চাপ্টার: চৌদ্দ

114 9 0
                                    


আরাকান রাজ্যের রাজা আর্থার তার সিংহাসনে বসে আছেন। তাঁর সামনে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি দেখতে কালো, মাথায় ছোট ছোট চুল, বড় গোফ, বেটে, বয়স পয়ত্রিশ এর মতো হবে। লোকটার হাতে একটা পাখি। পাখিটি নিঃশব্দে লোকটির হাতের উপর বসে আছে। রাজা আর্থার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার নাম?"

"রুট, রুট রাইট," লোকটি নরম গলায় বলল।

রাজা আর্থার মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, "তো আমি তোমাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?"

রুট হাসি মুখে বলল, "হুজুর আমার হাতে যে পাখিটি দেখছেন, এর নাম নেকবদ। এই পাখিটি আমি বিক্রি করতে চাই।"

রাজা আর্থার বিস্ময় নিয়ে বললেন, "একটা সাধারণ পাখি তুমি আমার কাছে বিক্রি করতে চাও?"

রুট চোখ মুখ বড় করে বলল, "হুজুর এটা মোটেও সাধারণ পাখি না।"

"তাহলে?"

"এটা একটা দুর্লভ পাখি। এই পাখি আর দ্বিতীয়টি নেই।"

"আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু এই পাখি আমার কী কাজে আসতে পারে?"

"এই পাখিকে দিয়ে চিঠিপত্র অথবা এই পাখি বহন করতে পারবে এই রকম যে কোন জিনিস যে কোন জায়গায় পাঠাতে পারবেন। যার কাছে পাঠাবেন তার ছবি পাখিকে দেখিয়ে, পাখির পায়ে জিনিসটা বেধে দিলেই পাখি ঐই লোকটির কাছে চলে যাবে, লোকটি যেখানেই থাকুক না কেনো।"

"বাহ! চমৎকার। তোমার এই পাখিটাতো অনেক কাজের।"

"জ্বী হুজুর।"

রাজা আর্থার বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি তোমার এই অসাধারন পাখিটিকে কেনো বিক্রি করতে চাও?"

রুট হতাশ হয়ে বলল, "অর্থ সংকটের জন্য। আমার পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে বসেছি। খাবারের অভাবে আমার ছেলেমেয়ে গুলো খুবই কষ্টে আছে।"

"ও! এর জন্য বিক্রি করতে চাও?"

"জ্বী হুজুর। এই পাখিটিকে আমি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। কিন্তু আমি আমার চোখের সামনে আমার ছেলে মেয়ের মৃত্যু দেখতে পারবো না। আমি আমার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য পাখিটাকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"

"তোমরা কষ্টটা আমি বুঝতে পারছি। তোমাকে সাহায্য করার পুরো চেষ্টা করবো।"

রুট কৃতজ্ঞতায় বলল, "ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আপনাকে হুজুর।"

"বলো, তোমার এই পাখিটির দাম কত?"

"দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা।"

"এতো দাম?"

"জ্বী হুজুর। আমি জানি আপনে ছাড়া এই রাজ্যে এই পাখি অন্য কেউ কিনতে পারবে না।"

"দেখো রুট, আমার এই পাখির প্রয়োজন নেই," আর্থার নরম গলায় বললেন।

রুট হতাশায় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, "ও!"

"তুমি চাইলে তোমার পরিবারের জন্য আমি সবরকম সহায়তা করতে পারি।"

"আপনাকে ধন্যবাদ হুজুর। আমি চেয়েছিলাম এই পাখিটি বিক্রি করে একটা ভালো ব্যবসা শুরু করবো।"

"ও! আমার মেয়ে রাজকুমারী জেসমিনকে জিজ্ঞেস করে দেখি। মন্ত্রী জেসমিনকে দরবারে আসতে বল।"

জেসমিন অপলক দৃষ্টিতে পাখিটির দিকে তাকিয়ে আছে। রাজা আর্থার জেসমিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, "জেসমিন! পাখিটি তোমার পছন্দ হয়েছে?"

জেসমিন হাসি মুখে বলল, "হ্যাঁ বাবা, আমার খুব পছন্দ হয়েছে।"

"মন্ত্রী, রুটকে দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দেও।"

রুট কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "হুজুর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।"

"এটা আমার কর্তব্য রুট।"

রাজকুমারী জেসমিন পাখিটির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। এই পাখিটির মাধ্যমে জেসমিন রাজকুমার এলবার্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে এটা ভেবেই রাজকুমারীর শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে। জেসমিনের মন খুশিতে ভরে উঠেছে। তাহলে এতোদিনের বিষন্নতা মন থেকে দূর হয়েছে। রুট এগিয়ে এসে পাখিটাকে রাজকুমারীর দিকে যেতে বলল। পাখিটা যেতে চাচ্ছিল না। রুট পাখিটাকে বলল, "আজ থেকে রাজকুমারী তোর মালিক। তুই রাজকুমারীর কাছে থাকবি, তার আদেশ পালন করবি।" রুটের চোখ থেকে পানি ঝরছে। রুট তার বাম হাতে চোখ দুটো মুছল। রুটের কথার জবাবে পাখিটা তার মাথা কাত করল। তারপর উড়ে রাজকুমারীর হাতে গিয়ে বসল। রাজকুমারী তার মায়াবতী চোখদুটি দিয়ে পাখিটার দিকে তাকিয়ে থাকল।

ম্যাজিক রিং অ্যান্ড দ্য জঙ্গল অব ডেথ (ম্যাজিক রিং, #১)Where stories live. Discover now