পরদিন।
ফজরের সালাত আদায় করার পর অলসতাকে প্রশ্রয় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল যিয়াদ। ভাটার শেষ সময় চলছে। বুকের একটু নিচে দুহাত বেঁধে পীপিলিকার গতিতে হেঁটে সুপ্রশস্ত সৈকত পেরিয়ে চলে এলো পানির কাছে। ছোট ছোট ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। জোয়ার শুরু হতে কিছুটা সময় বাকি আছে। পায়ের নিচে সদ্য পানি নেমে যাওয়া ঠান্ডা বালু সারা শরীরে একটা শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রকে হাতের বামে রেখে একই গতিতে আবার হাঁটতে শুরু করল যিয়াদ। ভোরের আধো আলো-আঁধারিতে হাঁটতে হাঁটতে কখন যেন পৌঁছে গেল মায়ূমীর প্রিয় জায়গাটাতে। নারিকেল গাছটার উপরে পা ঝুলিয়ে বসে গেল ও। ততক্ষণে আকাশ সাদাটে হয়ে এসেছে, সূর্য উঠি উঠি করছে।পরবর্তী মুহূর্তগুলোতে বিমুগ্ধ নয়নে বিশুদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য রূপবদল দেখল যিয়াদ। সাদাটে নীল আকাশকে ঝকঝকে নীলচে সোনালি বর্ণ ধারণ করতে দেখল। অন্ধকার পাহাড়ের পেছন থেকে সূয্যিমামার আলো নিয়ে আসা দেখল। সেই আলো কুচি কুচি হয়ে হয়ে সাগরের বুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখল। জোয়ার শুরু হলে অবতারণা হলো আরেক দৃশ্যের। এ সমুদ্রতট, বালুকাবেলা, যেন সমুদ্রের সম্পত্তি। কয়েক ঘন্টার জন্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে প্রবল বিক্রমে সে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তীরে। একেকটা আগ্রাসী ঢেউয়ের আক্রমণে ফিরিয়ে নিচ্ছে ইঞ্চি ইঞ্চি জমি।
তারপর সূর্যের তেজ বাড়তে বাড়তে যখন আর গায়ে জ্যাকেট রাখা সম্ভব হলোনা, তখন পেটে ছুঁচোর অস্তিত্ব অনুভব করল যিয়াদ। একইসাথে ফেরার কথাও মনে হলো। এক ছড়া কলা দিয়ে পেটের ছুঁচোগুলোকে শান্ত করে দ্রুত পায়ে ফিরতি পথ ধরল ও।
ক্যাম্পে ওর জন্য একটা বড়সড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। অগ্নিকুন্ডের পাশে বালুর উপর বড় বড় অক্ষরে একটা লেখা, 'একা থাকতে চাই। প্লিজ আমাকে খুঁজবে না'। হতভম্ব হয়ে লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইল যিয়াদ। মেসেজ রেখে যাওয়ার এই অভিনব পন্থা দেখে চমৎকৃত হলো। মাথায় একটা দুশ্চিন্তা আসি আসি করছিল, সেটাকে আপাতত ঝেঁটিয়ে বিদায় করল। এই দিনের বেলা নিরীহ জঙ্গলে আর কীসের ভয়? কোন হিংস্র জন্তু থাকলে এতদিনে ওরা ঠিক দেখা পেয়ে যেত।
YOU ARE READING
ঊর্ণাজাল
General Fictionযুবক বাংলাদেশী, যুবতী আমেরিকান। একজন মুসলিম, অন্যজন খ্রিস্টান। কী হবে, যখন তারা আটকে পড়বে আটলান্টিকের বুকে জনমানবহীন ছোট্ট এক দ্বীপে?