পর্ব ৮

5 0 0
                                    

জিন ভাইয়ার মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে হবি ভাই নিশ্চিন্তে আমাকে নিয়ে সোজা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। কিছুটা ভয় আর অনেকটা লজ্জায় গুটিয়ে বসে রইলাম। কে জানে আজ কোন শাস্তি পেতে হয়! হবি ভাইয়ের শাস্তি যে কতোটা ভয়ানক হয়, সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট ধারণা আছে। আমাকে ভিজাতে গিয়ে উনি নিজেও অনেকটা ভিজে গিয়েছেন। পরনের ধূসর রঙের পাতলা টিশার্টটা উনার শক্ত শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। সিল্কি চুলগুলো বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে, আর উনার চোখের ঘন পাপড়িতে এসে জমা হচ্ছে সেই পানি। হঠাৎই হবি ভাই আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। আর তার প্রতি কদমে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পেতে লাগলো। কী করতে চাইছেন তিনি! কেন আসছেন আমার কাছে!
- " আপনি দূরেই থাকুননা! কাছে এসে শাস্তি দেয়ার কী দরকার হবি ভাই! " প্রায় আধাহাত দূরে হবি ভাই দাঁড়িয়ে আছে, আর আমি চোখমুখ খিঁচে কথাটা বলে দিলাম। একটু করে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম, হবি ভাই ওপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন। আমি কী হাসার মতো কিছু বললাম!
- " ঐ ল্যান্জা আশেপাশে আসলে তখন তো না করিসনা? এরপর থেকে ল্যান্জা আর তোর কাছে আসার পরিস্থিতিতে থাকবেনা, তাই ওর দায়িত্বটা আমিই নিয়ে নিবো ভেবেছি। " বলেই হবি ভাই আরেকটু এগিয়ে এলেন আমার দিকে। এবার তার চুল থেকে পরা পানি সোজা আমার কপালে এসে ঠেকছে। তার উষ্ণ শ্বাস আমার নাকে এসে পড়তেই কেঁপে কেঁপে উঠছি। মনে মনে নিজেকেই গালমন্দ করছি। কেন এতোটা অস্থির হয়ে পড়ি এ লোকের কাছে আসলে! আমার এই কাঁপুনি, দ্রুতচলা শ্বাসপ্রশ্বাস যে তার সামনে আরো বেশি লজ্জায় ফেলে দেয়!
- " তোর এই অস্থিরতাই তোকে প্রতিবার বাঁচিয়ে দেয় অ্যালো! বকিসনা ওদের। " চমকে উঠে তাকালাম হবি ভাইয়ের দিকে। আমার মনের কথা উনি জানলেন কীকরে!
- " আর কতোদিন এভাবে পুড়াবি আমায় বলতো?" অবাক হয়ে গেলাম। হঠাৎ কী হয়ে গেলো হবি ভাইয়ের? এসব অদ্ভুত ধরনের কথা বলছেন কেন! পুড়ছি তো আমি, তার তপ্ত শ্বাস প্রশ্বাসে।
- " কী চান আপনি? মেরে ফেলবেন আমায়?" মুখ থেকে কীকরে যে এই কথাটা বের হয়ে গেলো,বুঝতেই পারলাম না। কিন্তু আমার এই একটা কথাতেই হবি ভাইয়ের চেহারা বদলে গেলো। কিছুসময় আগের শান্ত চেহারাটায় কঠিন ভাব এসে পড়লো, এবার তার শ্বাসপ্রশ্বাস যেন আমার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।
- " চেন্জ করে আয়। আরেকটা কথা- আর কোনদিন মৃত্যুর কথা মুখে এনেছিস তো..." হবি ভাই একঝটকায় দূরে সরে দাঁড়ালেন। আমি ওয়ারড্রব থেকে জামা বের করছি, এমন সময় পেছন থেকে হবি ভাই বলে উঠলেন,
- " চেন্জ করে ফিরে আয়, পরে বাকী হিসেব করছি। " ফের তার শীতল কণ্ঠের হুমকি। জামাটা হাতে নিয়ে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই হুট করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ইনহা। ও আমার বাথরুমে কী করছে! ও আবার সবটা শুনে ফেললো নাতো! টেনশনে ঘামতে শুরু করলাম। সব কথা যদি না-ও শুনে থাকে, হবি ভাইকে এই রুমে দেখে সন্দেহ তো করবেই।
