যিয়াদের ধারণা সত্যি প্রমাণিত করে ওই হেলে পড়া নারিকেল গাছটার কাছেই আস্তানা গেড়েছে মায়ূমী। ওর বারণ থাকা সত্ত্বেও সন্তর্পণে পিছু নিয়ে দেখে এসেছে যিয়াদ। তবে বেশিক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করার দুঃসাহস করেনি। ওর মনে হয়েছে ধরা পড়লে ফল খুব একটা সুখকর হবে না। ব্যাপারটা একটু খারাপই লাগছে যিয়াদের। কথাগুলো মনে হয় একটু কঠোরই হয়ে গেছে। কিন্তু এছাড়া আর কীভাবে বলত ও?
দিনের বাকিটা সময় কাজ করে কাটাল যিয়াদ। নতুন চালা বানানোর চিন্তা আপাতত স্থগিত রেখে আগের চালাটাতেই হাত লাগাল। তিনদিকে নারিকেল পাতা দিয়ে বেড়া মতন করে মোটামুটি ঘরের আকৃতিতে আনা গেল জিনিসটাকে। কিন্তু কাজের ফাঁকেও ওর মনের উসখুসানি চাপা রইল না। দ্বীপটা যেন এবার সত্যিকারের নির্জন মনে হচ্ছে। ছটফটে মেয়েটার উপস্থিতি ছাড়া সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ব্যাপারটা খেয়াল করে অদ্ভুত লাগল ওর। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না!
রাতে একা একা ডিনার করতে বসে আরও বেশি খারাপ লাগল। যতদূর বুঝেছে মেয়েটার সার্ভাইভাল স্কিল একেবারে শূন্যের কোঠায়। একা একা কী করছে না করছে আল্লাহ পাক জানেন। বারবার মনে হচ্ছে মেজাজ খারাপ করে ওভাবে না বললেই হতো। সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বুঝিয়ে বলা যেত নিশ্চয়ই। কাজটা ঠিক হয়নি।
ওর মন চাচ্ছিল একবার মায়ূমীকে গিয়ে দেখে আসে। দোনমনা করতে করতে শেষে আর গেল না। দ্বীপে একাকী রাজত্ব করার এতই যখন শখ, সেটা একটু বরং মিটিয়েই নিক। আর এখন তো তাও কাছেই আছে। দেখা করতে গেলে বেশি রেগে গিয়ে যদি অন্য কোথাও চলে যায়, বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না। কিন্তু চালাঘরটায় ঘুমাতে যেতে পারল না যিয়াদ। মেয়েটা নিশ্চয় এর মধ্যেই ওদিকে একটা ঘর তুলে ফেলতে পারেনি। একদিক দিয়ে ওকে ঘরছাড়া করেছে যিয়াদই। সেখানে ও কীভাবে নিজে আরাম করে ঘুমাবে? কয়েকশো মিটার দূরে দুজন নরনারী নিজ নিজ আগুনের পাশে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়ল। মন অন্যদিকে থাকায় এটাও মনে পড়ল না কারও যে ওরা দ্বীপবাসের এক সপ্তাহ পূর্ণ করে ফেলেছে।
***
পরদিন সকালে মুখ হাত ধুতে গিয়ে ইচ্ছে করেই অনেকক্ষণ নালার পাশে বসে রইল যিয়াদ। সেখানেই সময় নিয়ে কলা দিয়ে নাস্তা করল। কিন্তু মায়ূমীর টিকিটারও দেখা নেই। এদিকে শুধু শুধু তো আর বসে থাকা যায় না। তাই আরও একবার মাছ ধরার মিশনে নামল ও। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর গলদঘর্ম হয়ে যখন ভাবছে এ দফায়ও হলো না, গোসল করে উঠে যাই, ঠিক তখনি আল্লাহ মুখ তুলে চাইলেন। একটা মাছকে ডালের ছুঁচালো মাথায় গেঁথে ফেলল যিয়াদ। মাছটা খুবই ছোট, ওর হাতের তালুর সাইজের। তবুও খুশির চোটে চিৎকার করে উঠল ও,“মায়ূমী! এদিকে আসো, জলদি!”
BẠN ĐANG ĐỌC
ঊর্ণাজাল
Tiểu Thuyết Chungযুবক বাংলাদেশী, যুবতী আমেরিকান। একজন মুসলিম, অন্যজন খ্রিস্টান। কী হবে, যখন তারা আটকে পড়বে আটলান্টিকের বুকে জনমানবহীন ছোট্ট এক দ্বীপে?