পর্ব-৪

11 2 0
                                    

হবি ভাইয়ের খোঁচা দেয়া কথা শোনার পরেও নিজের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টায় কিছু একটা বলতে যাবো,তার আগেই হুট করে অনেক শোরগোলের আওয়াজ কানে এসে পৌঁছালো। কাহিনী কী! কিছুক্ষণ আগেও তো সব ঠিকঠাক ছিলো, এই কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার কী ঘটে গেলো। হবি ভাইয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সোজা ছাদের দিকে দৌঁড় দিলাম। ছাদে গিয়েই দেখি, সব মানুষ একদম গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্টেজের পাশে, ভীড়ের কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। কোনরকমে ভীড় ঠেলে স্টেজের সামনে গিয়ে পৌঁছাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। এ কি কাহিনী! নামু ভাইয়ার বিয়ে সুহির সাথে, আর এই মুহূর্তে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে অন্য একটা মেয়ে। এই মেয়েকে এর আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে হয়না। কে এই মেয়ে! - " তুমি আমাকে ছেড়ে কীভাবে এই মেয়েকে বিয়ে করছো নামজুন?" নতুন মেয়েটা নামু ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললো। ভাইয়ার চেহারা একদম ফ্যাকাশে হয়ে আছে। কিন্তু কথা হলো, এই মেয়েটা কে! আমার জানামতে নামু ভাইয়ার এ যাবৎ কোন গার্লফ্রেন্ড ছিলোনা। ওর দ্বারা ঐসব সম্ভবই না! - " আপনার সমস্যা কোথায়! এভাবে চিপকে আছেন কেন আমার সাথে! " নামু ভাইয়া কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে ঐ মেয়েটাকে বললো। - " তুমি কী করেছিলে মনে আছে? এরপর থেকেই আমি তোমার জন্য ফিদা হয়ে আছি। " নামু ভাইয়ার চেহারার দিকে এবার তাকানোর যাচ্ছেনা। ওর দিকে তাকালে যে কারো চোখ দিয়ে আপনাআপনিই জল চলে আসবে।- " এতোদিন তোমাকে পাইনি, আজ পেয়ে গেছি। তুমি শুধু আমার। " মেয়েটা আবারো বলে উঠলো। এবার সখিনা আন্টি নড়েচড়ে উঠলেন। - " ঐ মাইয়্যা, এদিকে আসো। " সখিনা আন্টির আদেশ। মেয়েটাও ভদ্রমহিলার মতো সখিনা আন্টির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। - " তুমি কেডা? কী নাম? নামুর লগে তোমার সম্পর্ক কী? খুইল্লা কও। " গম্ভীর মুখে সখিনা আন্টি মেয়েটিকে প্রশ্ন করলেন।- " আমি রাহা। এই বাসাতেই ভাড়া থাকি আমি। গতকাল যখন সুহির হবু বরের ছবি দেখলাম, তখনই আমি ঠিক করে নিয়েছি- এই স্টেজে যদি কোন বিয়ে হয়, তবে সেটা আমার আর নামজুনেরই হবে।আর নামুর সাথে আমার সম্পর্ক! নামুর সাথে আমার সম্পর্ক বলতে...মানে ঐ...আসলে.." এর মাঝেই সখিনা আন্টি চিৎকার করে বলে উঠলেন,- " ভালা ভালা কইসি দেইখা ঢং করতাসো! এখন তুইল্লা দুইডা আছাড় দিমু কইলাম!" মেয়েটা এবার কিছু একটা বলতে যাবে, এমন সময় পেছন থেকে হবি ভাই বলে উঠলো, - " আমি বলছি কাহিনী। " হবি ভাইয়ের এই এক কথাতেই পরিবেশ একদম শান্ত হয়ে গেলো।