পর্ব-১১

7 1 0
                                    

নাচের প্রোগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে, এদিকে The Hobiর ছায়াটাও দেখতে পাচ্ছিনা কোথাও। কেমন যেন একটা অস্থিরতা কাজ করে তাকে আশেপাশে না দেখতে পেলে। গত দুবছরে নিজেকে একদম লোহা ভেবে নিয়েছিলাম। আর এই লোক আসতেই আবার আগের মতো হয়ে গেলাম! স্টেজ থেকে নেমে খুঁজতে লাগলাম তাকে। বেশিক্ষণ খোঁজার প্রয়োজন পড়েনি। স্টেজ থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় এসেই দেখি পেছন ফিরে হবি ভাই ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। তাকে ডাকবো, নাকি ডাকবোনা সেটাই ভাবছি। ডাক দিলেই তো ঐ মুচকি হাসিটা দিয়ে একটা খোঁচামার্কা কথা বলবে। আস্তে করে তার পেছনে এসে দাঁড়ালাম। মুখে যতটা হাসি নিয়ে এসেছিলাম, তার কথাটা শুনার পর ঠিক ততোটাই ফ্যাকাশে হয়ে গেলো আমার চেহারা। হবি ভাই ফোনে অপরপাশের মানুষটাকে বলছে,- " অ্যালোহা যেনো ভুলেও এসবের কিছু না জানে। যদি আমি জানতে পারি অ্যালোহা এসবের কিচ্ছুটি টের পেয়েছে, তাহলে কী অবস্থা করবো সেটা কল্পনাও করতে পারবিনা। " মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। চলছেটা কী! আমার অগোচরে কতকিছু ঘটছে? আর কোন বিষয়ে হবি ভাই এতো কড়াভাবে হুমকি দিচ্ছে? - " কত কী লুকিয়ে রেখেছেন আমার থেকে আপনি?" পেছনে দাঁড়িয়েই প্রশ্নটা করলাম হবি ভাইকে। আমার কণ্ঠ শুনেই হবি ভাই যেন প্রচণ্ড পরিমাণে চমকে গেলেন। এই প্রথমবার উনাকে কোন বিষয়ে এতোটা নার্ভাস হতে দেখলাম। কপালের দুপাশের সিল্কি চুল বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে। গলা বেয়ে ঘাম তার উন্মুক্ত বুকে গড়াচ্ছে। - " তুই কখন এলি?" নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েই কথাটা বললেন হবি ভাই। আমি বললাম,- " যখনই আপনার গুরুত্বপূর্ণ গোপন কথাটা আমার থেকে লুকানোর জন্য অপরপাশের মানুষটাকে হুমকি দিচ্ছিলেন, তখন। " হবি ভাই এগিয়ে এসে আমার দুকাঁধে হাত রেখে বললেন,- " যা করছি, তোর ভালোর জন্যই করছি অ্যালো। একটু ধৈর্য্য ধর, সময় হলে সব জানতে পারবি। " এবার যেন আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। একঝটকায় তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,- " এখন বললে সমস্যাটা কোথায়? আর কতদিন আমাকে এই দ্বিধায় ফেলে রাখবেন আপনি? আর পারছিনা আমি। পাগল পাগল লাগছে আমার।" হবি ভাই আবারো আমাকে টেনে তার বুকে জড়িয়ে নিলেন। তার ভেজা বুক আরেকদফা ভিজলো আমার চোখের জলে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হবি ভাই বললেন,- " The Hobiর বউ হিসেবে তুই একদম পারফেক্ট। " অদ্ভুত তো! এদিকে কষ্টে দুঃখে আমি শেষ, আর এদিকে উনি এসব বলছেন! তাড়াতাড়ি তার থেকে সরে এসে বললাম,- " আপনার মাথা ঠিক আছে? " হবি ভাই বললো,- " এতোক্ষণ তো ঠিকই ছিলো। কিন্তু মাত্র যেই তুই জড়িয়ে ধরলি, তখনই মনে হলো কোথাও একটা গড়বড় শুরু হয়েছে। " ছিহ্! এই কান্নার সময় নিজের মাথাটাই ঠিক থাকেনা। এই লোকটাকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম কেন! এখন আবার এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে। এসেছিলাম তাকে ডাকতে, আর ঘটে গেলো কতো কাহিনী। আর কোন কথা না বাড়িয়ে সোজা হাঁটতে লাগলাম। পেছন থেকে হবি ভাই দৌঁড়ে এসে আমার হাত ধরে বললেন,- " আর কোনদিন কাঁদিসনা অ্যালো। তোর কান্না সহ্য হয়না। " সামান্য হাসলাম। স্টেজে উঠে জাংকুক -হানা, সুজিন- জিন আর ইউনা- তেয় নাচতে লাগলো। বাকীরা সামনে বসে দেখছি ওদের নাচ৷ সকল লাইট বনধ করে হালকা নীল রঙের আলো জ্বালানো হয়েছে। এদিকে হবি ভাই সেই কখন থেকে আমার চুলের নাক ডুবিয়ে বসে আছে। সরিয়ে দিলে বলে,- " তোর কপাল ভালো যে বিয়ে করা বউয়ের চুলের ঘ্রাণ নিয়েই The Hobi তুষ্ট আছে। বেশি নড়চড়ন দেখলে সোজা জিমিনের লাইনে চলে যাবো বলে দিলাম। " এই কথা শোনার পর এই কাজটাই উত্তম বলে মনে হলো। আর তার সুযোগ নিয়ে এই লোক তার সিল্কি চুল দিয়ে পিঠে সুরসুরি দিচ্ছে। শক্ত হয়ে জমে বসে আছি আর নিজেকে বলছি- ইউ আর স্ট্রং অ্যালো। পাত্তা দিসনা ঐ লোকের স্পর্শগুলো। কিন্তু চাইলেই কী তার এই মাতাল করা ঘ্রাণের নেশা থেকে বের হতে পারবো আমি! সেই তো মাতাল হচ্ছিই! চাইলেও তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁয়াকে উপেক্ষা করতে পারছিনা। একদম স্ট্যাচু হয়ে আছি। হঠাৎই, - " এরকম অবস্থায় আমিও পড়েছিলাম। অ্যালোর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে আমিও পাগল হয়েছিলাম। তার উষ্ণ নিশ্বাসে পুড়েছি আমিও! তারও তো এরকমটা হওয়া উচিৎ! " তার সেই ঘোরলাগানো কণ্ঠ , কান স্পর্শ করা তার ঠোঁটের স্পর্শে আর শক্ত হয়ে থাকতে পারলামনা। কেঁপে উঠে নড়ে বসলাম। তড়াক করে ঘাড় বাঁকিয়ে তার দিকে তাকালাম। হালকা নীলাভ আলোতে তার চেহারাটা আরো মোহময় লাগছে। তার মায়ার প্রকটতা আমার ভেতরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতির সৃষ্টি করছে। চোখ বা মন - কারোরই সাধ্যি নেই তার সেই মায়া কাটিয়ে উঠার। - " কীরে! এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি ধৈর্য্যশীল, তবে মানুষ তো!" হবি ভাইয়ের এই ঘুরানো প্যাঁচানো কথা বুঝার মতো ক্ষমতা আমার আছে। সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিলাম। হবি ভাই একহাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে আমার মাথাটা তার কাঁধে ঠেকিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে রইলেন।