দাদাজানের খাবার প্যাকেট

1 0 0
                                    

সকালবেলা দাদাজান আর চাচা নাস্তা খেয়েই রওয়ানা দিল বা’র বাড়ির দিকে। তানি-ও গেল পেছন পেছন কাউকে কিছু না বলেই। পাছে জিজ্ঞেস করলে বড়োরা বলে — যেও না? একবার বারণ করে দিলে তো আর যাওয়া যাবে না, তার চেয়ে না বলে যাওয়াই ভালো।

আজকাল বারবাড়িতে কাজের লোক নেই। সবাই করোনার ভয়ে বাড়িতেই আছে। তবে তানি জানলা দিয়ে, পেছনের বাগানের নিচু বেড়ার ওপর দিয়ে দেখতে পায়, কেউ বাড়িতে থাকে না। সেদিন দেখল, সাদেক চাচা, মিন্টু চাচা, আরও তিন চার জন্য গাঁয়ের লোক পুকুরপাড়ে উবু হয়ে বসে বিড়ি খাচ্ছে, আর গল্প করছে। দাদাজান দেখে গম্ভীর হয়ে গেল। খিড়কির পুকুরের ওপারে পাকাচুল ফতিমার কুঁড়ে, সে এসে দাদি-আম্মাকে বলে গেল, “কেবল তোমরাই তো বলছ আসতে হবে না, আর সবাই তো বলছে কাজ করো। নইলে তাদের সংসার চলবে না। আর তাছাড়া তোমরা ন’য় মাইনে দিয়ে দিলে, অন্যে তো কাজ না করলে পয়সাও দেবে না। তাইলে আমাদের কী হবে? আবার ওই সোনার মায়ের কথাই ধরো — বয়স তো কম হলো না। ছেলেও বিদেশে, মেয়ে-ও শ্বশুরবাড়িতে। আমি গিয়ে রেঁধে দিলে খেতে পায়...”

কাল বিকেলে দাদাজান সাদেক চাচা আর মিন্টু চাচাকে ডেকে বারবাড়ির উঠোনে বসিয়ে নিজে ভেতর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “কী রে, পঞ্চায়েত থেকে যে বলে দিয়েছে, জটলা করবেন না, ভীড় করবেন না... তার কোনও মূল্য নেই বুঝি? কেন রে এমন মারণব্যাধিকেও তোরা বুদ্ধির অভাবে আরও ভয়ানক করে তুলবি?”

ওরা মাথা চুলকে, “আচ্ছা কর্তা...” “ঠিক আছে কর্তা...” বলে চলে গেছিল, কিন্তু রাতে খেতে বসে দাদি-আম্মা বলেছিল, “ওরা এখন নিশ্চয়ই ওই দিকে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে — যাতে আপনি দেখতে না পান। এ গাঁয়ে কেবল আমরাই ঘরবন্দী, বুঝলেন? বাকি সব্বাই কিন্তু মনের আনন্দে বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে।”

রেগে দাদু নাক দিয়ে ঘুঁৎ শব্দ করেছিল। প্রতিবারের মতো বাবান আর তানি খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়েছিল। মা বার বার চোখ পাকিয়ে তাকানোতেও কোনও লাভ হয়নি।

ভেতরবাড়ির উঠোনের দরজায় দাঁড়িয়ে তানি দেখল বারবাড়ির দাওয়ায় রাখা প্যাকেট প্যাকেট চাল, তরকারি আর ডাল। চাচাজান একবার আঙুল দিয়ে কী যেন গুনল, তারপরে দুজনে কী আলোচনা করল। একটু পরেই বাইরের দরজা দিয়ে একটা ভ্যান রিকশ ঠেলে ঠেলে নিয়ে এল স্টেশনের মোরতাজা পানু। পানু চাচা ওদের ফাই ফরমাশ খাটে, আর মাসকাবারি বাজার নিয়ে আসে ভ্যান রিকশয়। পানু চাচার সঙ্গে ওর বড়ো ছেলে মেহের। মেহের আর পানু চাচা হাতে হাতে ধরাধরি করে প্লাস্টিকের প্যাকেটগুলো তুলে ফেলল ভ্যানে। তারপরে দুজনে টানাটানি করে ভারি ভ্যান রিকশটা বের করে নিয়ে গেল।

করোনা-কালের ছোটো ছোটো গল্পHikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin