পর্ব-৫

7 2 0
                                    

গায়ে হলুদের নামে বিশাল এক ঝামেলা পার করে আসার পর একটা ফাঁকা রুমের দেখা মিলতেই সোজা হাতড়ে হাতড়ে বিছানায় গিয়ে এককোণায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। এই বাড়ির মানুষজন এতোটা বেখেয়ালি যে, তারা কোনদিনই রুম থেকে বের হওয়ার সময় ফ্যান বন্ধ করেনা, আজও একই কাহিনী। অবশ্য এতে আমার সুবিধাই হয়েছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সারাদিনের সকল চাপ, ক্লান্তি যেন ঘুম হয়ে চোখে নেমে এলো। মাঝরাতে ঘুমটা বারবার হালকা হয়ে যাচ্ছে। খেয়াল করে বুঝলাম, আমার বেশ ঠাণ্ডা লাগছে। পায়ের নিচ থেকে টেনে কাঁথাটা গায়ে দিতেই আবারো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। একটু পরেই শুরু হলো এক ভয়ানক কাহিনী। ঘুমের মাঝেই বুঝতে পারছি, কেউ একজন আমার কাঁথাটা ধরে টানাটানি করছে। এদিকে আমিও শক্ত করে কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে আছি। কাহিনী কী! এভাবে বারবার আমার কাঁথা ধরে টানছে কে! এই বাড়িতে আবার ভূতের আগমন ঘটলো নাকি! এতোরাতে গ্রামের পথ দিয়ে এসেছি, কোন গাছের পেত্নী আমার লেজ ধরে ঝুলে পড়েছে কে জানে! আধো আধো ঘুমের মাঝেই মাথায় এসব কথা ঘুরছে। এমন সময় হুট করেই কাঁথায় জোরে একটা টান পড়লো, আর কাঁথাটা জড়িয়ে ঘুমানোর কারণে আমিও গিয়ে সেই পেত্নীর ওপর গিয়ে পড়লাম। কিন্তু একি! এই ঘ্রাণ! না না, এ হতে পারেনা। কী করে সম্ভব এটা! একলাফে তার ওপর থেকে সরে এসে লাইটটা জ্বেলে দিলাম। আর লাইট আসতেই বিছানায় থাকা মানুষটার চেহারা দেখে আমি ধপাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। দেখলাম- আমি যেই পাশে ঘুমিয়েছি, তার পাশেই হবি ভাই ঘুমিয়ে আছেন। আমি হবি ভাইয়ের ওপরেই গিয়ে পড়েছি, সেটা ঠিক। কিন্তু তার পাশে যেই মানুষটা আছে, তাকে ঠিক মেনে নিতে পারিনি আমি। অরণ্য! হবি ভাইয়ের ঠিক পাশেই তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে অরণ্য। একি কাণ্ড! এই ছেলে এ বাড়িতে কী করছে! ঠিক কতক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরেছে, আমি জানিনা। তবে কেউ আমার চোখে মুখে পানি ছিটায়নি, সেটা বুঝতে পেরেছি। কারণ এখনো হবি ভাই খালি গায়ে উপুড় হয়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, আর তার ওপর পা দিয়ে ঘুমাচ্ছে অরণ্য। হবি ভাই জেগে যখন ওকে দেখবে, তখন কী হবে! মাথা পুরোপুরি হ্যাং হয়ে গিয়েছে আমার। দুবছর আগের সেই ভয়ঙ্কর অতীত আবারো আমার চোখের সামনে ভাসছে। কেন এই অরণ্য এ বাড়িতে! আবার কোন মোড় নেবে আমার জীবন! আর কতো সহ্য করবো আমি!ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। আর সাথে সাথেই চোখ মেললো হবি ভাই। বর্তমানে কোনপ্রকার অনুভূতি আমার মধ্যে কাজ করছেনা। পাথরের মূর্তির মতো বসে আছি। হবি ভাই একটু নড়েচড়ে উঠে বসে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। - " তুই এই রুমে কী করছিস? " হবি ভাই চোখমুখ কুঁচকে প্রশ্নটা করলেন আমায়। আমি এখনো চুপ। কোন শব্দ বের হচ্ছেনা মুখ থেকে। নিঃশব্দে তাকালাম অরণ্যের দিকে। এখনো বেঘোরে ঘুমুচ্ছে ও। আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে হবি ভাইও পাশে ফিরে তাকালেন। একঝলক দেখেই হবি ভাই আমার দিকে ফিরে বসলেন। তার চোয়াল শক্ত হয়ে আছে, চোখদুটো থেকে যেনো রক্ত ঝরবে। হাতদুটো মুঠ করে রেখেছে সে।