পর্ব - ১০

104 6 4
                                    

“আচ্ছা শোনো, একটা রিকোয়েস্ট করব, কিছু মনে করবেনা তো?” যিয়াদ উঠে দাঁড়ালে ওকে থামাল মায়ূমী।

“কী রিকোয়েস্ট?” একটু অবাক হলো যিয়াদ।
“তুমি এখন রাতের প্রার্থনা করবে, তাই না?”
“হ্যাঁ”

“তার আগে আজান দিবে, প্লিজ? তুমি যদিও সব বেলায় দাওনা। কিন্তু আমি কালকে থেকে একবারও শুনিনি তো, আমার খুব শুনতে ইচ্ছে করছে”

বিস্ময়ের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেল যিয়াদ। মায়ূমীর আজান শুনতে ইচ্ছা করছে, এটা কীভাবে সম্ভব?

“আচ্ছা, তোমার অসুবিধা হলে ঠিক আছে। তুমি এমনিই করে ফেলো প্রার্থনা” যিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে বলল মায়ূমী।

“আরে না না, এটা অসুবিধার কিছু হলো নাকি। আমি আসলে... আচ্ছা ছাড়ো”

অজু করে একেবারে নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল যিয়াদ। তারপর  দুহাত কানের কাছে নিয়ে বুলন্দ আওয়াজ দিল, “আল্ল..হু আকবারুল্ল...হু আকবার”

আজান দিতে ভালো লাগে যিয়াদের। যদিও এখানে আসার পূর্বে কখনো আজান দেয়নি ও, দেয়ার প্রয়োজনও হয়নি। ঘটনাটা ঘটেছিল দ্বীপে আসার পরদিন। নারিকেল গাছে ভরা একটা অংশে থাকা অবস্থায় সন্ধ্যা হয়েছিল। নীড়ে ফেরা পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর এক অপূর্ব সূর্যাস্ত ওকে নিয়ে গিয়েছিল ছোটবেলায়। দাদু বাড়িতে গেলে এরকমই গাছপালায় ঘেরা কোন একটা মাঠে কিংবা বাগানে খেলায় ব্যস্ত থাকত সবাই মিলে। সন্ধ্যা নেমে আসছে দেখলেই মন খারাপ হয়ে যেত। সবাই মনে মনে চাইত, সূর্যটা একটু ধীরে ডুবুক, মাগরিবের আজানটা একটু দেরিতে হোক। আরেকটু বেশি যেন খেলা যায়। কারণ আজান শেষ হওয়ার আগেই সবাইকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে হতো। এটাই ছিল হুকুম।

মুয়াজ্জিনের সুমধুর ধ্বনি খুব মিস করছিল স্মৃতিকাতর যিয়াদ। তখনই হঠাৎ ওর মনে হয়েছিল, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সুবিশাল জমীনের এই ছোট্ট অংশে কেউ হয়ত কোনদিন আজান দেয়নি। ঘোষণা দেয়নি যে, 'আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। মুহাম্মদ সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল'। সাথে সাথে এটাও মনে হয়েছিল, আমিই যদি এ ক্ষুদ্র জমীনের প্রথম সেজদাকারী হই, তাহলে প্রথম আজানদাতা কেন নয়? সেদিন জীবনে প্রথমবারের মতো আজান দিয়েছিল যিয়াদ। অদ্ভুত আবেগে ভরে উঠেছিল ওর মন।

ঊর্ণাজালOnde histórias criam vida. Descubra agora