খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে, টান পরে নাঁড়িতে

131 11 13
                                    

আমার ঘরে পশ্চিমে একটা জানালা আছে। গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কোন ঋতুতেই এই বদ জানালা কিছুই বয়ে আনতে পারেনা। জানালার কাঁচ এতো অপরিষ্কার যে সূর্যের আলো বহু কায়দা করেও কিছুতেই ঢুকতে পারেনা। 

এই জানলা দিয়ে যে একমাত্র মহা যে মূল্যবান বস্তুু দেখা যায় তা হল, আমাদের বিল্ডিং-এর সামনের একটা রঙ ওঠা ময়লা বিল্ডিং!! সামান্য বাতাসেই যার গাত্র দিয়ে অনবরত সাদা ইউরিয়া সার টাইপ কিছু উড়ে উড়ে বের হয়।

আমি তবুও তাকিয়ে থাকতাম কোনো একজনকে সুন্দরী নারী ভেবে। যেদিন চশমা পরে প্রথম দেখলাম, তখন থেকে আর দেখিনা।

উনি আমার খালাম্মার নানির বয়সের কোন কাজের বুয়া।
দোষটা কিন্তুু আমার না, আমি চোখে খুব কম দেখি, কম দেখলেও চশমা একদম পরিনা। আমি ভাবতাম মেয়েটা বই হাতে সারাক্ষন হেটে হেটে পড়ে, পড়ে দেখলাম এটা উনার অতিকায় ভুঁড়ি যা হাতে নিয়ে হাটা লাগে। উনি যেখানেই যান, উনার ভুঁড়ি তার আগেই নাচতে নাচতে কয়েক সেকেন্ড আগেই পৌঁছে যায়।

__ঐ বিল্ডিং থেকেও আরও মূল্যবান যে বস্তুু দেখা যায় তা হল- আমাদের বিল্ডিং, যার কোন খত সুরত তো দূরে থাকুক, এমনই অবস্থা যে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে বাড়ির সামনে একটা সাইনবোর্ড লাগাবো, যেখানে লেখা থাকবে-
  এদিক তাকান, .................. ইহা বিল্ডিং কিন্তুু...... মানুষ ও থাকে আবার কয়ডা !! 
লোকে অবশ্য বিরক্ত হবে , ভাববে... এইদিক না তাকাইলে লেখাটা কেমনে পরলাম হারামজাদা।

__আরও যা ঐ  বিল্ডিং থেকে দেখা যায়, তা হল আমাদের বিল্ডিং-এর ৫ম তালার ফ্লাটে একটা ছেলে থাকে, যার মাথায় যে গণ্ডগোল আছে আমি সেটা লিখে দিতে পারে।  মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকবে সবসময়। মনে হতে পারে দাড়ি বহু কষ্টে কিছুদুর গাল বেয়ে বেড়িয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে এখন । আর সামনে কেউ থাকুক বা না থাকুক অনবরত সারাদিন হাত পা নাচিয়ে খিল খিল করে হাসতে থাকবে, আর খস খস করে গাল চুল্কাবে। এই ছেলেটাকে চুপ চাপ দেখলে মনে হবে, এই বাদরটা কখনও মানুষও ছিল। বিবর্তন উল্টা গেছে ওর ক্ষেত্রে, তাই মানুষ থেকে বানর হচ্ছে ।

__কিন্তু রাত হলেই ছেলেটা একদম অন্য একজন মানুষ হয়ে যায়। একদম অন্য কেউ, একদম অন্য...
জানালার শিক ধরে কখনও চোখ বন্ধ করে হাসি মুখে দাড়িয়ে থাকে। অনুভব করে বাতাসের প্রতিটি স্পন্দন একবার তার কপাল হয়ে চোখের পাপড়ি ছুয়ে যায়, কিন্তু সে চোখ মেলেনা । কারন এটা তার বাতাসের সাথে এক ধরনের খেলা। কখনও বাতাস তার নাকে গন্ধ ছড়িয়ে বলবে, বলত এটা কোন ফুল ছিল
এই খেলা জোস্নার আলোতে খেলা মানা আছে। এই খেলার অর্থ কি, তা তাকে কখনও জিজ্ঞেস করিনি। জানি সে উত্তর দিতে পারবেনা।

কখনও পিয়ানোতে তাকে সুর তুলতে দেখা যায়। কখনও বা গুন গুন করে গান গায়, কিন্তু তার গানের গলা খুব মনোযোগী না হলে কখনও শুনতে পাওয়া যাবেনা।

বইও পড়ে কখনও, কখনও তার প্রিয় উপন্যাসের পাতাগুলো কয়েকফোঁটা জল ও উপহার পায় সে রাতে।

কখনও কখনও আয়নার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে একা একা কথা বলতে থাকে, কখনও হাসি, কখনও রাগ, কখনও উদ্বেগ, নানান রঙের অনুভুতি তার মুখে খেলা করতে থাকে। কখনও আবার আয়নার মধ্যেই নিজেকে নিজেই চুমু দিয়ে বসে। হা হা, এমন পাগল-ও হয়, না দেখলে কে মানবে

__আর কত কিছু যে করে পাগলটা সারা রাত জুড়ে। তা কি বলে শেষ হবে একরাতে!!! এসব তো তার হাজার রাতের গল্প।।
কিন্তুু একটি কথা আমি কখনও বুঝিনি, কখনও বুঝবনা হয়ত, কোন মানুষ সত্যি-ই কি করে তার কল্পনায় এতো বড় একটা স্বপ্নের পৃথিবী গড়তে পারে যেখানে বাস্তবের জ্যোৎস্না ও কোনদিন আলো ছড়াতে পারেনি, , ,

উপন্যাসের গল্পের মত কখনও সেই ছেলেটির পথ চেয়ে থাকেনা কোন রমণী!! কখনও না, কখনও না।

**সমাপ্ত**

এখন নিশুতি রাতWhere stories live. Discover now