1.8K 46 4
                                    

রাইমা ফার্স্ট ক্লাস সিট খুঁজছে। আচ্ছা, কেবিন যেন কত নাম্বার বলল? ইশ, একদম মনে নেই! এক হাতে বড় লাগেজ আর আরেক হাতে পোটলার মত বড় একটা ভেনিটি ব্যাগ নিয়ে ঘুরছে। ট্রেনটা ইতিমধ্যে ডানে বাঁয়ে ঝকঝক শব্দ করে দুলতে শুরু করেছে। রাইমা কোনোমতে ব্যালেন্স করে ফোন বের করল। নাম্বারটায় ডায়াল করতে করতে খেয়াল করল নাম্বারে রিচ করছে না। এখন? সে কোন কেবিনে ঢুকবে?

সব কেবিনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল হলো, ১০২ নাম্বার কেবিনের দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, খাকি জ্যাকেট পরা ছেলেটা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। সামনের সিট খালি। এই লোকটাই হবে, নিশ্চিত। অন্তত সাইড ফেইস তো তাইই বলছে। নাহলে এত হুড়োহুড়ির দিনে কেউ পুরো একটা কেবিন পায় নাকি?

এখন ডিসেম্বর মাস, বিয়ের সিজন। বিয়ের সিজনে বাস আর ট্রেনে সমানে বাঙালিরা আসাযাওয়া করে। কেউ বিয়ে করতে যায়, কেউ বিয়ে খেতে। এই সময় ট্রেনের টিকিটই তো পাওয়া দুষ্কর। রাইমা নিশ্চিন্ত মনে দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে।

দরজা ঠেলে রাইমাকে ঢুকতে দেখে অপরিচিত ছেলেটা মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। রাইমা হেসে দৃষ্টি বিনিময় করে। ছেলেটাও ওর দিকে তাকিয়ে হাসে। হাতের লাগেজ সিটের নিচে রেখে ব্যাগ রেখে ধুপ করে বসে পড়ল ও। হেলান দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
"আমি খুব সরি দেরী হয়ে গেল! এরকম হয় প্রায়ই, আমি শেষ মুহুর্তে ট্রেনে উঠি। তবে ট্রেন মিস হয় না আমার! শেষ মুহূর্তে হলেও টিকেটের টাকা কাজে লাগে৷ আজকে একটু ঝামেলাই হয়ে গেল। এত বড় লাগেজ! হোস্টেলের সবই তুলে নিয়ে আসতে হলো। আপনি কিন্তু একটু কষ্ট করে আমাকে সাহায্য করবেন ঢাকা পৌঁছে! তা নাহলে গুবলেট পাকিয়ে ফেলব। সবসময় ছোট লাগেজ নিয়ে দৌড়াই তো, এখন দেখা যাবে এত বড় লাগেজ নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ধুপ করে প্ল্যাটফর্মে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে গেছি!"

এতগুলো কথা এক সাথে রাইমা আবার বড় বড় নিঃশ্বাস নিল। সামনের ছেলেটার চোখ ওকে দেখে কিঞ্চিৎ বড় হয়ে গেছে। রাইমা হেসে মাথা নাড়ালো।

" সরি, সরি। এক সাথে এত গুলো কথা বলে ফেললাম! আসলে আপনি হয়ত ভাবছেন আমি এতদিন ফোনে এত চুপচাপ ছিলাম, আজকে কেন এত কথা বলছি? বিষয়টা আসলে মুখোমুখির ব্যাপার আর কি! ফোনে কারো ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন বোঝা যায় না, শুধু কথার টোন ধরা যায়! শুধু কথার টোনে আমি কি করে বুঝব আপনি কি ভাবছেন, বলেন? এজন্য আমি চ্যাটিং ও অপছন্দ করি। চ্যাটিং তো আরও বাজে! ওখানে তো কথার টোনও আন্দাজ করা যায় না! দেখা যাবে আমি বলব একটা, আপনি বলবেন আরেকটা!  এজন্য আমি দুদিন আগে ঠিক করে রেখেছি, আজকের দিনে অনেক কথা বলব। ফোনে যেমন অভিযোগ করার সুযোগ দিয়েছি, এখন আর দিব না"

দ্যা রঙ নাম্বার কেবিনWhere stories live. Discover now