281 15 4
                                    

পরদিন সকালে ঘুম ভেঙেও আমার মন খারাপ শেষ হয়নি। জানালার গ্রিল ধরে কয়েদিদের মত বাইরের আকাশ দেখছি। এ সময় আম্মু এসে বিরক্ত হয়ে বলল,
❝নাস্তা না করে এমন জানালা ধরে বসে আছিস কেন? নাস্তা করতে আয়, তোর আব্বু ডাকে❞

আমি বিষাদ বদনে বিষন্ন নয়নে মরুভূমির মতো শুকনো ক্যাকটাসের মতো কাঁটাযুক্ত এক রমনীকে দেখলাম যিনি আমার মা। সে শুধু আমাকে আটকে রাখে, কিচ্ছু করতে দেয় না। দুঃখের সমুদ্র বুকে চাপা দিয়ে ডাইনিং টেবিলে গেলাম। মুখ নিচু করে খাচ্ছি বলে আব্বু বললেন,
❝আমার আম্মাজানের কি মন খারাপ? সকাল সকাল এমন মুখ করে আছিস কেন?❞
আমার চাপা দেয়া দুঃখের সমুদ্র উথলে উঠল, আর তা চোখ দিয়ে উপচে পড়ল।
❝আম্মু আমাকে ছাদেও যেতে দিবে না! আম্মু আমাকে কোথাও যেতে দেয় না! শুভ ভাইয়া আমাকে আজেবাজে কথা বলেছে কিন্তু আম্মু আমাকেই উলটা এখন ছাদে যেতে দিবে না। আমার কি দোষ? আমি কি করেছি?❞
এত জোরে জোরে ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিলাম যে আব্বু আমার অর্ধেক কথাও বুঝলো না। হাতের রুটির টুকরো মুখে না পুরে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
❝ছাদে আবার কি করল? শুভটা আবার কে? আমি তো কিছুই বুঝলাম না!❞
আম্মু কটমট করে আমার দিকে বিষদৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি তবুও কেঁদে কেঁদে বললাম,
❝শুভ ভাইয়া আমাকে ছাদে দেখলেই খারাপ ব্যবহার করে। সেদিন আমাকে ভয় দেখিয়ে আমার বই নিয়ে গিয়েছিল। কালকে আমাকে দুই শিং ওয়ালী বলেছে! কিন্তু আমি কি করেছি? আমি তো কিছু করিনি!❞

আব্বু আমার কথা না বুঝে আম্মুর দিকে তাকালো। আম্মু বিরক্ত হয়ে বলল,
❝মেয়ে বড় হচ্ছে। ছাদে গেলে ছেলেরা উল্টাপাল্টা বলে। এটা তো বলবেই, না? আমি কয়টা ছেলেকে আটকাবো? এজন্য তোমার মেয়েকে বললাম ছাদে যাস না। তোমার উলটা কাল থেকে কান্নাকাটির বাজার লাগিয়ে বসে আছে!❞
এরপর আমাকে বলল,
❝এই! তুই কি কান্না ছাড়া কিচ্ছু পারিস না? প্লেটে যা আছে সব খেয়ে শেষ কর। নাহলে পিঠের উপর দুইটা দিয়ে খাওয়াবো। খেয়াল আছে এক ঘন্টা পর যে কোচিং? খাবি কখন আর যাবি কখন?❞

আমার খেয়াল আছে সবই, কিন্তু পিঠের উপর দুইটা  দেয়ার কথা শুনে কান্নায় আরও চোখের পানি পড়তে শুরু করল। আমি মায়ের বাধ্য সন্তান। আমাকে সেভাবে পিঠের উপর দুটো দিয়ে কিছু করাতে হয়নি। ঝি কে মেরে যেমন বউকে শেখানো হয়, তেমনি আমার দুই ভাইকে মেরে আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন  আম্মু। ওদের শরীর বোধহয় ইস্পাতের তৈরি, মার খেয়েও কিছু হতো না। আমার শরীর তো ইস্পাত না, তাই আমি আগে আগে সাবধান হয়ে গিয়েছি। তবে আম্মুকে বিশ্বাস নেই। যেভাবে আমার হাত চুল ধরে টানাটানি করে, আমি ব্যথায় মরে যাই।  ধরে পিটালে আমার হাড়ের জোড়া খুলে আসবে।

শুভ বিবাহDove le storie prendono vita. Scoprilo ora