২৩

183 15 4
                                    


আমি অস্ট্রেলিয়া এসেছি মাস ছয়েক হলো। নিজেকে একেবারে ব্যস্ততায় ডুবিয়ে নিয়েছি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকি। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পাশাপাশি একটা পার্ট টাইম জবেও ঢুকেছি। না, টাকার জন্য না। সময় কাটানোই মূল উদ্দেশ্য। এখন ভালো লাগে। আগের মত শুভকে বার বার দেখি না। দিন শেষে ক্লান্ত দেহে শান্তির ঘুম আসে। ঢাকার পরিবেশের মত এই দেশের পরিবেশ শব্দ দূষণে ভরপুর না। তাছাড়া সবকিছুই আলাদা। অনুভব হয়, আমি পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে চলে এসেছি। আগেও অস্ট্রেলিয়া এসেছিলাম চাচ্চুর কাছে। তখন অনুভূতি গুলো আলাদা ছিল। তখন আমি কোথাও থেকে পালিয়ে আসিনি। এবার পালিয়ে এসেছি। তাই একটা মুক্তির স্বাদ পাচ্ছি।

এখন আর মাইগ্রেন জ্বালাতন করে না। আগের মত বারবার চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে হয় না। শুভকেও দেখতে ইচ্ছে হয় না। কারণে অকারণে গাড়ি নিয়ে ওর এলাকায় ঘুরি না। সুযোগ পেলেই নিজেকে আঘাত করি না। মাঝে মাঝে হাতের ব্লেডের দাগ গুলো দেখলে কষ্ট হয়। তবে এর নেপথ্যে দায়ী বিষয়ের জন্য নয়। কষ্ট হয় নিজের বোকামী দেখে।

তুতুনকে সেদিন বকাঝকা করতে চেয়েও পারিনি। উলটো ওর সাথে খাতির হয়ে গেছে। আজকাল ওর সাথে আমার খুব কথা হয়। ভীষণ আদুরে মেয়েটা, দেখলেই গাল দুটো টিপে দিতে হয়। আশ্চর্যের কথা হলো, আমার মায়ের চাইতেও বেশি তুতুনকে কল দিই। মায়ের চাইতেও তুতুন আমার খবর বেশি জানে। ওর কাছ থেকে মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শুভর কথা জিজ্ঞাসা করে ফেলি। তুতুন রাগ করে। বলে, তোমার মত মেয়েকে যে ছেলে যত্ন করেনি, কষ্ট দিয়েছে, তার কপালে স্যান্ডেল। তুমি কেন জানতে চাও তার খবর?

আমি এক গাল হেসে লজ্জাহীনের মত আবার প্রশ্ন করতাম। তুতুন গোমড়া মুখে সেসব বর্ণনা করত। শুভ ভালো আছে। আমার প্রস্থান তার উপর খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করেনি। নীনা আর স্নিগ্ধার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। নীনা খুব বকাবকি করেছে আমাকে। ওদের না বলে, না বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারপর ওর আর শুভর সংঘর্ষের কথা জানালো। আমি রীতিমতো আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। নীনা আমার জন্য শুভকে মেরে বসেছে, এটা আমি কখনো ভাবতে পারিনি! আমাকে মেয়েটা মন থেকে বান্ধবী মানে। অনেক কাছের মানুষরাও আমার এই রঙ চড়ানো রঙিন দুনিয়ার হওয়ায় সবার মাঝে মেকি একটা ভাব। তাই আমিও ওদের তেমন আপন ভাবতে পারিনি। তা নাহলে শুভর সাথে এত বড় একটা ঘটনা ঘটানোর আগে ওদের সাথে কথা বলে নিতাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিতাম। এমনকি দেশ ছাড়ার আগে ওদের জানাতাম, অন্তত ওদের জানাতাম!

শুভ বিবাহTahanan ng mga kuwento. Tumuklas ngayon