জাংকুক ভাইয়া হানাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলো, আর হানা একদৌঁড় দিয়ে নিচে নেমে গেলো। আমিও হাবলির মতো আবার ওপরে উঠতে উঠতে ভাবতে লাগলাম, আসলে কাহিনী কী! ছাদে উঠতেই আবারো হবি ভাইয়ের মুখোমুখি হয়ে গেলাম। তাকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে স্টেজের সামনে গিয়ে কাজ শুরু করলাম। এমন সময়ই " নামুর বাচ্চাআআআআ" এক বিকট চিৎকার শুনে আমরা সবাই পেছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম, পাশের বাড়ির জরিনার মা হাতে বিশাল এক বটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
- " আইজ এই নামুরে কাইট্টা গাঙের জলে না ভাসাইয়া আমি যামুনা। " রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বটি নিয়ে নামজুন ভাইয়ার দিকে তেড়ে এসে কথাটা বললো জরিনার মা। ইতোমধ্যে যারা নিচতলায় ছিলো, মানে মা-বাবা, সখিনা আন্টিও ওপরে ছাদে চলে এসেছে। সখিনা আন্টি জরিনার মাকে বললো,
- " বটি দেখাইতাছো? বটি আমারো আছে, দাঁড়াও আনতাছি।" বলেই উনি দৌঁড়ে নিচে নেমে নামতে লাগলেন। আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে আছি। আসলে কাহিনী কী! কিছুক্ষণ পর বাড়িতে এতোবড় একটা অনুষ্ঠান, আর এই সময়ে এসব ঝামেলা! সখিনা আন্টিকে বিয়ের জন্য দাওয়াত দিয়ে আনা হয়েছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে উনি এ বাড়িতে খুনোখুনি করে যাবেন। সখিনা আন্টি বটি এনে উঁচু করে জরিনার মায়ের দিকে তেড়ে এসে বললো,
- " আইজ একটা ফায়সালা করমু আমি। আমাগো বাড়ি আইসা আমাগো পোলারে মারার হুমকি দেও! " পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাবা মাঝে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
- " আপনারা থামেন। বিষয়টা আমি দেখতেসি।" সখিনা আন্টি বাবাকে বললেন,
- " ভাই তোমার কিছু দেখা লাগবোনা। তুমি শুধু আমি খুন করার পর পুলিশের ঝামেলা থেইকা বাইর কইরা আইনো, তাইলেই হইবো। " বলেই আবার জরিনার মায়ের দিকে তেড়ে গেলো। বাবা নামু ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
- " কী করেছিস তুই? " নামজুন ভাইয়া কিছুক্ষণ মাথা চুলকে বললো,
- " কই, তেমন কিছুতো করিনি!" জরিনার মা এবার আরো ক্ষেপে গেলো।
- " দাঁড়াও নামুর বাপ, তোমার পোলার ভালা কাজের নমুনা নিজের চোখেই দেইখা লও। " বলেই একদৌঁড়ে নিচে নেমে গেলো। পাঁচমিনিটের মধ্যেই দৌঁড়ে এসে আমাদের সামনে এনে দাঁড় করালো জরিনাকে। এবার যেন পুরো পরিবেশ শান্ত হয়ে গেলো। কারোর মুখে একটা শব্দও নেই। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে জরিনা ওরফে আধুনিক যুগের জ্যন্ত মোনালিসাকে দেখায় ব্যস্ত। কারণ জরিনার চেহারা থেকে ভ্রু উধাও। ওর এতো সুন্দর ভ্রু গেলো কই! জরিনার মা বললো,
- " দেহো তোমরা। তোমার পোলা আমার মাইয়ার ভুরু কাইট্টা দিছে।" বলেই মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না করতে লাগলো। এবার বাবা নামু ভাইয়ার সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই নামজুন ভাইয়া বললো,
- " গর্ব হচ্ছে না বাবা? তোমার ছেলেও এই যুগের জীবন্ত মোনালিসা তৈরি করেছে।" বাবা এবার ক্ষেপে গেলো।
- " নামু তুই পুরা কাহিনী খুলে বলবি? নাকি তোরে জরিনার মায়ের হাতে তুলে দিবো? " বাবার এক ধমকেই নামজুন ভাইয়া বলতে শুরু করলো,
- " আর বলোনা বাবা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় যখনই নিজের রুমে গান প্র্যাক্টিস করতে বসি,তখনই জরিনার মায়ের চিল্লাচিল্লি শুনতে হয়-' জরিনা পড়তে বস৷, জরিনা পড়তে বস। ' তো আজকে সকালে জরিনারে দেখে বললাম,
- " কী রে! তুই পড়াশোনা করিসনা কেন?" জরিনা বললো,
- " কয়দিন পরে তোমার বউয়ের লগে সংসার ভাঙ্গাইয়া আমি তোমারে বিয়া করমু।পইড়া কী লাভ!" এই কথা শোনার পর অনেক রাগ উঠেছিলো, পরে পকেট থেকে ব্লেড বের করে জরিনার ভ্রু কেটে দিয়েছি।"  বলেই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসলো নামজুন ভাইয়া। সখিনা আন্টি এবার বললেন,
- " এইবার বুঝসি কাহিনী। মাইয়ারে নামুর লগে বিয়া দিতে না পাইরা এখন অনুষ্ঠানে ঝামেলা করতে আইসো। " জরিনার মা মুখ ভেঙচে বললো,
- " ঐদিনও শাকিব খান আমার হাতে ধইরা কাইন্দা গেছে জরিনারে বিয়া করার লাইগা। আমি কইসি যে শাহরুখে তাইলে গলায় দড়ি দিয়া মরবো। আর তুমি আছো নামুরে নিয়া!" বলেই জরিনার হাত ধরে নিচে নেমে গেলো। সখিনা আন্টি বললেন,
- " সখিনার ভাইগ্নারে অপমান করসে। এর শোধ তো আমি নিমুই। "

Secret Admirer 2Where stories live. Discover now