- " তুই আমার বাথরুমে কী করছিস?" ভয়টাকে লুকিয়ে মুখটা গম্ভীর করে ইনহাকে প্রশ্ন করলাম। ইনহা কোমড়ে হাত দিয়ে বাঁকা চোখে হবি ভাইয়ের দিকে তাকালো। আমিও ওর সাথে সাথে পেছনে মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম, হবি ভাই নিজের টিশার্টটা খুলে ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ট্রাউজারের পকেটে দুহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছেন। তার চেহারায় চিন্তা তো দূর, এখানে যে একটা কিছু ঘটতে চলেছে, তারই কোন ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। ভয়ানক কঠিন সময়গুলোতে এই লোকের এমন ভাব আমার ঠিক সহ্য হয়না। ইনহা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- " THE HOBI ভাই তোর রুমে, তাও এতো সুন্দর অবস্থায় কী করছে সেটা আগে বল। " আমি এবার শুরু করলাম ভুজুংভাজুং।
- " আসলে হয়েছে কী,,ঐ মানে হবি ভাই.. " পেছন থেকে হবি ভাই এসে দাঁড়ালেন আমার পাশে। মাথাটা এবার যেন ৩৬০ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘুরতে শুরু করলো। এই লোক টিশার্ট খুলেছে ভালো কথা, তাই বলে এভাবে জামা ছাড়াই ঘুরবে নাকি! নির্লজ্জ পুরুষ! তার শরীরের সেই ঘ্রাণটা বেশ তীব্রভাবে আসছে এবং আমার চিন্তাশক্তিকে আরো দূর্বল করে দিচ্ছে। হা করে তার ফর্সা বুকের দিকেই তাকিয়ে আছি। হবি ভাই মাথাটা সামান্য নিচু করে আমার কানের কাছে নিজের মুখ এনে বললেন,
- " আমার বুক দেখার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে। আপাতত ইনহাকে সামলা। " ছিহ্! এবারো ধরা পড়ে গেলাম! ইনহা এখনো অদ্ভুত একটা গোয়েন্দামার্কা লুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এবার সোজা ইনহার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম। কী যে বলবো সেটাই বুঝে পাচ্ছিনা। এবার হবি ভাই আমার হাত ধরে পেছনে সরিয়ে দিয়ে আমার জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
- " কেন! এই রুমে The Hobiর ঢুকা নিষেধ নাকি?" ইনহা বললো,
- " না না, নিষেধ করলো কে? আমি তো জানতে চাচ্ছিলাম তোমাদের এই অবস্থা কেন? মানে অ্যালোহা ভেজা, তোমারও হাল ঠিক নেই। কেমন কেমন যেন লাগলো বিষয়টা। " এবার হবি ভাই সোজা বলে উঠলেন,
- " এসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা। সুগার গাল নিয়ে রিসার্চ করছিলে না! সেটাতেই মন দাও!" হবি ভাইয়ের এই খোঁচা দেয়স কথা শুনে ইনহা বিরবির করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। আমি উনার দিকে আর তাকানোর সাহস করে উঠতে পারলামনা। সোজা বাথরুমে গিয়ে চেন্জ করতে লাগলাম।
জামা পাল্টে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি হবি ভাই তখনো ঐ অবস্থাতেই বসে বসে ফোনে গেইম খেলছে। আমি বললাম,
- " আপনি গিয়ে একটা জামা পরুন। " হবি ভাই হুট করে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন। উনার এই দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে যেন কোন ভুল করে ফেলেছি। আমাকে টেনে নিয়ে আবারো দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে দাঁড় করিয়ে দুপাশে দেয়ালে হাত রেখে আমাকে আটকে ফেললেন। কী করবো আমি! এখন তো পরিস্থিতি আরো বেশি ভয়ানক! শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে উড়নাটা খামচে ধরে নিজের এই অদ্ভুত ধুকপুকটা লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে চলেছি। ধরা পরে গেলে যে এই লোক আরো বেশি লজ্জায় ফেলবে, তা আমি জানি।
- " কী হলো হবি ভাই? শাস্তি দিলে দিয়ে দিন না, এভাবে... " আর কিছু বলতে পারলাম না। গলার স্বর যেন আটকে এলো আমার। হবি ভাই দেয়াল থেকে তার একহাত সরিয়ে আমার কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো খুব মনোযোগ সহকারে কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছেন। কেন চেয়েছিলি এই হবিকে, কেন রে অ্যালো! এই হবির হুটহাট স্পর্শই যে তোর মরণ ডেকে আনছে! কী বাঁচবি তুই! মনে মনে নিজেই বিলাপ পারতে লাগলাম।
- " আমি জামা পরি, বা না পরি- তাতে তোর কী সমস্যা! " হবি ভাই আমার নাকে একটা ফুঁ দিয়ে মুচকি হেসে কথাটা বললেন। নিজেকে একটু শক্ত করে নিয়ে বললাম,