- " এই লেন্জাটা এখানে কী করছে? " দাঁতে দাঁত পিষে প্রশ্নটা করলো হবি ভাই। আমি চুপ। হবি ভাই আমার অবস্থাটা হয়তো বুঝতে পেরেছে, তাই আমাকে আর কিছু বললোনা। আমার হাত ধরে সোজা হাঁটতে লাগলো। আমিও রোবটের মতো তার সাথে সাথে চলতে লাগলাম। রাত তিনটা। ছাদে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি আমি আর হবি ভাই। হবি ভাই আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছেন, আর আমি তার ওপর ভর দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছি। - " তুই এই রুমে কী করছিলি? " হবি ভাই শীতল কণ্ঠে প্রশ্নটা করলেন। আমি রুম খোঁজা থেকে শুরু করে সবটা বললাম। হবি ভাই হঠাৎই একটু শব্দ করে হেসে উঠলেন। একি! এই লোক এমন মূহুর্তে হাসছে! তাও শব্দ করে! পাগল-টাগল হয়ে গেলো নাকি! - " তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি তোকে কিছুই বলবো না অ্যালো। তুই বড় হয়েছিস। এখন তোর নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারিস। " হালকা কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে কথাটা বললো হবি ভাই। এবার আমার ভেতরের সব অভিমানেরা যেন আন্দোলন শুরু করলো। আর কতো! দুইটা বছর ধরে নিজের ভেতরে সবটা চেপে গিয়েছি, না পেরেছি কাউকে বলতে,আর না মন খুলে কাঁদতে। সবকিছু যেন আজ বাঁধ ভাঙা হয়ে গেলো। গরগর করে বলতে লাগলাম,- " এই কথাটা দুবছর আগে খেয়াল ছিলোনা? তখন কেন আমার সিদ্ধান্ত শুনেননি! এখন এসেছেন মলম লাগাতে!" হবি ভাই চুপ করে রইলো। চুপ করে মনে করতে লাগলাম দুবছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। দুবছর আগেঃপ্রতিবছরই ভাইয়া আর আমার জন্মদিন খুব ধুমধামের সাথে পালন করা হয়। সেবারো ভাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রায় একসপ্তাহ আগে থেকে ওর বন্ধুরা এ বাড়িতে এসে থাকছিলো। এদের মাঝে ছিলো হবি ভাইও। এর আগেও প্রায়ই আসতো হবি ভাই, কিন্তু তখন কোনপ্রকার কথাবার্তাই হতোনা। আড়চোখে দেখতাম, একজোড়া চোখ চরম বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবতাম, সমস্যা কোথায়! যখনি দেখি, তখনই এই ছেলেটা এমন বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায় কেন আমার দিকে! আমার তো তাকে দেখে মোটেই বিরক্ত লাগেনা! সবসময়ই চুলগুলো কপালে বিচরণ করে, ঢোলাঢালা টিশার্ট আর জিন্সেও তাকে অসাধারণ লাগে। এককথায় হ্যান্ডসাম। একদিন সকালে ভোরে বাচ্চাদের নিয়ে কানামাছি খেলছিলাম। চোখ বনধ অবস্থায় বাচ্চাদের বদলে কাকে ধরেছি, তা কি আমি জানি নাকি! - " ঠিক বয়সে বিয়ে হলে তোর বাচ্চাকাচ্চা খেলতো এসব। ছাড় বলছি, নয়তো এমন এক থাপ্পর দেবো!" এই হুমকি শুনে জড়িয়ে ধরে রাখা মানুষটার থেকে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়িয়ে চোখের পট্টিটা খুলতেই দেখি হবি ভাই! - " সরি হবি ভাই! আমি তো ভেবেছিলাম.." কথাটা শেষ করার আগেই হবি ভাই বলে উঠলেন,- " সরি! কীসের