৩১

264 17 5
                                    


পরদিন শায়লার হলুদে বসে আছি। আত্মীয় স্বজনে বাসা গমগম করছে। কিছুক্ষণ আগে পাত্রপক্ষ এসেছে বলে হৈচৈটা একটু বেশি। ওদের বাসার বসার ঘর ফাঁকা করে সেখানে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি এক কোণায় চেয়ারে বসে বসে সবাইকে দেখছি। শায়লার দুইহাতে মেহেদী দেয়া হচ্ছে। সে হাসিমুখে সবাইকে দেখছে আর কথা বলছে। আমি উপভোগ করছি ওর এই নির্মল আনন্দ। হয়ত পরে সম্পর্ক আর জীবনের অনেক রকম সমীকরণ আসবে, কিন্তু এই মুহূর্তে মেয়েটা নির্মল আনন্দ উপভোগ করছে। আশেপাশের সব ঝামেলা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সামলাচ্ছে, ওকে কিছুই ভাবতে হচ্ছে না। এমন সময়টা আর কখনো আসবে না জীবনে।

আমাকে ধ্যানভঙ্গ করে শুভ ভাইয়া পাশে এসে বসলো। আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,
❝লুকিং প্রিটি এজ ইউজুয়াল❞
আমি তার দিকে ফিরলাম।
❝আপনি তো আমাকে দেখেননি। কি করে বুঝলেন?❞
শুভ ভাইয়া সামনের দিকে ফিরেই বলল,
❝আসার পর থেকেই তো দেখছি। নতুন করে এখনই দেখা লাগবে?❞
শুভ ভাইয়া আমার দিকে ফিরলেন। তার মুখে মিষ্টি হাসি। কিন্তু আমার মন গলানোর জন্য সেটা যথেষ্ট নয়। আমি সামনে ফিরলাম। শায়লাকে দেখছি মন দিয়ে। আর শুভ ভাইয়া আমাকে দেখছে মন দিয়ে। গতকাল কণা আপুকে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পাইনি। বেশ কয়েকবার কল করে রেখে দিয়েছে। কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন, উনাকে বিরক্ত করছি। কেন এমন মনে হচ্ছে জানি না। আগে কখনো এমন মনে হয়নি। তাই আপুকে আর নক করিনি। ভাবছি, নিজে নিজের সমস্যা সমাধান করবো। তাই শুভ ভাইয়ার দিকে ফিরলাম।
❝আপনার কি কাজ নেই?❞
সে বেহায়ার মতো জবাব দিল,
❝আছে তো। সেই কাজটাই করছি❞
❝আপনি এমন করলে কিন্তু আমি উঠে চলে যাবো❞
❝তুমি যেখানে যাবা, আমি সেখানে তোমাকে অনুসরণ করবো❞
আমি উঠে দাঁড়াতেই শায়লা আমাকে দেখলো। আমাকে দেখে সে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলো ওর সাথে স্টেজে আসার জন্য। আর কি পালানোর উপায় আছে? বাধ্য হয়ে সেখানে গেলাম। শায়লাকে হলুদ ছুঁইয়ে টুকটাক কথা বলছি। এখনও ওদের পারিবারিক ফটোসেশন শুরু হয়নি। আমার দিকে ঘেঁষে এসে চাপা স্বরে শায়লা বলল,
❝তোমাকে যে আমার ভাইয়া পছন্দ করে, সেটা জানো?❞
আমি মুখে হাসি ধরে রেখে বললাম,
❝এই কথা জানে না, এমন মানুষ বোধহয় এই বাসাতেই এখন একটাও নেই❞
❝এমনটা কেন মনে হলো?!❞
❝তোমার কিছু কাজিন এসে যেচে পড়ে পরিচিত হলো। তারা খুব হেসে হেসে কথা বলছিল। আমার সাথে কথা বলেই তোমার ভাইয়ের কাছে গেল। তার সাথে কথা বলার সময়ও আড়চোখে আমাকে লক্ষ্য করছিল❞
❝তাহলে তোমার মতামত কি?❞
❝তোমার ভাইয়ার কাজ তোমার ভাইয়া করেছে, আমার কাজ আমি করবো। তোমার ভাইয়ার আমাকে ভালো লাগলেও আমার তাকে ভালো লাগে না। আমি সেজন্য দুঃখিতও না। এটা আমার প অনুভূতি❞
❝বুঝলাম। আমার ভাইয়া কিন্তু তোমাকে নিয়ে সত্যিই সিরিয়াস। ও নাকি অনেক আগে থেকে তোমাকে নিয়ে অন্য রকম চিন্তা ভাবনা করতো❞
আমি তাচ্ছিল্য করলাম একটু।
❝তোমার ভাইয়া যে কোন মেয়েকে নিয়ে অন্য রকম চিন্তা ভাবনা করেনি, সেটাই তো গবেষণার বিষয়! তবে কেন এতজন থাকতে আমাকেই মনে ধরলো, সেটা আমি বুঝতে পারছি না❞
❝দেখো, বিয়ের আগে অনেক ছেলেরই এমন থাকে। বিয়ের পর আর সেসব স্থায়ী হয় না, এক জনের সাথেই তারা থিতু হয়। ভাইয়াকে কখনো একজনকে নিয়ে এতটা ভাবতে দেখিনি❞
❝বিয়ের আগে অনেক ছেলেরই থাকে? তাহলে যদি বিয়ের আগে আমার এমন অভ্যাস থাকতো, আমাকে মেনে নিতে?❞
❝বিয়ের আগে যার যাইই থাকুক, বিয়ের পর ঠিক হওয়াটা জরুরী আমি মনে করি❞
❝কিন্তু কি গ্যারান্টি আছে যে সে বিয়ের পরও করবে না? ঢেঁকি কিন্তু স্বর্গে গেলেও ধান ভাণে!❞

শুভ বিবাহWhere stories live. Discover now