জমিদার বউ

848 16 0
                                    

মিশু সাইকেলটা তিন রাস্তার মোড়ে এনে থামালো । যদিও এটা ঠিক তিন রাস্তার মোড় না । ও সাইকেল চালাচ্ছে ক্ষেতের রাস্তা দিয়ে । এই রাস্তা গুলো চলে গেছে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে । স্পষ্টই এগুলো কেবল ফসল আনা নেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে । আশে পাশে কোন বাড়িঘর ও দেখতে পাচ্ছে না । এই সকাল বেলা যতদুর চোখ যায় কেবল ফসলের ক্ষেত আর ক্ষেত । দেখতে এতো চমৎকার লাগছে । এই জন্য সকাল বেলা যখন সাইকেল টা নিয়ে বের হয়েছিলো তখন অন্য কোন দিকে খেয়াল দেয় নি । এমন কী পথ টা মনে রাখার চেষ্টাও করে নি । কেবল সামনের পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে গেছে । এতো ভাল লাগছিলো যে কেবল সাইকেল চালিয়েই গেছে । বেশ কিছু সময় সাইকেল চালানোর পরে ও যখন ক্লান্ত হয়ে গেল তখন মনে হল যে এখন ফেরা দরকার । বাসায় একদম কাউকে বলে আসে নি । সাথে করে মোবাইলটা পর্যন্ত আনে নি । ঘুম থেকে উঠে কেবল চারিদিকে চোখ বুলানোর জন্য ঘরের বাইরে বের হয়েছিলো । তখনই চোখ পড়ে সাইকেলটার উপর । গ্যারেজে গাড়ি বাইকের সাথে এই সাইকেলটাও দাড় করানো দেখে আর লোভ সামলাতে পারে নি । মিশুর বাবা ঢাকায় কোন ভাবেই ওকে সাইকেল চালাতে দেয় না দুর্ঘটনার পরে । এখন গ্রামে সাইকেলটা চালানো যায় । অন্তত কেউ মানা করার আগে তো যায় ই ।

শীতের সকালে তখনও বাড়ির মানুষজন জেগে উঠে নি । সাইকেল নিয়ে যখন বের হতে যাবে তখন কাজের মহিলার মত একজন ওকে দেখছিলো । তবে মুখ দিয়ে কিছু বলে নি । সম্ভবত কিছু বলার সাহস করে নি । মিশু মহিলার দিকে একটু তাকিয়ে তারপর গেট দিয়ে বের হয়ে গেল । গায়ে একটা শোয়েটার পরেই বের হয়েছিলো । গতরাতে জিন্স পরেই ঘুমিয়েছিল । বেশ রাত করেই এই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিলো । এটা মিশুর শশুর বাড়ি । এভাবে সে শশুর বাড়ি আসবে সে কোন দিন ভাবেও নি । যদিও তার এখানে সম্ভবত এটাই শেষ আসা । এখানে সে এসেছে সাদিক অর্থাৎ তার স্বামীর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করতে । যদিও কোন সম্পর্ক যদি আদৌও ওদের ভেতরে তৈরি হয়ে থাকে তবে ।

মিশু তিনটা রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । কোন দিকে যাবে ঠিক বুঝতে পারছে না । এখনও বেশ সকাল । আর শীতের সকাল বলেই হয়তো এখনও মানুষজন নেই আসে পাশে । গ্রামের লোকজন সম্ভবত আরও একটু বেলা করে মাঠে আসবে । মাঠে আসলে তখন কারো কাছে পথ জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাবে ।

অপুর গল্প (ভলিউম ০৪)Donde viven las historias. Descúbrelo ahora