সরি! জড়িয়ে ধরে সরি বলে দিলেই হয়ে যায়! তাহলে হিসাবটা বরাবর করতে দে!" বলেই একটানে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিলেন হবি ভাই। এমনিতেই তো তার প্রতি একটা আলাদা ভালোলাগা ছিলো, তার ওপর উনার এসব কাজে মনে হচ্ছিলো মাথা ঘুরে পরে যাবো। তার বুকের ওপর মাথাটা রাখতেই যেন তার ভেতরের ধুকপুক শব্দটা শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রায় একমিনিট পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে হবি ভাই বললেন, - " এবার ঠিক আছে। হিসেব বরাবর। কিন্তু এরপর থেকে এ ধরনের ভুল করবি তো শাস্তি দেবো। মনে থাকে যেন। " কিচ্ছুটি বলতে পারিনি সেদিন। চুপ করে মাথাটা নিচু করে হালকা বাঁকিয়ে একদৌঁড়ে নিচে নেমে এসেছিলাম। এরপর থেকেই তার থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম। শাস্তির ভয়ে না, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কারণ, দূর থেকে তাকে দেখলেই হৃৎস্পন্দন যে হারে বেড়ে যেতো, তাতে মনে হতো কখন না আমার আত্মাটাই না বেরিয়ে যায়! তার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়ানো, বারবার হাত দিয়ে চুল উল্টানো, তার গভীর চাহনি- কোনটাই আমার চোখ এড়াতো না। আর তার শরীরের সেই ঘ্রাণ! হাজার ফুলের ঘ্রাণের মাঝে আমাকে ছেড়ে দিলেও তার সেই ঘ্রাণ চিনতে ভুল হয়না আমার। এ ঘ্রাণটা শুধু তার মাঝেই আছে। তো ভাইয়ার জন্মদিনের দুদিন আগে মা বললো,- " দুদিন পরে নামুর জন্মদিন। এদিকে আমার শরীরটাও ঠিক নাই। ওরে তো একটা কিছু দেওয়া লাগবো। তুই যাইয়া কিন্না আন। " খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখনই মা বললো,- " হবির মোটরসাইকেলে কইরা তোরে নিয়া যাইবো। রেডি হ গিয়া। " একথা শোনার সাথে সাথেই সব আনন্দ ফুস করে উড়ে গেলো। মনে হতে লাগলো, এবার বোধয় নিজের মরণ নিশ্চিত। এই লোকের সাথে যাবো আমি! মাকে তো 'না' বলতেও পারবোনা। একটা কালো টপস আর কালো জিন্স পরে নিলাম। চুলগুলো উঁচু করে ঝুটি করে নিয়ে বের হয়ে আসতেই দেখি কালো শার্ট আর কালো জিন্স পরে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাচ্ছে হবি ভাই। এই প্রথমবার দেখলাম, তার বুকের ওপরের বোতামদুটো খোলা। কোন পুরুষ এতোটা সুন্দর হয় কীকরে! হা করে তার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। সুগভীর চোখ, তার চাহনি নেশা ধরিয়ে দেয়ার মতো। হাতাদুটো একদম সুন্দরভাবে কনুই অব্দি গুটানো। - " একটা পুরুষের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা করেনা?" ফোন থেকে মাথা তুলে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন হবি ভাই। তার চোখদুটো আজ প্রথমবার খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম। এতো বেশি সুন্দর কেন এই লোক! - " বাইকে উঠে বস।" তার কথার ঘোর কাটলো আমার। ধুর! কী করছি আমি! তার এতো অপমানের পরেও বারবার তার দিকেই কেন তাকাচ্ছি আমি! - " কে ছ্যাঁকা দিয়েছে তোকে?" বাইকে উঠে বসেছি, আর সাথে সাথেই হবি ভাই বাইক থেকে নেমে গিয়ে হেলমেটটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কথাটা বলে উঠলেন। উনার এই অদ্ভুত প্রশ্নে হাবলির মতো তাকিয়ে আছি। - " ছ্যাঁকা! ছ্যাঁকা কে দিবে আবার! " বললাম আমি। - " তাহলে মরতে চাচ্ছিস কেন?" আরো অবাক হয়ে গেলাম। - " আমি মরতেই বা চাইবো কেন?" চোখ কুঁচকে প্রশ্নটা করলাম তাকে।