কোরোনা ও স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

48 5 3
                                    

______________________________

এই যে, তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
মানুষের স্বপ্নগুলি কত ক্ষণজন্মা, তাই না? কত সহজেই বিলীন হয়ে যায় সব শূন্যতায়... মানুষটার সাথে সাথে হৃদয় নিঙড়ানো স্বপ্নগুলিও কোথায় যেন বাষ্প হয়ে উবে যায় সেই সাথে।
কিংবা সেই স্বপ্নগুলি হয়তো ফিরে আসবে আবার, হয়তো সেই স্বপ্ন বয়ে নিয়ে আসবে অন্য কোনো স্বপ্নের ফেরিওয়ালা...

দেখো,
এই তো চারিদিক ছেয়ে ফেলেছে মৃত্যুফাঁদ-
তুমি হয়তো দেখতে পাওনা খালি চোখে, কিন্তু আমি তাঁদের ছুঁয়ে দেখি আমার আংগুলের কোমল স্পর্শে। তারাও কৌতুক পূর্ণ চোখে নিস্পলকে তাকিয়ে আছে আমার পানে... স্থবির! কিংবা একটু একটু করে এগিয়ে আসছে হয়তো ..!

...তবুও বেঁচে আছি, এখনো বেঁচে আছি আমি- তুমি একদম ভেবো না, আমি আছি... আমি আছি তোমার খুব কাছেই...

হয়তো আরো কিছুক্ষণ, কিংবা আরো দুটি লগ্ন...

বুকের গহীনে এখনো সব অপূর্ণ স্বপ্নেরা জোনাকের মত জ্বলছে।
তোমার কথা ভেবে ভেবে অদৃশ্যের পানে-  না জানি সে কত কথা বলছে।

দেখো না সময়ের ঘড়ি টিকটিক করে চলছে, আস্তে আস্তে সবকিছু ক্ষীণ হয়ে আসছে... চারিদিকে নামতে চাইছে নিগুঢ় অন্ধকার.. দেওয়ালের টিকটিকিটাও কি বুঝে 'ঠিক ঠিক' বলছে। এখানেই কি তবে সব শেষ..?

তোমায় শুধু একবার জড়িয়ে ধরে মনের সব কথা কি বলা হবে না কোনোদিন?
তোমায় ঘিরে কত না বলা কথা, কত রহস্যঘেরা অদ্ভুত কিছু নিষ্পলক চাহনি, কত চেপে রাখা অব্যক্ত কিছু অভিমান, কত অকারণ খুনসুটি -কিছু অর্থহীন চেপে রাখা হাসি, কত বেদনার ভারে বন্ধ হয়ে আসা চোখের পাপড়ি, কিছু অপ্রত্যাশিত চোখাচোখি থেকে রৌদ্রের ক্ষরতাপেও এক পশলা বৃষ্টি, কিছু অবাধ্য কুয়াশায় ক্ষীণ হয়ে আসা চোখের দৃষ্টি.. কিংবা চোখের কোনে জমে ওঠা একফোঁটা শিশিরের ইন্দ্রজালে পৃথিবীর বুকে নতুন এক ভালোবাসার সৃষ্টি। চোখে চোখ রেখে এখনো তো কত কিছুই হলো না বলা!
আবার কত উদ্ভট কল্পনা এসে ভর করে মনে, মুখে বলতে বললে হয়তো দুজনেই লজ্জায় যাবো মরে...

হয়তো বলার সুযোগও হবে না কোনোদিন।
দুই দন্ড পরেই হয়তো মেহগনির স্নিগ্ধ পাতা বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঝরে যাবো তরুলতা হয়ে, তার সাথে ঝরে যাবে তোমায় নিয়ে লেখা আমার যত কল্পিত একদল বর্ণিল গল্প কিংবা গভীর রাতে চন্দ্রের আলোয় দেখা খানিক রং ওঠা অতিরঞ্জিত সব স্বপ্ন।

ঐ গাছ থেকে যেদিন আমার নাম লেখা পাতাটা টুপ করে পড়ে যাবে, লক্ষ কোটি স্বপ্নের ডালপালা নিয়ে ধ্বসে গিয়ে এক মুহূর্তে সব কিছু হয়ে যাবে স্তব্ধ। জোনাকের সেই ঝাঁকটা কোথায় জানি হারিয়ে যাবে অনন্তে, আমার হয়ে একটি তারা উঠবে ফুটে দিগন্তে.. এক নিমিষেই জোনাকের সব আলো শুষে নেবে দিগাম্বরীর সর্পিলাকার ছায়াপথ।

আবার একদিন ফিরে এলে বসন্ত,  পাখিরা সব নতুন  সুরে গাইবে, শুধু তোমায় নিয়ে আমি তো আর গান গাইবো না!
আমি তখন অনেক অনেক দূর...
নতুন কোনো ফেরিওয়ালা এসে ছিনিয়ে নেবে সুর,
আমার লেখা গানে হবে নিষেধাজ্ঞা জারি,
আমায় নিয়ে তোমার কভু হৃদয় হলেও ভারি-
তোমার কাছে একটু সময় চাইবো না,
পুব দরিয়ার পানি যেদিন উজান পানে বইবে-
তোমায় নিয়ে সেদিন আমি
আর তো তরী বাইবো না!

আমি তখন অনেক অনেক দূর!
কত শত শালিকের ঝাঁক- এসে দিয়ে যাবে ডাক, উন্মাদ কবিদের দল কিছুটা শান্তি পাক।
তোমার কাছে সেদিন একটি লগ্ন যে আর চাইবো না।

তুমি সেদিন আমায় ভুলে নতুন ছবি আকবে..
জানি গোপন কোনো প্রকোষ্ঠতে আমার ছবিও থাকবে..
তোমার সুখে আমিও তখন মিটিমিটি হাসবো-
বিশ্বপিতাকে সাক্ষী রেখে তোমায়ই ভালবাসবো।

___^___^___^___^___^___^__^__^__^___

এখন নিশুতি রাতWhere stories live. Discover now