মায়ূমীর কথামতো জুকিনির ঝোপ পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেল যিয়াদ। পাহাড়ে ওঠার পাগলামি থেকে আজকের মতো নিরস্ত করা গেছে মায়ূমীকে। গতকাল জঙ্গলের ভেতর কোথায় যেন পায়ে বড়সড় কাঁটা ফুটেছিল, এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আর এই পা নিয়ে নাকি তিনি পাহাড়ে চড়বেন! এটা বলাতে দমেছে সে। নিজেও হয়ত বুঝেছে যে এই পা-কে একটু রেস্ট দেয়াই উত্তম।
যিয়াদ বেরিয়েছে মায়ূমীর স্বর্গ দর্শন করতে। ফেরার সময় খাবার নিয়ে ফিরবে। কাঁধে মায়ূমীর হোবো ব্যাগ আর হাতে ওর নিজের তৈরি মাছ ধরার বর্শা। আজ সকালেই বানিয়েছে জিনিসটা। একটা সরু অথচ মজবুত ডালের মাথা ফাটিয়ে বহু কসরত করে একটা ছোট চোখা পাথর আটকিয়েছে। দেখতে অনেকটা বর্শার মতো হওয়ায় মনে মনে এটাকে বর্শাই বলছে।
ডালে ডালে পাখির কূজন আর পায়ের নিচে শুকনো পাতা ভাঙার মচমচ শব্দ। সব মিলিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে যিয়াদের। গহীন জঙ্গলে অভিযানে বেরোনো কোনো এক অভিযাত্রীর মতো লাগছে নিজেকে। মায়ূমীর পায়ে কাঁটা ফোটায় নিজেও একটু দেখেশুনে হাঁটছে। এখানে ও যদি কোন জিনিসের অভাব সবথেকে বেশি অনুভব করে থাকে তো সেটা জুতো। পায়ের নিচে ধুলোবালির ব্যাপারে ও ছোট থেকেই একটু বেশি খুঁতখুঁতে। জুতো-স্যান্ডেল ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারে না। সেই ওকে এখন কীসের কীসের উপরেই না খালি পায়ে চলতে হচ্ছে। মানুষের জীবনে পারি না, পারব না বলে কিছু হয় না। কখন কোন পরিস্থিতিতে কাকে কী করতে হতে পারে, কেও কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ যেন ওকে সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মায়ূমী রবিনসন ক্রুসোর কথা মনে করে যখন বিভিন্ন জিনিস বানানোর কথা বলে, যিয়াদও তখন ভাবে, কোনোভাবে কি পায়ে দেয়ার কিছু বানানো যায় না? এটা অবশ্য কখনো মায়ূমীর সামনে প্রকাশ করেনি। বলা যায় না, যে পাগল মেয়ে, হয়ত জুতো তৈরির মিশনে নেমে যেতে পারে!
হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে নারিকেল আর কলা গাছের পরিমাণ যেন কমে আসছে বলে মনে হলো। খানিক বাদে যেন একেবারেই অন্য কোথাও চলে এলো যিয়াদ, দৃষ্টিসীমায় আর একটাও কলা কিংবা নারিকেল গাছ নেই। এরকমটা এই দ্বীপে আর কোথাও দেখেনি ওরা। হঠাৎই একটা বড় বাঁক নিল নালাটা। বাঁকটা ঘুরতেই থমকে দাঁড়াল ও।
VOUS LISEZ
ঊর্ণাজাল
Fiction généraleযুবক বাংলাদেশী, যুবতী আমেরিকান। একজন মুসলিম, অন্যজন খ্রিস্টান। কী হবে, যখন তারা আটকে পড়বে আটলান্টিকের বুকে জনমানবহীন ছোট্ট এক দ্বীপে?