গত দুমিনিট ধরে পিনপতন নীরবতা চলছে এই ছাদে। হবি ভাই এসে সামনে দাঁড়ালেন। পান্জাবির পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন,- " আপনারা যা ভাবছেন, কাহিনী তেমন কিছুই না। সুহিকে দেখার মাস তিনেক আগে নামু এই রাহাকে দেখতে এসেছিলো, বিয়ের জন্য। ওর সাথে সেবার আমি আর জিন ছিলাম। তো নামু আর রাহাকে যখন আলাদা করে কথা বলতে পাঠানো হয়, তখনই কিছু ঘটনা ঘটে। " এটুকু বলেই হবি ভাই থেমে গেলেন। মা বললেন,- " ওও, তাহলে সেবার ওকে দেখতেই পাঠিয়েছিলাম তোদের!" নামু ভাইয়া এবার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। - " তুই কী কিছু বলবি? নাকি এমন হাবলার মতো দাঁড়িয়েই থাকবি!" হবি ভাইয়ের ধমক খেয়ে নামু ভাইয়া বলতে লাগলো, - " আমাকে আর রাহাকে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য বারান্দায় পাঠানো হয়। ভালো মানুষের মতো কথা বলছি, এর মাঝে হুট করেই এই মেয়ে আমার গলা ধরে ঝুলে পড়ে, যেমনটা এখন করলো। পরে আমি ওকে ঝাড়ি দিয়ে কোনরকমে বেঁচে বাড়ি ফিরি। মা - বাবাকে বলি যে মেয়ে পছন্দ হয়নি। এরপর থেকেই ফোন দিয়ে বিরক্ত করতো। ওর যন্ত্রণায় তো সিমও পাল্টে ফেলেছিলাম। এখন আবার কোত্থেকে এসে জুটলো! " নামু ভাইয়ার চেহারা রাগের চোটে লাল হয়ে আছে, জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে বেচারা। আর তার পাশেই মুখটা হাসি হাসি করে বুকে হাত বেঁধে শান্তভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে কাহিনী দেখছে হবি ভাই। বুঝিনা, এতো ভয়ানক মূহুর্তে তার মুখে হাসি আসে কীভাবে! সখিনা আন্টি রাহাকে এবার টেনে নিয়ে স্টেজে ওপর বসালেন। উনার কাহিনী দেখে আমরা সবাই হা হয়ে গেলাম। কী করছেন উনি! সত্যি সত্যিই রাহার সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে দিবে নাকি! তাহলে তো সর্বনাশ! নামু ভাইয়া বাসর রাতেই গলায় কলসি বেঁধে পুকুরে ঝাঁপ দিবে। সখিনা আন্টি নিজেও রাহার পাশে বসলেন, এরপর বললেন,- " তোমারে তো দেখতে গেসিলোই, তাইলে তুমি ওর গলায় ঝুলসিলা কী কারণে?" সঠিক প্রশ্ন। আমার মনেও এই একই প্রশ্ন সেই কখন থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাহা বেশ সাবলীলভাবেই বললো,- " আমি তো এমনটাই করি সবসময়! যাকেই মনে ধরে, সোজা গিয়ে তাকে দুইটা চুমু দিয়ে আসি। ঐদিন নামজুনকেও দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ও তো রেগে গেলো। বোকা ছেলে!" হায় খোদা! কী বলে এই মেয়ে! তাও সখিনা আন্টির সামনে! সখিনা আন্টি চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। প্রায় দুমিনিট চুপ থাকার পরে সখিনা আন্টি যেটা বললেন, সেটা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো, বুঝতে পারছিনা। উনি বললেন,- " আমারে তোমার মনে ধরেনাই? আমি তো অনেক সুন্দরী। আমারেও দুইডা চুমা দিয়া দেও!" রাহা তেলাপোকা দেখা চেহারা করে বললো,- " একি বললেন আন্টি! আপনি সুন্দরী! আপনাকে যে সুন্দরী বলে, সে বোধয় কানা, আর নাহয় তার ব্রেইনটাই উল্টা। " রাহার মুখে এই কথা শোনার পর সবার হাত সরাসরি কপালে গিয়ে ঠেকলো। শেষ! এই রাহার কপালে যে আজ কী আছে, তা কারোর জানা নেই। সখিনা আন্টি রাহার হাত ধরে স্টেজ থেকে নেমে এলেন, আর বললেন,- " ঐ, তোমরা অনুষ্ঠান শুরু করো, হলুদ লাগাও। আমি একটু আইতাসি। " মেয়েপক্ষের সবাই এখনো হ্যাং হয়ে আছে। জিন, জিমিন আর তেয় ভাইয়া আবার গানটান ছেড়ে নাচানাচি শুরু করলো। আমি গিয়ে একটা চেয়ারে ধপ করে বসে ভাবতে লাগলাম, সামনে ঝড় আসবে, তাই এখন পরিবেশ এতো ঠান্ডা। সখিনা আন্টি তো ছেড়ে দেয়ার মানুষ না! তার ওপর যেখানে রাহা উনার সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হবি ভাই আমার পাশের চেয়ারটায় বসে আমার চেয়ারের পেছনে হাত রেখে বললেন,- " নাচতে ইচ্ছে করলে গিয়ে নাচ, তবে পেট যেনো দেখা না যায়। " আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। এ হবি ভাই তো! উনি নিজে বলছেন নাচতে! চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি, এমন সময় হবি ভাই আমার চোখের সামনে একটা তুড়ি মেরে বললেন,- " এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তোর মন ভালো হওয়ার জন্য বলেছি। " আমি মুখ ভেঙচে বললাম,- " আমার খারাপ ভালো কোনটাই তো আপনার দেখার প্রয়োজন নেই, THE HOBI!" হবি ভাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। চোখ নামিয়ে নিলাম, কেননা উনার এই চোখের দিকে তাকালেই আমি আবার গলে যাবো। সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি। - " কেন! " হবি ভাই প্রশ্ন করলেন।- " কোন অধিকারে আপনি আমার বিষয়ে কথা বলেন শুনি! কী হন আপনি আমার!" এইরে! রাগের চোটে এ কি বলে ফেললাম আমি! তড়াক করে পাশ ফিরে হবি ভাইয়ের দিকে তাকালাম। কপালের পাশের চুলগুলো ভিজে উঠছে, গলার উঁচু জায়গাটা বারবার উঠানামা করছে তার। হাতদুটো শক্ত করে মুঠো করে রেখেছেন, পুরো চেহারাটা একদম লাল হয়ে আছে। ভয়ে চুপসে বসে রইলাম। - " তোর ওপর আমার ঠিক কতোটা অধিকার আছে, সেটা তুইও খুব ভালো করে জানিস অ্যালো! শুধু তোর ভালোলাগা, খারাপ লাগা না। তোর পুরো জীবনটাই হবির সাথে জুড়ে আছে। " আমার কোমড়টা জড়িয়ে একটানে তার কাছে টেনে এনে কানে কানে কথাটা বললেন হবি ভাই। সত্যিই কী তাই! আমার জীবনটা কী তার সাথে জড়িত! তাহলে কেন তখন ছেড়ে চলে গিয়েছিলো! কেন! - " আচ্ছা! তাহলে কেন ছেড়ে গিয়েছিলেন আমায়?" শক্ত কণ্ঠে প্রশ্নটা করলাম হবি ভাইকে। হবি ভাই বলতে লাগলেন,- " কারণ জানতে চাস! শোন.." বলার আগেই সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম, তাতে শুধু আমার না, পুরো ছাদভর্তি মানুষের মুখ হা হয়ে গেলো। সখিনা আন্টি স্টেজে উঠে দাঁড়িয়ে আছেন, তার পাশে দাঁড়ানো আছে একজন মেয়ে। মাথা টাক, আর সেই টাকে কালো রঙ বা আলকাতরা জাতীয় কালো কিছু লাগানো। রাহা! এই বেচারীর এমন হাল হলো কীকরে! মুখটা কাঁদো কাঁদো করে দাঁড়িয়ে আছে বেচারী। - " এরে কয় আসল সুন্দরী। আমারে তো সুন্দর লাগেনা, ওরে তো নিশ্চয়ই লাগবো। তাইনা?" সামনে বসা সকলের উদ্দেশ্যে কথাটা বললেন সখিনা আন্টি। কারো মুখে একটা শব্দ নেই। সবাই হতভম্ব হয়ে আছে। একটু অসুন্দর বলাতে একটা যুবতী মেয়েকে টাক করে দিলো! রাহা বললো,- " এই মহিলাটা আমার চুল কেটে দিয়েছে। প্লিজ, পুলিশে কল করুন আপনারা।" সখিনা আন্টি রাহার দিকে একবার তাকালেন, এরপর বললেন,- " হ হ, ডাকো তোমাগো পুলিশরে। তারেও চিনাইয়া দেই - এই সখিনা কী জিনিস! হুহ্!" তার এই হুমকি শোনার পর আর কারোর কিছু করার সাহস থাকে! আমি চেয়ার থেকে উঠে নিচে নামতে লাগলাম। মাথায় পানি ঢালতে হবে আমার, নয়তো মাথা ফেটে যাবে। নিচে এসে একটা রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই আমি আবারো আরেক ঝটকা খেলাম। আর কতো সহ্য করবো আমি! দরজা খোলার সাথে সাথেই দেখি, জিন ভাইয়া একটা তার পরে আসা হলুদ পান্জাবির সাথে একটা লুঙ্গি পরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার জিন্স গেলো কই! আমাকে দেখেই জিন ভাইয়া খুব কষ্টে একটা হাসি দিলো। আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে, কিন্তু হাসছি না। - " ভাইয়া, আপনার এই দশা কেন?" জিন ভাইয়া এবার ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। একি কাণ্ডরে বাবা! আমি একটা কথা জানতে চাইলাম, আর এতোবড় ছেলে এভাবে কান্না শুরু করলো! - " তুমি যা দেখেছো, তা ভুলে যাও অ্যালোহা। বাইরে কাউকে গিয়ে একথা বলো না কিন্তু। আমার এতোদিনের "হ্যান্ডসাম" উপাধি তাহলে " লুঙ্গিওয়ালা"র নিচে চাপা পড়ে যাবে। " বলে আরো জোরে কান্না করতে লাগলো। আমি এবারো হাবলির মতো দাঁড়িয়ে আছি, আর তার মাঝেই আগমন ঘটলো হবি ভাইয়ের। বুঝিনা, আমি যেখানেই যাই, এই লোক সেখানেই কীকরে পৌঁছে যায়! হবি ভাই জিন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বললেন,- " প্যান্ট কই তোর?" জিন ভাইয়া অপরাধীর মতো বললো,- " আমার জিন্সের প্যান্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। প্লিজ ভাই, আর কাউকে এই কথা জানাস না!" হবি ভাই বললেন,- " এরপর থেকে প্যান্টের বদলে গণ্ডারের চামড়া পড়ে ঘুরিস, তাহলে অন্তত বিয়ে বাড়িতে এসে এসব করা লাগবেনা। নতুন জিন্সটাও ছিঁড়ে ফেললি ডাফার!" জিন ভাইয়া বললো,- " ব্যাপার না, ঠিক করে দিচ্ছে তো!" আমি বললাম,- " কে ঠিক করে দিচ্ছে? " এর মাঝেই পাশের রুম থেকে বের হয়ে এলো সুজিন, হাতে প্যান্ট। আমাকে দেখেই সুজিন কুটুস করে জিন ভাইয়ার পেছনে লুকিয়ে পড়লো। - " লুকাচ্ছো কেন সুজিন? তুমি একজন হ্যান্ডসামের ইজ্জত রক্ষা করেছো। তোমার তো গর্ব করে এই জিন্স নিয়ে সবাইকে দেখানো উচিৎ। " ওহ্! তাহলে সুজিনই জিন ভাইয়ার প্যান্ট সেলাই করে দিয়েছে! কাহিনী এতোদূর এগিয়ে গেলো, অথচ আমি খবরই পেলামনা! সুজিন প্যান্টটা জিন ভাইয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,- " হবি ভাইয়া ঠিকই বলেছে, আপনার গণ্ডারের চামড়ার কাপড়চোপড়ই পরা উচিৎ। " সুজিনের কথা শুনে জিন ভাইয়া বললো,- " তুমি চাইলে তাই হবে!" সুজিন মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর আমি! এসেছিলাম মাথায় পানি ঢালতে, আর করছি কি! " ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়..." মাথায় পানি ঢালছি, এমন সময় প্রায় চিৎকার করে বেসুরো কণ্ঠের এই গান শুনে কান চেপে ধরলাম। সখিনা আন্টি! এতো অত্যাচারের শেষে এটা বাকী ছিলো! উনাকে থামাতে হবে, নয়তো এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিয়েটাই ভেঙে দিবে এ বাড়ির লোকজন। দৌঁড়ে ছাদে গিয়ে দেখি, সখিনা আন্টি একা না, তার সাথে আরেকজন লোকও আছে। সে বোধয় পাত্রীপক্ষের। এখন গান চলছে-" আকাশেতে লক্ষ তারাচাঁদ কিন্তু একটারে.." দুজন সম্মিলিতভাবে গাইছে, আর দুজনের কণ্ঠই মাশাআল্লাহ্! মানুষের শ্রবণশক্তি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য