753 41 2
                                    

#দ্যা_রঙ_নাম্বার_কেবিন
লেখা #AbiarMaria

#৪

রাইমা অস্থিরভাবে কেবিনের এ মাথা ও মাথা পায়চারি করছে। ট্রেন কখন কমলাপুর পৌঁছাবে আর ও নামবে? পায়চারি করতে করতে আরহামের সিটে গিয়ে বসল। মানুষটা এখানেই ছিল, না? ওর বালিশ আর কম্বল হাতে নিয়ে শুঁকলো। ইশ, ওর ঘ্রাণ লেগে আছে। বিয়ের পর এই ঘ্রাণ সবচেয়ে আপন হবে বুঝি? রাইমা বারবার সেসব শুঁকলো। ওর ব্যবহার করা পারফিউমের ঘ্রাণ মিশে আছে এতে। এত সুন্দর কেন ওর ছুঁয়ে দেয়া জিনিসগুলো? রাইমা বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ভালোবাসা অনুভব করার চেষ্টা করছে। এরপর নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসে ফেলল। আর চার দিন পরই রাতভর একে অপরের মাঝে ডুবে থাকার সময় চলে আসবে! কিন্তু রাইমার সহ্য হচ্ছে না। এই প্রথম প্রচন্ড আফসোস হচ্ছে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায়। ও কখনো ফোন নিয়ে পাত্তাই দেয়নি, পাওয়ার ব্যাংকও নেই তার। নাহলে আজকে ট্রেন থেকে নামার পর থেকে জোর করে হবু বরের সাথে ফোনে লেপ্টে থাকত। কি হত একটু খেয়াল করলে? এখন অপেক্ষায় আছে কখন বাসায় যাবে, চার্জ দিবে, আর ফোনে কথা বলবে। সময় কাটছেই না।

রাইমা যাবে এখন কমলাপুর থেকে দক্ষিণ বাসাবোতে চাচার বাসায়। ঢাকায় আসলে বিশেষ করে কোনো অনুষ্ঠান হলে সবাই ওঠে এখানেই, তবে চাকরির কারণে সবাইকে চট্টগ্রামে থাকতে হয়। রাইমাও একারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এবার সে বিবিএর তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। রাইমার বাবাও দীর্ঘ চাকরির সূত্রে চট্টগ্রামেই বাড়ি করেছেন। তবে ওদের আত্মীয়রা প্রায় সবাই ঢাকাতে থাকে। একারণে যখন চাচার বন্ধুর ছেলের সাথে হুট করে দুদিনের মাঝে বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেল, তখন সবাই তাড়াহুড়ো করে আগে আগে ঢাকা চলে এসেছে। রাইমার কিছু কাজ থাকায় দুদিন বাদে এসেছে। ওর আগে এসে সবাই ছেলের বাবা মায়ের সাথে বসে সব ঠিক করে ফেলেছে। এমন না যে কেউ রাইমার মতামতের পরোয়া করেনি, বরং রাইমা তার বাবা আর চাচার উপর নিজের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছে। ও কখনো নিজের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো একা একা নেয়নি, এরজন্য সবসময় ও বড়দের উপর নির্ভর করেছে। ওর মতে, বড়রাই ভেবে চিনতে ওর জন্য ভালোটা বেছে আনবে। কি দরকার এত গুরুগম্ভীর ব্যাপারে নিজের ঢোকার? এমনিতেই সে বোকার হদ্দ, তার উপর নিজের সিদ্ধান্তে কোনো কাজ করতে গেলে ভুল বই ঠিক কিছু হবে না। সেকারণে ও ছেলের ছবিও দেখেনি। ভেবেছিল, হয়ত তেমন পছন্দ হবে না ওর। কিংবা সামি ওকে খুব বেশি পছন্দ করবে না। পুরো জার্নি নিয়ে এক্সাইটেড থাকলেও কিভাবে সময় পার করবে, এ নিয়ে সারাদিন শুধু ভেবেছি, কূল কিনারা পায়নি। অথচ যাদুর মত সময়টা কেটে গেল। পুরো একটা ম্যাজিক্যাল জার্নি!

দ্যা রঙ নাম্বার কেবিনWhere stories live. Discover now