- " মরতে না চাইলে বাইকে এমন আলগার ওপর বসেছিস কেন! এখন বাইকটা স্টার্ট দেয়ার সাথে সাথে তুই কুমড়োর মতো গড়িয়ে পড়বি, আর তাতে পুরোপুরি না মরলেও যে হাতপা ভেঙে ঝুলে থাকবি, এটা সিউর। " হায় খোদা! এই একটা কথা বলার জন্য এই লোক ছ্যাঁকা অব্দি চলে গেলো! কী ভয়ানক মানুষরে বাবা! - " তো কী করবো আমি!" মুখটা পেঁচার মতো করে কথাটা বলতেই হবি ভাই বাইকে বসে একটানে আমার হাতদুটো টেনে এনে তার বুকের ওপর রাখলেন। সাথে সাথেই মনে হলো, আমি শেষ। এই লোক বোধয় আমাকে মারার সব প্ল্যান করেই এ বাড়িতে এসেছে। হাতদুটো কাঁপছে, তবুও শক্ত করে তার কালো শার্টটা খামচে বসে রইলাম। - " খিঁচুনী রোগীদের মতো করছিস কেন! ভালো করে বস।" এমনিতেই বারবার তার ঐ ধুকপুক শব্দটা কানে বাজছে, তার ওপর এতোটা কাছাকাছি থাকায় তার শরীরের সেই তীব্র নেশালো ঘ্রাণ আমার মস্তিষ্ককে এলেমেলো করে দিচ্ছে। এলোমেলো চিন্তাভাবনায় নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে। মার্কেটে ঢুকতেই শুরু হলো আরেক ঝামেলা। একটা দোকানে ঢুকে ভাইয়ার জন্য ঘড়ি দেখছিলাম, হুট করেই সেখানে একদল হিজড়া ঢুকে পড়লো। ছোটকাল থেকেই হিজড়াদের আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। একবার দেখেছিলাম একটা মেয়ের হাত মচকে দিয়েছিলো, এরপর থেকেই তাদের দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা। আজও ঠিক একই কাহিনী ঘটলো। ভয়ের চোটে হবি ভাইয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে তার শার্টটা খামচে ধরে রইলাম। হিজরাদের লিডার দোকানদারের কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য যা তা করছে। এদিকে তাদের আচরণে ভয়ের পাশাপাশি বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে যাচ্ছি আমি। হুট করে একজন হিজড়া এসে হবি ভাইকে বললো,- " তোমার বউরে কী আমরা তুইলা নিয়া যামু নাকি? এমনে লুকাইয়া রাখসো কেন?" হবি ভাই আমাকে তার পেছন থেকে টেনে এনে আমার কাঁধে হাত রাখলেন, এরপর বললেন,- " আমার বউ আপনাদের ভয় পায়, তাই। " সাথে সাথেই জ্ঞান হারালাম আমি। আমার সাধারণ মস্তিষ্ক হবি ভাইয়ের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শোনার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি হয়তো।যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন আমি হবি ভাইয়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। হবি ভাইয়ের হাতে পানির বোতল, তার চেহারা ফ্যাকাশে। - " কীরে অ্যালো! তুই খেয়ে আসিসনি!" আমি তখনও বিরবির করে 'বউ' শব্দটাই জপছি। হবি ভাই আমাকে তার বউ বললো! - " কী বিরবির করছিস?" অদ্ভুত চেহারা করে হবি ভাই আমাকে প্রশ্ন করলেন। - " আমার বউ আপনাদের ভয় পায়। " আমার এই কথা শুনে হবি ভাই আমার মাথাটা তার কোল থেকে তুলে আমার দুগালে হাত দিয়ে তার মুখটাও আমার বরাবর আনলেন। দুজনের মাঝে দু ইঞ্চির ফারাকও নেই। তার তপ্ত নিশ্বাসের দমকে পুড়ে যাচ্ছি আমি। হবি ভাই স্বরটা নামিয়ে বললেন, - " তাকা আমার দিকে। " তার ঘোরলাগানো কণ্ঠ! কী ভেবে যেন তার চোখেই চোখ রাখলাম। - " তুই ঠিক আছিস! মাথাব্যথা করছে?" আরেকদফা অবাক হলাম। তার এমন রূপও আছে! - " না না, আমার কিছু হয়নি।" হবি ভাই আমার গাল ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে বললেন,- " খেয়ে আসিসনি কেন!" মিনমিন করে বললাম,- " তাড়াহুড়ো করে বের.. " কথা শেষ করার আগেই হবি ভাই বলে উঠলেন,- " তোরে ধরে এখন ধুড়ুমধাড়ুম পিটানো উচিৎ। " মুখটা ভার করে বসে রইলাম। হবি ভাই এবার যেই কাজ করলেন, তাতে মনে হলো আমি দ্বিতীয়বার জ্ঞান হারাবো। আমাকে হুট করেই কোলে তোলে নিয়ে হবি ভাই হাঁটা শুরু করলেন। এ কি কাণ্ড! এতোবড় মেয়েকে রাস্তায় কোলে নিয়ে কেউ হাঁটে! - " কি করছেন হবি ভাই! আমি হাঁটতে পারবো, নামিয়ে দিন আমায়" বলতেই হবি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,- " আর একটা শব্দ করলে তোর কী হাল করবো আমি নিজেও জানিনা!" উনার এই হুমকি শোনার পর আর কোনকিছু বলার সাহস হলোনা। রাস্তার সব মানুষ আমাদের দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। না পারতে হবি ভাইকে বললাম,- " হবি ভাই, দেখুন,রাস্তার মানুষ হাসছে। কী বলবে মানুষ বলুন তো!" হবি ভাই সামনের দিকে তাকিয়েই বললেন,- " মানুষের মাথা আছে, তাই ভাবে। ওদের ভাবতে দে। ওদের ভাবনার চিন্তা তোকে করতে হবেনা। " কী পরিমাণ নির্লজ্জ! একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে আমাকে নিয়ে বসালো। এরপর নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। প্রতিটা মানুষ যেভাবে তাকিয়ে ছিলো, দেখে মনে চাচ্ছিলো মাটি ফুঁড়ে নিচে ঢুকে যাই। কিন্তু এই মানুষটার কোন হেলদোলই নেই সেসব ব্যাপারে। খাওয়া-দাওয়া শেষে মার্কেট করে ফিরতেই দেখি আমার মামাতো ভাই অরণ্য এসেছে। অরণ্য ছোটবেলা থেকেই ছ্যাঁচড়া ধরনের। মেয়ে দেখলেই তার লেজ ধরে ঝুলে পড়ে। এ কারণে ওকে ঠিক সহ্য করতে পারিনা। তবুও ও আমার পিছু ছাড়েনা। বাড়ি গিয়ে পৌঁছাতেই অরণ্য দৌঁড়ে এসে আমার হাত ধরে হ্যান্ডশেক করতে লাগলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। বড় হওয়ার পর দেখছি ওর ছ্যাঁচড়ামো আরো বেড়েছে। বিকেলে ছাদে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় পাশের বাড়ির পিচ্চিটা এসে বললো,- " ভাইয়া কইসে আইজ রাইতে তোমারে ছাদে আইতে। " বলেই ও চলে গেলো। হবি ভাই! উনি আবার আমায় ডাকলো কেন! কোন বিপদ আছে কে জানে!সারা সন্ধ্যা ছটফট করে কাটালাম। রাত দশটা বাজতেই সবাই যার যার ঘরে গেলো, আর আমি সোজা ছাদে। এরপরই ঘটলো সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনাটা। ছাদের ঠিক মাঝ বরাবর যেতেই দেখলাম.....চলবে...


( যতক্ষণ শরীর ঠিক লেগেছে, ততক্ষণ লিখেছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।আরেকটি বিষয়- আজকের পর্বটায় অতীতের ঘটনার বর্ণনা চলছে, তাই অন্যান্য চরিত্রগুলো আনা সম্ভব হয়নি। সামনের পর্বেই অতীতের ঘটনাটা পরিস্কারভাবে সামনে আসবে। হ্যাপি রিডিং 💜


-Alloha Sarsalmaz )


Secret Admirer 2Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang