যখন চারিদিকে এমনই নিগুঢ় অন্ধকার যে, এক ফোঁটা আলোর জন্য বুক চৌচির হয়ে যায় ধারিত্রির,আমার ঘুম ভেঙে যায় তখন।
সমগ্র আকাশ শুষে যখন, এক ফোঁটা জ্যোতি করেনা পৃথিবীর পথ পরিভ্রমণ,
হৃদয়ে তৃপ্তি নিয়ে জেগে উঠি আমি ঠিক তখন।
সাগরের বুক চিড়ে প্রতিফলিত হয় না যখন এক মুঠো তারারও আলোক বিচ্ছুরণ,
কেবলই জুপিটারের নীল অরোরা ছাড়া আর সবই ঘুমন্ত,
ঠিক তখন আমার শরীর বেয়ে যায় এক অদ্ভুত অবিশ্বাস্য মোহনীয় শিহরণ..
আমি আহরণ করি জগতের অন্ধকার থলিতে জমে ওঠা ঝিনুকের আবরণে কিছু বিদগ্ধ, পরিত্যাক্ত অনুভূতির বৃথা আস্ফালন।
প্রতিফলিত হয় না যখন কোনো রশ্মি জগতের কোনো স্বপ্ন সত্যি করে,
অস্ফুটো ক্রন্দন মিশে গিয়ে বাতাসে ছড়ায় বেদনার বিচ্ছুরণ...
শুনেছো কি তুমি সেই হাহাকার ধ্বনি?
পৃথিবীর সাতটি বায়ুমন্ডল ঘিরে যে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয় আলাদা আলাদা ছন্দে,
আলাদা আলাদা সুর মিশ্রিত হয়ে সে হাহাকার তোলপাড় করে তোলে বনে বাদাড়ে,
মরুভূমির প্রতিটি বালুকণার ঘর্ষনে সে ধ্বনি মুখরিত করে ছুটে যায় গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে,
জুপিটারের সেই নীল অরোরা ছাড়িয়ে বহুদূরে... সেই অরোরা মিশ্রিত সে বেদনার সুর আসমান জুড়ে প্রবাহিত করে সে নিহিলা ধারা...
মৃত প্রায় বুভুক্ষুের মত আমি পান করি এ পাথেয় ঘিরে ঝর্ণাধারার মত ক্ষনিকের প্রবাহমান এই স্রোতস্বিনী নিহিলা ধারা!
সেই ধারা ছুটে চলে কত নদী, কত হাওড়, কত বিল- তখন আমি ধারণ করি নীল, ঐ সাগরের মত নীল, ঐ নীলাম্বরীর মত নীল নীলিমারেখা ফুঁটিয়ে ছুটে চলি নীল থেকে নীলিমায়, পশ্চিম অববাহিকায়...
ভোরের গোধূলি রেখা ফুটে ওঠার প্রাক্কালে নীল আকাশের বুকে আমি হয়ে যাই চিল।
চোখের পলকে পেরিয়ে যেতে কত হাওড়, কত বিল-
কত সাগর, ভূ-মধ্যসাগর...
কত মালভূমি...
কখনও তেপান্তরে পড়ে থাকতে দেখি আবিরের ডায়েরি..
কখনো কখনো ভুল করে ঘুরে চলে আসি নীলগিরি, হিমাচল..
তুমিও একদিন জিজ্ঞেস করেছিলে, তুমি কেনো এতো নীল?
আমি তখন কি ভেবে তোমাকেও ছুঁইয়ে দিয়েছিলাম আমার হৃদয়ে চির বহমান স্রোতধারার মাঝ হতে শুধু এক ফোঁটা নিহিলার রস!
থাক সে কথা,
সে বিষের বিষক্রিয়া তোমায় নিয়ে গেছে অনেক দূর...
আর সে নিহিলা ধারা নিহিলা রাশি হয়ে আজ নীল দ্যুতি ছড়াচ্ছে আমার সারা গায়..
সে রাশির বেদনা বিধুর খর্বাকার স্বপ্নগুলি সুর হয়ে ভাসিয়ে নিচ্ছে আমায় বহুদূর...
শাওন এরিক
২৪-০৩-২০২০