পর্ব - ৩
চিৎকার না বলে বলা উচিত ছিল হর্ষধ্বনি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে যিয়াদ দেখল মায়ূমীর চোখমুখ থেকে খুশি উপচে পড়ছে। অবশ্য সে দৃষ্টির জবাব মায়ূমীকে আর দিতে হল না, কলকল আওয়াজটা অত্যন্ত মধুরভাবে কানে এসে প্রবেশ করছে। কাছে এসে দেখল পাথুরে একটা নালা বেয়ে পানির ধারা বইছে। স্বস্তিতে ধপ করে হাঁটুগেড়ে বসে পড়ল যিয়াদ। আল্লাহ তায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসল ওর।
আঁজলা ভরে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করল ওরা। আর এর ফাঁকে যেন হাজারবার আলহামদুলিল্লাহ পড়ে ফেলল যিয়াদ। এই স্বচ্ছ পানিতে হাত মুখ ধোয়ার লোভ সামলাতে পারল না মায়ূমী। ওর দেখাদেখি যিয়াদও আরেকবার অজু করে নিল।
নালার উৎসমুখ দেখার জন্য খানিকটা এগোল ওরা। কিন্তু অবাক হয়ে দেখল, পাহাড়ের গায়ে একটা বিশাল পাথরের নিচ দিয়ে নালাটা বেরিয়ে এসেছে। পাথরটা একটু অদ্ভুত, দেখে মনে হচ্ছে যেন আলগা ভাবে পাহাড়ের গায়ে বসানো। তবে গায়ে জমে থাকা শ্যাওলা বলে দিচ্ছে যুগ যুগ ধরে ওখান থেকে নড়ানো হয়নি পাথরটা। আর নড়াবেই বা কীভাবে, এত বড় পাথর নড়ানো চাট্টিখানি কথা তো নয়।
পানি পান করার পর দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেল কোনদিকে যাবে সেটা নিয়ে। পানি বহন করবার মতো যখন কিছু নেই, তখন তো পানির কাছাকাছিই থাকতে হবে। আবার কোনো সাহায্যের সন্ধান পাওয়ার জন্য সৈকতের কাছেও থাকা উচিত। কিন্তু ওরা এসেছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে, কোনদিক দিয়ে গেলে যে কাছাকাছি সৈকতে পৌঁছা যাবে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা।
তবে মায়ূমী একটা বুদ্ধি দিল। যে নারিকেল দুটোর পানি ওরা খেয়েছে, সেটার শাঁস তখন ওরা পেট ভরা থাকায় খায়নি। সেগুলো মায়ূমী ওর ব্যগে করে বয়ে এনেছে। এখন শাঁস খেয়ে নিয়ে ওই মালাদুটোতে করে পানি নেয়া যায়।
সায় দিল যিয়াদ। তবে বন জঙ্গলের রাস্তা, এভাবে পানি নিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে সেটা হচ্ছে কথা। কিন্তু এখন রিস্ক নেয়া ছাড়া কিছু করার নেই। কয়েকটা চিকন ডালকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছুঁচালো মাথা বের করার চেষ্টা করল যিয়াদ। চার নম্বর ডালটা তুলনামূলক ছূঁচালো হয়ে ভাঙ্গল। ওইটা আর দাঁতের সাহায্যে বহু কসরত করে নারিকেলের শাঁস যতটা পারা যায় বের করে খেল ওরা। তারপর দুটো মালা ভরে পানি নিয়ে মায়ূমীর দুই হাতে দিল যিয়াদ।
YOU ARE READING
ঊর্ণাজাল
General Fictionযুবক বাংলাদেশী, যুবতী আমেরিকান। একজন মুসলিম, অন্যজন খ্রিস্টান। কী হবে, যখন তারা আটকে পড়বে আটলান্টিকের বুকে জনমানবহীন ছোট্ট এক দ্বীপে?