পর্ব ৬

6 0 0
                                    

( পোস্ট দাতার মানে আমার সময় টা ভালো যাচ্ছে না দেখে দিতে দেরি হয়ে গেলো। )

"  শুরু "


সারাটা সন্ধ্যা ছটফট করে কাটালাম। কেন ডেকেছে আমায় হবি ভাই! আজ সকালেও তো উনার সাথে কতো ঘুরলাম, তখন কিছু না বলে এখন আবার ডেকে পাঠানোর মানে কী! হাজার হাজার প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুটা নার্ভাসও লাগছে, কারণ এই লোকের তো ঠিক নেই। যখন-তখন, হুটহাট যা সব করে বসে! আমি তো তার আশেপাশে গেলেই কাঁপতে কাঁপতে খিঁচুনী রোগীর আখ্যা পেয়ে যাই, কিন্তু ঐ মানুষের তো কিছুই হয়না। কতো স্বাভাবিকভাবে ভয়ংকর সব কাজ সেরে ফেলে! রাতে খাবার সময় টেবিলে বসে তার দিকে তাকালাম, নাহ্! উনার এমন ভাব যেন কিছুই হয়নি। হুট করেই মাথায় কী হলো জানিনা, কী ভেবে যেন হবি ভাইয়ের পায়ে একটা খোঁচা দিলাম। টেবিলে বসে ধ্যান-দিল দিয়ে খাচ্ছিলো, এর মাঝেই মাথাটা নিচু করে তার পা -টা দেখে নিয়ে একটা লাথি দিতেই হবি ভাই চিৎকার করে বলে উঠলেন,
- " খেতে বসে ফুটবল খেলছিস কেন ইডিয়ট! " এই লোকটা এমন কেন! আমি তো তাকে ইশারা করে জানতে চেয়েছিলাম এখন ছাদে যাবো কিনা। ভাগ্যিস, টেবিলে শুধু ভাইয়া, অরণ্য আর আমি ছিলাম। মা থাকলে এতোক্ষণে বকে আমার কানের পোকা বের করে দিতো। মুখটা পেঁচার মতো করে কোনরকমে খাওয়া শেষ করেই উঠে গেলাম। নিজের রুমে গিয়ে দুমিনিট জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু স্থির করে নিয়ে ছাদের দিকে দৌঁড় দিলাম।

আস্তে করে ছাদের দরজাটা ধাক্কা দিতেই অন্ধকারে একজনের শরীরের ছায়া দেখা গেলো। মানুষটা ছাদের ঠিক মাঝবরাবর পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। আবারো ভেতরের ধুকপুকুনিটা বেড়ে যেতে লাগলো। সেসব পাত্তা না দিয়ে শ্বাস আটকে কোনরকমে মানুষটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। এ তো হবি ভাই নয়! এ হবি ভাই হতেই পারেনা। চোখ বন্ধ থাকলেও আমি হবি ভাইকে ঠিক চিনে নিতে পারবো তার শরীরের সেই আলাদা ঘ্রাণ থেকে। তাহলে এ কি অরণ্য? অন্ধকারের কারণে চেহারাটা দেখা যাচ্ছেনা।
- " কে আপনি? এখানে কী করছেন?" শুকনো গলায় প্রশ্নটা করতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা বলতে লাগলো,
- " আমি জানতাম তুমি আসবে। আমার ধারণা সত্যি হলো। " এতো অরণ্যই! ও আমাকে এখানে কেন ডাকলো!
- " তুমি! তুমি আমাকে ডেকে এনেছো কেন? " গলাটা একটু বাড়িয়েই কথাটা বলে ফেললাম।
- " তোমার সাথে কিছু কথা আছে, তাই। " এবার যেন রাগটা মাথায় চড়ে গেলো।
- " কথা বলার জন্য ঘর আছে। আর কি এমন কথা যেটা রাতে ছাদেই বলা লাগে?" অরণ্য হুট করেই আমার কিছুটা কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো, আর আমি তার সাথে সাথেই ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালাম।
- " যা বলার নিচে বাসায় এসে বলো। আমি তোমার সাথে ছাদে দাঁড়িয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। " বলে সামনে পা বাড়াতেই অরণ্য আমার হাত ধরে এক হ্যাঁচকা টানে তার সামনে এনে দাঁড় করালো। আমার দুহাত শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো,
- " আমার কথা শেষ হওয়ার আগে তুমি যেতে পারবেনা। " এদিকে ও এতোটাই শক্ত করে ধরে রেখেছে যে আমি ছুটতেও পারছিনা।
- " আমি তোমাকে ভালোবাসি অ্যালোহা। নামুর জন্মদিনের দিন আমি ফুপির কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব দিবো। এটাই তোমাকে জানাতে ডেকেছি। " অরণ্যের কথা শুনে আমি এতোটাই ধাক্কা খেয়েছি যে কোন শব্দ বের করতে পারছিনা মুখ থেকে। অরণ্য কোন ধরনের ছেলে তা আমি খুব ভালো করেই জানি। ও বিয়ে করবে আমায়! আর যদি ও মায়ের কাছে প্রস্তাব দেয়, তাহলে মা যে রাজী হয়ে যাবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। মানুষকে ভুলিয়ে ফাঁদে ফেলার অভ্যেস ওর আছে, আর এই কারণেই হাজার হাজার মেয়েকে পিছে ঘুরাতে পেরেছে। কী বলবো আমি! আমি না করলেও যে ও সেটা মানবেনা, তা আমি জানি। ওর জেদ চেপেছে, আর সেটা ও করেই ছাড়বে। কিন্তু আমার কী হবে? আমি তো কোনদিনই ওকে মেনে নিতে পারবোনা। আর এই সময়ে তো না-ই। হবি ভাই ছাড়া আমি যে কাউকে কল্পনাই করতে পারিনা! অরণ্যের থেকে হাত ছাড়িয়ে সোজা নিজের রুমে এসে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম। আগামী পরশুদিন আমার জীবনের খুব ভালো একটা দিন হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু এবারে কী হচ্ছে এসব! হবি ভাইকে কী নিজের মনের কথা কোনদিনও খুলে বলতে পারবো আমি! মা- কেই বা কীকরে না করবো? পড়াশোনার ছুতো দিলেও বলবে আংটিবদলের কথা। কিন্তু এই অরণ্যের নাম আমি আমার নামের আশেপাশেও আসতে দিতে চাইনা।

Secret Admirer 2Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang