১৩

228 13 1
                                    

আমাদের প্রেম ভালোই চলছে। শুভ যতই ছোঁক ছোঁক করুক, দিন শেষে আমার কাছেই আসে। আমিও জেদ ধরে বসে থাকি। ফোন বন্ধ করে দেই, কথা বন্ধ করে দেই, মুখ দেখা বন্ধ করে দেই। এতে ও অস্থির হয়ে আমার পেছন পেছন ঘোরা শুরু করে। আমিও নাক উঁচিয়ে রাখি। ইদানীং এই টেকনিকেও কাজ হচ্ছে কম। কারণ তার ফোন। ফোনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। সে ফোন আমার হাতে সহজে দিতে চায় না। শেষ যেবার ওর ফোন চেক করেছিলাম, চারটা নতুন মেয়ের নাম্বার পেয়েছি। রাগ করে যখন জিজ্ঞাসা করলাম, তখন বলল, ভার্সিটির ছোট বোন। তাহলে এদের সাথে ফোনে কেন কথা বলবে? আবার একজনের সাথে আধাঘন্টার উপরে কথা বলার রেকর্ড আছে। সম্ভবত আমার সাথে রাগ হলেই এসব করে, নতুন কাউকে ধরে আনে। সব ঠিক হয়ে গেলে আবার ছেড়ে দেয়। কিন্তু এসব ছ্যাচড়ামো কতদিন করবে? ঝগড়াঝাটি করে ওর চুল টেনে কিলিয়েও ঠিক করতে পারি নি। এখন যা করে আমার আড়ালে। কি যে করি!

কিছুদিন আগে তো একেবারে যা তা ক্যালেঙ্কারি অবস্থা হয়েছিল। আমার জীবনে এমন দিনও আসবে, কে কল্পনা করতে পেরেছিল?

সেদিন জোর করে শুভকে নিয়ে ইস্টার্ন মল্লিকায় গেলাম কিছু ড্রেস কেনার জন্য। ইদানীং পাকিস্তানি থ্রি-পিস এর উপর আমার নজর পড়েছে। সামনেই এক আত্মীয়ের বিয়ে আছে, সেখানে পরব। শাড়ি একবার ফাল্গুনে পরলেও এখন শাড়ি পরার মুডে নেই আমি। নিজের বিয়েতেও লেহেঙ্গা পরার ইচ্ছা, শাড়ি না। সামলাতে সামলাতে ঘাম ছুটে যায়। সে যাক, শুভকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, ওর পছন্দের কাপড় কেনা। কোন প্রেমিকা চায় না তার প্রেমিকের পছন্দে নিজেকে সাজাতে?

এস্কেলেটর বেয়ে তিন তলায় উঠে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিভিন্ন দোকানে ঢু মারলেও কোথাও ড্রেস পছন্দ হচ্ছে না। জোর করে ধরে আনার জন্যই কিনা জানি না, শুভও কোনোটা পছন্দ করছে না। আমি ধৈর্য ধরে এ দোকান থেকে ও দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ওমা, কোত্থেকে এক লোক রীতিমতো উড়ে এসে শুভর কলার চেপে ধরল! ওকে রীতিমতো ফ্লোর থেকে কিছুটা উঁচুতে ধরে বলল,
❝তোর সাহস কিভাবে হয় আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলার?❞

শুভ জবাব দেয়ার বদলে উলটো নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোর করছে। লোকটা ওর চেয়ে কয়েক ইঞ্চি খাটো হবে, কিন্তু গায়ের জোর মনে হচ্ছে ওর তিন গুণ, যেভাবে ওকে ধরেই উঁচু করে ফেলল! ওদিকে আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। শুভ জোর করে কলার ছাড়িয়ে বলল,
❝আপনার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আমি কেন কথা বলব? কে আপনার গার্লফ্রেন্ড? এই যে, ও আমার গার্লফ্রেন্ড। আপনার গার্লফ্রেন্ড কে আমি চিনি নাকি?❞
লোকটা ফোন বের করে এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল,
❝তুই ওকে চিনিস না? চিনিস না ওকে?! আমার সাথে মিথ্যা বলবি না! আমার কাছে তোদের সব চ্যাট হিস্ট্রি আছে!❞
এবার শুভ বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল,
❝আমি মোটেও ওর সাথে কথা বলতে চাইনি। ওই জোর করে আমার সাথে কথা বলে, নক করে❞
❝বললেই হলো? তোদের চ্যাট দেখে আমি বুঝি না? দেখি নাই? দেখ, আমার সাথে বাড়াবাড়ি করবি না! আমার গার্লফ্রেন্ডকে দ্বিতীয় বার নক করবি না!❞
শুভরও সাহস কম না। সে আঙুল উঁচিয়ে তুড়ি মেরে বলল,
❝এই যে, নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখেন। নিজের গার্লফ্রেন্ডকে কন্ট্রোল করতে পারে না, আরেকজনকে ধরতে আসছে! এত লোভী মেয়ে, বয়ফ্রেন্ড থাকতে অন্য দিকে মুখ দেয় কেন?❞
শুভ কয়েকটা গালিও দিল। আমি অবাক হয়ে শুভর দিকে চেয়ে থাকলাম। তখনও ভাবছি, মেয়েটা বেশি খারাপ? নাকি শুভ? ঐ লোক এবার রেগে আমাকে বলল,
❝আপনার বয়ফ্রেন্ড নিজে আমার গার্লফ্রেন্ডকে ডিস্টার্ব করে। রাত বিরাতে কল দেয়! ওরা কত জঘন্য কথা বলে জানেন? সে আবার কোন গলায় মিথ্যা অপবাদ দেয়? আপনারও লজ্জা করা উচিত!❞

শুভ বিবাহWhere stories live. Discover now