আসফিমার এতো কান্না আসছে সেটা সে নিজেই বলে বোঝাতে পারবে না । বারবার নিজের পরিবারের উপরে রাগ হচ্ছে । আচ্ছা ভাল চাকরি করে বলেই কি নিজের সত্ত্বা বিক্রি করে দিয়ে তার সামনে দাড়াতে হবে ! নিজেকে ভেঙ্গে চুড়ে সেই মানুষটার মনের মত হতে হবে ? এদেশের বাবা মায়েরা কি কোন দিন এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না?
আসফিমা মাথা নিচু করে বসে রয়েছে । মাথা তুললেই সামনের মানুষটা ওর চোখের ভাষা পড়ে ফেলতে পারে । তখন হয়তো ওর পক্ষে চোখের পানি আটকানো কষ্টকর হয়ে যাবে ।
সামনে বসে থাকা মানুষটা বলল, আপনি এমন অস্বস্তি নিয়ে বসে আছেন কেন ?
আসফিমা কিছু বলতে গেল কিন্তু কথা বের হল না । এতো অস্বাভাবিক কেন লাগছে ! কেন ?
কোন মতে বলতে গেল, আসলে .....
-আসলে?
এবার আসফিমা চোখ তুলে তাকালো । শেষ কবে নিজের হিজাব ছাড়া সে বাইরে বের হয়েছে সেটা তার মনেও নেই । কিন্তু আজকে বের হতে হয়েছে তাও তার পরিবারের কথায় । সামনের ছেলেটার সাথে তার বিয়ের কথা বার্তা চলছে । তার সাথেই আজকে দেখা করতে এসেছে । মেয়ের বাবা মায়ের কাছে পাত্র হিসাবে সামনে বসা রাশেদুল হাসান নামের ছেলেটা একেবারে পার্ফেক্ট একজন মানুষ। দেখতে সুদর্শন, ভাল সম্রান্ত বংশের ছেলে, এলাকাতে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি আছে বেশ । সব থেকে বড় কথা ছেলেটা সরকারি চাকরি করে । গত বছর বিসিএস ক্যাডার হয়েছে । ফরেন ক্যাডার । প্রথম পোস্টিংই হয়েছে ইউরোপের একটা দেশে । আসফিমা দেশটার নাম মনে করতে পারলো না । এবার দেশে এসেছে বিয়ে করতে । বউ নিয়ে চলে যাবে । এর থেকে ভাল পাত্র এই দেশে কোন ভাবেই পাওয়া সম্ভব না ।
আসফিমার এক মামা এই খোজ নিয়ে এসেছে । বিয়ের কথা বার্তা চলছে কিন্তু পাত্র আগে মেয়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছে । আগে দুজনের কথা বলে ভাল লাগলেই কথা বার্তা সামনে এগোবে । এবং পাত্রের ইচ্ছে দেখা করার সময় পরিবারের কোন বড়রা থাকবে না। ক্যাজুয়াল ভাবে কথা বার্তা হবে । তারপর পরেরটা পরে ।
আসফিমা শুনেছে ছেলের নাকি কাউকেই পছ্দ হচ্ছে না । এমনটাই স্বাভাবিক । এমন যা যোগ্যতা তার কি আর যেন তেন কাউকে পছন্দ হয় । তাই আফসিমার বাবা মায়ের জোর চেষ্টা যে তাদের মেয়েকে যেন ছেলেটার পছন্দ হয়ই । সব খোজ খবর নিয়ে নেওয়া হয়েছে । বিশেষ করে ছেলে কি পছন্দ করে না করে । কি ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে হবে এই সব । আসফিমাকে সেই হিসাবেই তালিম দেওয়া হয়েছে । বিশেষ করে ছেলে নাকি গল্পের বই পড়তে পছন্দ করে । ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিল সে । আসফিমাকে বেশ কিছু বিখ্যাত বইয়ের সারমর্ম পড়তে হয়েছে । মুখস্ত করে নিতে হয়েছে যাতে করে এই ব্যাপারে সে কথা বলতে পারে । ছেলেকে বোঝাতে পারে যে সেও এসব পড়ে । ছেলে নাকি ইংরেজি গানেরও ভক্ত । তাই এই কদিনে আসফিামকে সেই ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে । যে কোন ভাবেই রাশেদুল হাসান নামের এই পাত্রকে ইম্রেস করতেই হবে । সব থেকে ভয়ংকর যে কাজটা আসফিমাকে করতে হয়েছে সেটা হচ্ছে আজকে ওকে হিজাব পরে আসতে দেওয়া হয় নি । স্কুল থেকেই আসফিমা সব সময় হিজাব পরেই বাইরে বের হয় । তার ছোট মামা খোজ এনেছে যে ছেলে খুবই আধুনিক মনা। হিজাব টিজাব তার পছন্দ না । আসফিমা কিছুতেই তার পরিবারকে বোঝাতে পারে নি যে আধুনিক হওয়ার সাথে হিসাব পরা না পরার কোন সম্পর্ক নেই । যে কুপমান্ডুক সে বিকিনিতেও কুপমান্ডুক আর যে আধুনিক সে হিজাবেও আধুনিক । কিন্তু তারা বুঝতে চায় নি । তাদের এক কথা । এই ছেলে কোন ভাবেই হাত ছাড়া করা যাবে না ।
ESTÁS LEYENDO
অপুর গল্প (ভলিউম ০৪)
Historia Cortaজীবনে অনেক ছোট গল্প লিখেছি । সেগুলো হিসাব মত আটশ ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই । গল্প গুল্প আগে ব্লগে প্রকাশিত হয় তারপর সেগুলো এখানে পোস্ট করা হয় ।