- " ঐ, সবাই নামো। এহন আমি আর অরণ্য নাচমু। " হুট করেই সব লাইট জ্বলে উঠলো, আর বন্ধ হয়ে গেলো গান। জরিনার এই ভাষণে ভদ্রমানুষের মতো সবাই নেমে এলো। এরপর এক অদ্ভুত সৌন্দর্যমণ্ডিত জিনিস দেখে দুইপক্ষের সকলেই যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো। আমিও অবাক হয়ে দেখছি জরিনার পাশে দাঁড়ানো মানুষটাকে। টাক মাথায় লাল, নীল, সবুজ রঙ দিয়ে মেহেদীর মতো ডিজাইন করা। পরনে একটা হলুদ রঙের হাফহাতা শার্ট, চোখে লাল রঙের সানগ্লাস আর লাল রঙের প্যান্ট। আর চেহারাটা ধবধবে সাদা, ঠোঁটটা টকটকে লাল। - " আমার অরণ্যরে কেমন লাগতাসে? মাইয়াগুলারে কইতাসি- এই টাকলা আমার। ওর দিকে নজর দিলে এই জরিনা ছাইড়া দিবোনা। " ওর কথা কারো কানে গিয়েছে নাকি সেটা জানিনা, কিন্তু সকলের সেই হতভম্ব ভাবটা এখনো যায়নি। এবার গান ছাড়লো," দেখেছি প্রথমবার, দুচোখে প্রেমের জোয়ারট্যাংট্যানাট্যাং ট্যাংট্যানাট্যাং..." অরণ্য আর জরিনা ঘুরে ঘুরে, দোলে দোলে নাচছে, আর সকলে খুব মনোযোগের সাথে সেই অদ্ভুত নৃত্য দেখছে। হঠাৎ গান পাল্টে গেলো। এবার শুরু হলো," ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়... " হবি ভাই আমার হাত ধরে উঠে গেলেন। বাইরে এসে ফুলের বাগানের সামনে নিরিবিলি জায়গাটায় আসতেই হবি ভাই হঠাৎই দাঁড়িয়ে গেলেন। উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখলাম- একজন মধ্যবয়স্ক লোক মাটিতে বসে হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি করে কান্না করছে। আমি বললাম,- " কী হয়েছে ঐ লোকটার? নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়েছে। চলুন গিয়ে দেখি। " বলেই সামনে পা বাড়াতে নিলে হবি ভাই বললেন,- " থাম! চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক। সামনে ইন্টারেস্টিং কাহিনী আসবে। " মুখ কুঁচকে হবি ভাইয়ের দিকে তাকালাম। একজন মধ্যবয়স্ক লোক কান্না করছে, আর উনি বলছেন ইন্টারেস্টিং কাহিনী! এই লোকটা আসলেই অদ্ভুত। উনার হাত ছাড়িয়ে লোকটার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবার থমকে দাঁড়ালাম। কারণ সখিনা আন্টি এসে লোকটাকে টেনে তুললেন। হবি ভাই বললেন,- " থামলি কেন? যা! গিয়ে সাহায্য কর!" অবাক হয়ে তাকালাম হবি ভাইয়ের দিকে। এই লোক জানলো কীকরে যে কাহিনী সখিনা আন্টির সাথে জড়িত!- " আপনি আগে থেকেই জানতে পারলেন কীকরে হবি ভাই? " হবি ভাই আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বললেন,- " তুই গাধী বাদে এই বিষয়টা যে-কেউই বুঝতে পারবে। " আমি বললাম,- " আমাকে অপমান করা শেষ হয়ে থাকলে আসল কাহিনীটা বলবেন?" হবি ভাই মুচকি হেসে বললেন, - " লোকটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখ। সখিনা আন্টির ব্যাগটা তার পাশে পড়ে আছে। আর লোকটার চেহারার দিকে লক্ষ্য করেছিস! ফর্সা ধবধবে হয়ে আছে, তার মানে তার মুখের ওপর ইচ্ছামতো মেকাপ ঘঁষা হয়েছে। আর এসব কাজ সখিনা আন্টি বাদে কে করতে পারে!" বাপরে বাপ! গোয়েন্দা নাকি এই লোক! তার বুদ্ধি দেখে মনে মনে ভাবছি, এতো বুদ্ধিমান লোক আমার মতো গাধীর সাথে সংসার করার কথা ভাবে কীকরে! - " তোর এই গাধামি দেখেই প্রেমে পড়েছিলাম। তাই এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই ডাফার!" বাহ্! এবার মনের কথা জেনে ফেলার শক্তিও পেয়ে গিয়েছে! খোদা! এই লোককে নিয়ে সংসার করবো কীকরে! একটু বকতেও পারবোনা ঠিকমতো।- " বকাবকি করিস, কিন্তু জোরে জোরে। বিরবির করে বকে কী লাভ!" উনার এই কথার জবাব দেয়ার জন্য মাথা বাঁকিয়ে তার দিকে তাকাতেই হবি ভাই ইশারা করে আমাকে সামনের দিকে তাকাতে বললেন। মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম- সখিনা আন্টি লোকটাকে বলছে,- " আইজ আমার জীবনে প্রথম কোন স্টেজে নাচমু। যদি ভুলেও কোন ভুল করসোস, তাইলে একটু আগে যে তোরে বটি দিয়া কল্লা কাটার হুমকি দিসিলাম, ঐডা কইরা দেখামু। আমারে রাগাইস না। কান্দাকাটি বন্ধ! " ওহ্! তাহলে গলার বটি ধরে এই লোককে নাচার জন্য জোর করছে সখিনা আন্টি! কিন্তু কে এই লোক? হবি ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, - " উনাকে চিনেন নাকি?" হবি ভাই বললেন,- " হুম। সুহির বড় চাচা। " হায় খোদা! নামু ভাইয়ার চাচা শশুড়ের সাথে এতোবড় অন্যায়! হবি ভাইকে বললাম,- " কিছু একটা করুননা হবি ভাই! নামু ভাইয়ার ইজ্জতের বিষয় এটা। " হবি ভাই বললেন,- " যা হয়ে গেছে, তাতে বাকী নেই আর কিছু। চিন্তা করিসনা, এই কাহিনী লোকটা ভুলেও কাউকে বলবেনা, কারণ সখিনা আন্টি উনাকে এই বিষয়েও শাসিয়ে নিয়েছে। " আমি বললাম, - " কখন? এই বিষয়ে তো কোন কথাই বলেনি!" হবি ভাই বললেন,- " না শাসালে লোকটা একাএকা এখানে বসে কান্না করতোনা। পালিয়ে গিয়ে কারো কাছে সাহায্য চাইতো। " ভাবলাম, হবি ভাই কথাতো ঠিকই বলেছে। আবার দেখলাম- সখিনা আন্টি দৌঁড়ে কোথায় যেন গেলেন। ফিরে এলেন হাতে করে একটা প্লেট নিয়ে। লোকটার হাতে খাবারের প্লেটটা দিয়ে বললেন,- " খাবারটা খাইয়া নেন। খালি পেটে ভালা কইরা নাচতে পারবেননা।" কী খাবার এনেছে কে জানে! আমি দৌঁড়ে গেলাম লোকটার কাছে। নাহলে এই লোকও যদি টয়লেটবাসী হয়ে যায়, তাহলে বিপদ। গিয়েই একটা হাসি দিয়ে বললাম,- " আন্টি, কী খাবার দিলেন উনাকে?" সখিনা আন্টি বললেন,- " আর কইসনা। এখন কী আর বাজার করা সম্ভব! শক্তি যাতে পায়, এমন খাওয়ন তো দেওয়া লাগবো। তাই রান্নাঘরে গিয়া দেখলাম দুইডা ইন্দুর দৌঁড়াইতাসে। ঐডিরে বিষ খাওয়াইয়া মাইরা কোরমা কইরা আনসি। ইন্দুরও মরলো, আর ও খাইয়া শক্তিও পাইলো । সবদিকেই লাভ হইলো। আর লগে মূলাও ভাইজ্জা আনসি।" সখিনা আন্টির এই কথা শোনার সাথে সাথেই লোকটা হাতে থাকা প্লেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। মনে মনে ভাবলাম, এবার এই লোক ফেটে যাবে। মারামারি না লেগে যায় আবার! ভাবছি - আগেভাগেই হবি ভাইকে টেনে এনে তাদের মারামারি বন্ধ করার ব্যবস্থা করে রাখি। আমার এসব ভাবনার মাঝেই হুট করে হাউমাউ শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখি, লোকটা সখিনা আন্টির পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করছে আর বলছে,- " মাফ করে দেন আপু। এইসব খাবার খাওয়ার চেয়ে ভালো আপনি বটি দিয়ে আমার কল্লা কেটে ফেলুন। ইঁদুরের কোরমা আর মূলার ফ্রাই খেয়ে হজম করার মতো শক্তিশালী এখনো হতে পারেনি আমার পেট। মাফ করে দেন আপু। আমি এমনিতেই ভালো করে নাচবো আপনার সাথে। " আমার সকল চিন্তাকে ভুল প্রমাণিত করে এই লোক যখন সখিনা আন্টির পা ধরে মাফ চেয়ে বসলো, তখন আবার মনে হলো- হবি ভাই-ই ঠিক। আসলেই আমি গাধী। যেটাই ভাবি, সবসময় তার উল্টোটাই ঘটে। দূরে হবি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম- সে আমার দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসছে। উনিও বুঝে ফেলেছেন ঐলোকের পল্টিতে আমি যে বড়সড় ঝটকা খেয়েছি। ছোটখাটো একটা ছ্যাঁকা খেয়ে হবি ভাইয়ের কাছে আসতেই হবি ভাই বললেন,- " কষ্ট নিসনা। তুই তো আর নিজে থেকে গাধী হসনি! দুঃখ করে লাভ নেই। " উনার সেই বাঁকা হাসি! গা জ্বলে গেলো। রেগেমেগে বললাম,- " আপনার মাথায় ভুরিভুরি বুদ্ধি থাকলেও সেগুলো তো আমাকে বকাঝকা ছাড়া আর কোন কাজে লাগেনা। তাই কিলো দরে বিক্রি করে দেন, অন্তত মানুষের কাজে আসবে। " আমার কথা শুনে হবি ভাই সাথে সাথেই বলে উঠলো, - " আমার বুদ্ধি তো অন্তত একটা কাজে লাগে। তোরটা তো কোন কাজেরই না! ফ্রি তে দিলেও মানুষ তোর বুদ্ধি নিতে চাইবে না। " বলেই পান্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটতে লাগলেন। আরেকদফা অপমানিত হয়ে তার পেছন পেছন আবার স্টেজের দিকে গেলাম। গিয়েই দেখলাম, সখিনা আন্টি আর নামু ভাইয়ার চাচাশ্বশুর নাচ করছে। গান বাজছে," বন্ধু তুই লোকাল বাস.." এমনিতেই এই গান আমার সহ্য হয়না, তার ওপর এতোজোরে! যখনই গানের মাঝে 'লোকাল বাস ' শব্দটা আসছে, তখনই সখিনা আন্টি ঐ লোকের কাঁধে চড়ে বসেন, আর লোকটা তাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরতে থাকে। এই নাচটা যে সখিনা আন্টি শিখিয়েছেন, তা আর বোঝার বাকী নেই। বেচারা বয়স্ক মানুষ, এই বয়সে এসে তাকে এই হাতির সাইজের মহিলাকে কাঁধে করে নাচতে হচ্ছে। নাচতে নাচতে একপর্যায়ে সখিনা আন্টি নিজে যখন ক্লান্ত হয়ে গেলেন, তখনই থামলেন। হাসতে হাসতে সবাই অস্থির হয়ে গিয়েছিলো, তাই জিন ভাইয়া আর জিমিন টানতে টানতে আমাকে আর হবি ভাইকে স্টেজে তুলে দিলো। আবারো সেই নীলচে আলো জ্বলে উঠলো,সাথে খুব শান্ত একটা ইংরেজি গান। এদিকে নাচের ' ন ' ও পারিনা আমি। স্টেজে উঠে ফিসফিস করে হবি ভাইকে বললাম,- " দেখেন হবি ভাই, সত্যিই আমি নাচতে পারিনা। চলে যাই আমি, প্লিজ ছেড়ে দিন। " হবি ভাই বললেন,- " যা না! ঐ পক্ষের অনেক সুন্দর মেয়ে আছে, ঐযে একজন তাকিয়ে আছে। ঐ মেয়ের সাথেই নাচবো। আমাদের বেশ মানাবে।তুই চলে যা। " মাথায় কেন যেন রক্ত চড়ে গেলো। পারি বা না পারি, হবি ভাইয়ের সাথে নাচবো তো আমিই। রাগের চোটে বললাম,- " সেটাই ভালো। আপনি ঐ মেয়েকে নিয়ে নাচুন, আর আমি বরং অরণ্যের সাথে গিয়ে একটু গল্প করে আসি। " কথা শেষ হতে দেরী, হবি ভাই একটানে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরতে দেরী করলেন না। ধীরে ধীরে আমাকে নিয়ে নাচছে, এর ফাঁকে ফাঁকে বলে উঠলেন,- " একদম জানে মেরে ফেলবো যদি আমাকে ছাড়া নিজের সাথে অন্য কাউকে কল্পনা করিস। " উনার কোন কথাই মাথায় ঢুকছেনা আমার। নাচের বদলে তার অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে আমার। হুটহাট ঘাড়ে তার স্পর্শ,এতো কাছ তার মাতাল করা ঘ্রাণ আর তার উষ্ণ নিশ্বাসের তাপে পুড়তে লাগলাম আমি। তার মায়াবি গভীর চোখজোড়ায় আবদ্ধ আমার চোখ।আমার মুগ্ধ চোখজোড়া যেন তার দিক থেকে সরতেই চাচ্ছেনা। - " বলেছিলি নাচতে পারিসনা, এখন তো দিব্যি নেচে চলেছিস!" নাচার মাঝেই আবার বলে উঠলেন হবি ভাই। মনে মনে ভাবছি-নাচ তো দূর, কিছুই তো করতে পারছিনা! যা করার উনিই তো করছেন! নাচতে নাচতে কখন যে গান শেষ হয়ে গেলো, টেরই পেলামনা। হবি ভাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু আমি তখনো হাবলির মতো তার দিকে ঘুরেই দাঁড়িয়ে আছি। হবি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই পিঠে একটা চিমটি খাওয়ার পর আমার হুঁশ ফিরলো। সামনে তাকিয়ে দেখি, সবাই হাততালি দিচ্ছে। হবি ভাইয়ের সাথে নিচে নেমে এলাম। সকল কাজ শেষে এবার বাড়ি ফেরার পালা। এবারো ওরা সবাই ঠেলেঠুলে আমাকে হবি ভাইয়ের সাথে ফেলে রেখে চলে গেলো। বাইকে করে মাঝপথে আসতেই হবি ভাই বাইকটা একসাইড করে আমাকে নিয়ে মার্কেটে ঢুকলেন। আমাকে একটা জায়গায় বসিয়ে উনি দুইমিনিটের জন্য কোথায় যেনো গেলেন। ফিরে এলেন হাতে একটা সপিং ব্যাগ নিয়ে। ফিরে এসে আবার বাইক স্টার্ট দিলেন। নামু ভাইয়া আর সুহি ভাবীকে ঘরে প্রবেশ করানোর আগে সখিনা আন্টি বললেন,- " খাঁড়াও। নিয়ম-কানুন বইলা কিছু আছে তো। " বলেই উনি কোত্থেকে একটা বিশাল থালা এনে নামু ভাইয়া আর সুহি ভাবীর সামনে এনে ধরলেন। থালার ওপরে একটা লাল কাপড় দিয়ে ঢাকা। কি আছে এর ভেতরে, তা জানিনা। সখিনা আন্টি বললেন,- " বাসর ঘরে যাইয়া এইডা খুইল্লা দেইখো। " বলেই নামু ভাইয়া আর সুহি ভাবীকে বাসর ঘরে দিয়ে এলেন। সারাদিনের ঝামেলার পর এতো অস্বস্তি লাগছে। হঠাৎই ইউনা এসে বললো,- " ধর। জুসটা খা, শান্তি লাগবে। " ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম। চুপ করে বসে আছি, এমন সময় বিকট এক চিৎকার শুনে উঠে দৌঁড়ে সেদিকে গেলাম। গিয়েই যা দেখলাম, তাতে আমার ভনভন করে ঘুরতে থাকা মাথাটা খুলে পড়ার অবস্থা হলো। দেখলাম....চলবে....

Secret Admirer 2Donde viven las historias. Descúbrelo ahora