পর্ব-৫

148 6 4
                                    

৫.
আওয়াজটা যখন ওদের কানে ঢুকল, তখন ওরা জঙ্গলের মাঝামাঝি। পাহাড়ের ধার ঘেঁষে হেঁটে হেঁটে ওরা ফিরে আসছিল সেই জায়গায়, যেখানে ওরা প্রথম রাত কাটিয়েছিল। সার্বিক দিক বিবেচনায় এই জায়গাটাই ওদের কাছে ক্যাম্প করার জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত মনে হয়েছে। অনেকটা হাঁটা হয়েছে, বিশ্রাম নেবার কথা ভাবছে, এমন সময় আওয়াজটা শুনতে পেল ওরা। হেলিকপ্টারের আওয়াজ। যে মধুর আওয়াজের প্রতীক্ষায় যিয়াদ গুনছিল প্রতিটা মুহূর্ত।

দুজন দুজনের দিকে তাকাল কয়েক পলকের জন্য। একে অপরের চকচকে চোখ দেখে নিশ্চিত হলো যে কেউই ভুল শোনেনি। পরমুহূর্তে ছুট দিল বিদ্যুৎগতিতে।

"হেল্প হেল্প" "দাঁড়ান দাঁড়ান" "ফিরে আসুন" "প্লিজ ফিরে আসুন"

দুহাত উপরে তুলে চিৎকার করেই যাচ্ছিল ওরা। কিন্তু ততক্ষণে হেলিকপ্টার চলে গেছে দূরে, ওদের সৈকতে পৌঁছার অনেক আগেই চক্কর শেষ করে ফেলেছিল ওটা। নিদারুণ হতাশায় বালুর মধ্যে বারকয়েক ঘুষি মারল যিয়াদ। প্রথমে এটা জানা যে দ্বীপটা নির্জন আর এখন মুক্তি পাবার সুযোগ এভাবে ফসকে যাওয়া। আর যেন কোন আশাই অবশিষ্ট রইল না।

এসওএস! বড় করে যেটা এঁকেছিলাম সকালে। সেটাও কি ওরা দেখতে পায়নি? সহসা মনে পড়ল যিয়াদের। কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর আগেই জবাব পেয়ে গেল। জোয়ারের পানি আজ উঠে এসেছে অনেকটা উপরে। এসওএস এর সাথে ধুয়ে নিয়ে গেছে ওদের উদ্ধার পাওয়ার আশাটুকুও, এতে আর কোন সন্দেহ নেই।

বাকি দিনটা কাটল নিশ্চুপ নিস্তব্ধতায়। খাওয়ার কথাও যেন মনে পড়ল না কারও। যিয়াদ নামাজের সময় সময় উঠে নামাজ পড়ল, বাকি সময়টা বসে রইল চুপচাপ। আর মায়ূমী কোথায় যে গেল, যিয়াদের খুঁজতেও মন চাইল না।

বেলা পড়ে এলে আর থাকা গেল না। মন খারাপ তো আর পেট ভরায় না। আলো থাকতে থাকতেই জঙ্গলের সামনের দিকে এগিয়ে গেল যিয়াদ। একটা কলা ছিঁড়ে কামড় দিবে, তখনি মায়ূমীর কথা মনে পড়ল ওর। কে জানে, ওও হয়ত মন খারাপ করে না খেয়ে বসে আছে। তাতে কী, আমি কি ওকে খেতে নিষেধ করেছি? ওর ক্ষুধা লাগলে ও ঠিক খেয়ে নিবে। বিড়বিড় করে দুটো বড় বড় কলা সেখানেই সাবাড় করে আরও এক কাঁদি নিয়ে ফিরে এল যিয়াদ।

ঊর্ণাজালDonde viven las historias. Descúbrelo ahora