উনাদের গান শোনাই যথেষ্ট। আমি স্টেজে উঠে পেছন থেকে সখিনা আন্টির কানে কানে গিয়ে বললাম,- " আন্টি! আজ আর গেয়ে কাজ নেই। সামনে বিয়ে, বৌভাত সবই তো বাকী। গলা নষ্ট হয়ে গেলে পরে গাইবেন কীকরে!" সখিনা আন্টি সাথে সাথেই গান বন্ধ করে দিলো। সামনে বসে থাকা দর্শকদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সবাই আমার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বেচারাদের কানটা বেঁচে গিয়েছে যে! হুট করেই পাশে থাকা লোকটা বললো,- " আফা! আমার রিকুয়েষ্ট, আর একটা গান আমার লগে গাইয়া যান। " সখিনা আন্টি লজ্জালজ্জা মুখ করে বললেন,- " এতো কইরা কইতাসেন, ঠিকাছে!" লোকটা বললো,- " এখন আমরা সংগীতগুরু হিরো আলম ভাইয়ের 'বাবু খাইছো!' গান গামু। " এই কথা শোনার পর আমি নিজের কানের জানাযা পড়ানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। - " আপনার সমস্যা কইরে ভাই! সারাক্ষণই টক্কর দিতে থাকেন!" কোমড়ে হাত দিয়ে, জাংকুক ভাইয়াকে প্রশ্নটা করলো হানা। সখিনা আন্টির গানের অত্যাচার থেকে বাঁচতে আবারো নিচে নেমে আসতে চাইছিলাম, তখনই আবারো সিঁড়িতে ওদের দেখে সেখানেই ব্রেক কষলাম। - " ফার্স্ট অফ অল, আমি তোমার ভাই না। আর তোমাকে ধাক্কা দিতে যাবো কেন আমি! পিচ্চি বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করার বয়স আমার নেই।" জাংকুক ভাইয়ার জবাব শুনে হানার আগে আমি নিজেই অবাক হয়ে রইলাম। হানা বললো,- " দোষ করেন, আবার বড় বড় কথাও বলেন!" - " আগে নিজে ঠিকমতো হাঁটতে শিখো, পরে আমার দোষগুণ দেখতে এসো। " বলেই জাংকুক ভাইয়া চলে গেলো। আমি ওদের ঝগড়া দেখে হাসতে হাসতে নিচে নামতে লাগলাম। হানা আমাকে দেখে বললো,- " এই খাম্বারে নামু ভাইয়া কোত্থেকে আমদানি করছে রে!" আমি হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলাম। রাতে যখন বাড়ি ফিরলাম, তখন রাত প্রায় একটা। সারা বাড়িতে সবাই এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আমার রুমে গিয়ে দেখি ইউনা ঘুমিয়ে আছে। ড্রয়িংরুমের সোফায় সুগা ভাইয়া। আমি ঘুমাবো কই! আস্তে আস্তে ঘুরে ঘুরে ফাঁকা রুম খুঁজতে লাগলাম। অনেকক্ষণ খোঁজার পর শেষমেশ একটা রুম খালি পেয়ে গেলাম। সারাদিনের এতো বড় বড় ধকল শেষে ক্লান্তির চোটে লাইটটাও জ্বালালাম না। সোজা হাতড়ে হাতড়ে বিছানায় গিয়ে পড়লাম। মাঝরাতে মনে হলো, আমার কাঁথাটা ধরে কেউ টানাটানি করছে। ঘুমের ঘোরে প্রথমে পাত্তা দেইনি। একটুপর দেখি, আমার শরীরে কাঁথার চিহ্নও খুঁজে পাচ্ছিনা। এদিকে এসির টেম্পারেচার এতোটাই কম যে, ঠান্ডায় আমি জমে যাচ্ছি। শেষমেশ ঠান্ডার চোটে ঘুম ভেঙে গেলো। ভয়ও করছে। মাঝরাতে কাঁথা নিয়ে কে টানাটানি করছে! বুকে সাহস নিয়ে আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে লাইটটা জ্বালালাম। লাইট জ্বালিয়ে বিছানার দিকে মাথা ফেরাতেই আমি এক চিৎকার দিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম। দেখলাম.....চলবে.....


( শরীরটা ঠিক নেই। কী লিখেছি নিজেও জানিনা। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং  🖤 

-Alloha Sarsalmaz

Secret Admirer 2Where stories live. Discover now