শুরুটা হয়তো এখানেই...

369 12 0
                                    

খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে নাতাশা প্রশ্নটা করলো । মনে মনে এখনও একটু দ্বিধান্বিত সে । বারবার মনে হচ্ছে যে আদিবকে এভাবে লাঞ্চে নিয়ে আসাটা মোটেই ঠিক হয় নি । এতে ছেলেটা আরও বেশি প্রশ্রয় পাবে । অবশ্য নাতাশা জানে যে আজকে লাঞ্চের দাওয়াত না দিলেও আদিব কোন ভাবেই তার পিছু ছাড়তো না । ছাড়বে না । নাতাশা নিজেও বুঝতে পেরেছে ভাল ভাবে । এই ছেলে তাকে ছেড়ে যাবে না । আজকে সে কারণটা জানতে এসেছে । আদিব কেন এভাবে ওকে পছন্দ করে । কোন কারণ আছে কি?

নাতাশা আবারও বলল, আপনি কেন আমাকে পছন্দ করেন?

আদিবকে আজকে খুব বেশি খুশি দেখাচ্ছে । এতোদিন পরে মনে হচ্ছে নাতাশা মেয়েটা একটু নরম হয়েছে । অবশ্য নরম না হলেও আদিব কোন ভাবেই হতাশ হত না । নাতাশার পিছুও ছাড়তো না। এতো সহজে তো ছাড়তোই না । মেয়েটাকে তার এতো ভাল লেগেছে যে আদিব খুব ভাল করেই জানে যে কোন ভাবেই এই মেয়েকে ছেড়ে অন্য কোন মেয়েকে তার আর ভাল লাগবে না ।

আদিব গ্লাসের পানিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল, আপনি দেখতে সুন্দর । ভাল চাকরি করেন । অনেক টাকা মালিক আপনার বাবা । আর কি লাগে বলুন !

আদিব কথাটা এমন ভাবে বলল যে নাতাশা হেসে ফেলল । তারপর বলল, আমাকে কেউ পছন্দ করে না । আমি খুব ভাল করে জানি ।

এই কথাটা অনেকটা সত্য । অফিসে নাতাশাকে খুব একটা মানুষ পছন্দ করে না । বস হিসাবে নাতাশা খুব কড়া । সবাইকে এতো ঝাড়ি দেয় । দৌড়ের উপরে রাখে। আদিব নিজেও কত যে বকা শুনেছে । নাতাশার কারণে বেশ কয়েকজন চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলেও গেছে । নাতাশা আবার বলল, আমার কিছু সমস্যা আছে আমি জানি । আমি নিজের রাগকে খুব কমই নিয়ন্ত্রন করি । এই কারণে মানুষজন আমাকে এড়িয়ে চলে । আমার খুব একটা বন্ধু বান্ধবও নেই । তারপরেও আপনি আমাকে পছন্দ করেন । কেন? কারণটা আমি জানতে আগ্রহী !

আদিব একটা বড় মাংসের টুকরো মুখে দিতে দিতে বলল, শুনবেনই ?

-হ্যা ।

আদিব কী যেন ভাবলো । তারপর মুখের খাবার টুকু পেটে চালান করে দিয়ে আরও একটু পানি খেল । তারপর বলল, আমাকে তো বাইক চালাতে দেখেছেন ? আমার একটা সাইকেলও আছে । মাঝে মাঝে ছুটির দিনে আমি সাইকেল চালাই । আপনার এখানে জয়েন করার মাস খানেক পরের কথা । একদিন সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি । কোন নির্দিষ্ট জায়গা নয় । এমনি ঘুরে বেড়াচ্ছি । হাতিরঝিলে যাওয়ার জন্য সিগনাল জ্যামে অপেক্ষা করছি । এমন সময় দেখলাম এক বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালাকে । সত্যি বলতে কি এতো বৃদ্ধ যে কী বলবো! লোকটার জন্য এতো মায়া জমলো । রিক্সা টানতে পারছে কি পারছে না । কেউ তার রিক্সায় উঠে নি সম্ভবত । তখনই দেখলাম একজন তার রিক্সায় উঠলো । আমি একটু দুরে দাড়িয়ে ছিলাম । আর মুখে মাস্ক থাকার কারণে আপনি সম্ভবত আমাকে দেখেন নি । আমার সত্যিই কৌতুহল হল । আপনি সব সময় গাড়িতে চলাচল করেন । এখানে হেটে এসে রিক্সায় উঠবেন, বিশ্বাস হল না । একটু তাকাতেই আপনার কালো রংয়ের গাড়িটা আমি দেখতে পেলাম । আপনি গাড়ি থেকে নেমে রিক্সাতে উঠেছেন ।

অপুর গল্প (ভলিউম ০৪)Dove le storie prendono vita. Scoprilo ora