- " পুরুষলোক বলে কী কোন পর্দা নাই নাকি! যখন তখন যার তার সামনে এভাবে ঘুরাফেরা করছেন! অদ্ভুত! " হবি ভাই মাথা নিচু করে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি কী হাসার মতো কিছু বলেছি নাকি! হুট করেই হবি ভাই আমার পরনের উড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে নিজের গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,
- " ঢেকে নিয়েছি। আবার মনে মনে কান্না করিসনা দেখতে পারলিনা বলে। অবশ্য দেখিসনি বললে ভুল হবে, গিলেই তো খেয়েছিস! "এতোবড় অপমান! নিজে ঐভাবে ঘুরাঘুরি করবে, কেউ তাকালেই দোষ! তেড়ে এসে নিজের উড়নাটা টানতে টানতে বলতে লাগলাম,
- " আপনার সমস্যা.." কথাটা শেষ করার আগেই রুমের দরজাটা হাট করে খুলে গেলো। দুজনেই ঘাড় বাঁকিয়ে সেদিকে তাকাতেই আমার আত্মা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। জরিনার মা এখানে কী করছে। আমার উড়না এখনো হবি ভাইয়ের শরীরে জড়ানো। জরিনার মা অবাক হয়ে মুখটা হা করে খুলে দাঁড়িয়ে আছে। হায় খোদা! আজ কতো জায়গায় ধরা খাবো আমি! জরিনার মা বললো,
- " একটু আগে দেখলাম হবি তোরে কোলে তুইল্লা হাঁটাতাসিলো। এহন দেখতাসি তোর জামা কাপড়ও হবিরে পরাইয়া রাখসোস! চলতাসে কী এইসব?" জরিনার মায়ের মুখে বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন। হবি ভাই আমাকে হুট করে কোলে তুলে নিয়ে বললেন,
- " এভাবে যে নিয়েছিলাম, সেটার কথা বলছেন? "জরিনার মা এবার ধপ করে মাটিতে বসে পড়লেন। আর আমার মনে হলো আজ আমি শেষ। এই লোক আমার সাথে তার ভয়ানক কাজকারবার করে, আমি মেনে নেই। তাই বলে সবার সামনেও এসব করতে হবে তাকে! হবি ভাই বললেন,
- " অ্যালোহা বলছিলো ওকে কোলে নিয়ে ঘুরতে, তাই ঘুরছিলাম। " কিহ্! আমি বলেছিলাম! বিস্ফোরিত চোখে হবি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আমার দিকে একবার চোখ টিপ দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
- " তোর শাস্তি তো দেয়া হয়নি। ছেড়ে তো দেবোনা! এবার কীকরে সামলাবি সামলা!" জরিনার মা মাটি থেকে একলাফ দিয়ে উঠে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হবি ভাইকে বললেন,
- " তোমারে কোলে নিতে কইলো, আর তুমি তুইল্লা নিলা?" হবি ভাই আমাকে নামিয়ে দিয়ে জরিনার মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শুধু একটা কথাই বললো, - " চাইলে আপনাকেও তুলে নিই?" জরিনার মাকে বিদায় করার জন্য উনার এই একটা কথাই যথেষ্ট হয়ে গেলো। জরিনা মা ' নাউজুবিল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ ' জপতে জপতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। দুবারই তো হবি ভাই বাঁচিয়ে নিলেন, এরপর আর বাঁচাবেনা এই লোক, তা আমি জানি। একটু আগেই তো ফেঁসে যাচ্ছিলাম! নিজেও জরিনার মায়ের পেছন পেছন বেরিয়ে এলাম। বের হওয়ার সময় পেছন ফিরে দেখলাম, হবি ভাই আমাকে ইশারায় ডাকছে। আবার কী করবে কে জানে! না গেলেও তো বিপদ! আবার রুমে যেতেই হবি ভাই বললেন,
- " তোরে এই সুস্থ সমাজে বসবাস করতে দেয়াটাই একটা অপরাধ। " আরে! আমি কী এমন করলাম!
- " কী করলাম আবার?" জিজ্ঞেস করতেই হবি ভাই ধমকে বললেন,
- " উড়না ছাড়াই বেরিয়ে গিয়েছিলি কেন? গাধী!" কথাটা বলতে বলতেই উনি উড়নাটা আমার গায়ে দিয়ে দিলেন। চুপচাপ বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। কিন্তু সেই কিছুক্ষণ এই উড়না হবি ভাইয়ের শরীরে থাকায় উড়না থেকও উনার সেই মাতাল করা ঘ্রাণটা আসছে। কী করবো আমি! আবারো এই লোক আমাকে তার মায়াজ্বালে আটকে ফেলছে, আর আমি সব জেনে- বুঝেও তার থেকে দূরে সরতে পারছিনা।

Secret Admirer 2Where stories live. Discover now