৩য় পর্ব

1 0 0
                                    

শক্ত ও শীতল রেললাইন এবং মায়ার মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝে সংযোগ স্থাপনের কারণে তার হাড় ভেঙে যাবে। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিবে। হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি পাবে। এবং চোখ মেলে আবারও তাকানোর আগে চলন্ত ট্রেনটি তার উপর দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে যাবে দূরে। কয়েক খণ্ডে খণ্ডিত হবে তার নশ্বর দেহখানি। প্রাণ-ভোমরা খাঁচা চিড়ে উড়ে যাবে দূর আকাশে৷
মায়া এমন কিছুর প্রত্যাশায় আতঙ্কিত হয়েছিল। কিন্তু সেসব কিছুই ঘটল না। শক্ত ও শীতল লোহার স্পর্শের পরিবর্তে সে পানিতে পড়ে গেল। চোখ মেলে তাকালে সে নিজেকে নদীর পানিতে তলিয়ে যেতে দেখল। নড়াচড়া করার শক্তিটুকু ফুরিয়ে দেহ যেন  অসাড় হয়ে গিয়েছে। অথচ সাঁতার না জানা সত্ত্বেও গভীর পানিতে প্রাণ বাঁচাতে ভেসে থাকার কৌশল তার জানা।
তাহলে সবটা সত্যি বিভ্রম ছিল?!
পানির শব্দ ব্যতীত অন্য কোন শব্দ সে শুনতে পারছে না। কেউ এসে তাকে টেনে তুলবে এই আশায় সে ধীরে ধীরে হাতটা উপরের দিকে বাড়িয়ে দিল। কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা গেল না। শ্বাসনালিতে ধীরে ধীরে পানির রাজত্ব চলতে লাগল। পানিতে বুদবুদ তুলে অস্পষ্টভাবে সে উচ্চারণ করল‚
“আম্মু…”
কয়েক সেকেন্ড। এরপর সে নিভু প্রায় দৃষ্টিতে দ্বিতীয় এক মানবদেহ তার দিকে সাঁতরে আসতে দেখল। তার বাড়িয়ে রাখা হাতটি শক্তভাবে ধরে তাকে টেনে নিল নিজের দিকে। চোখ বন্ধ হয়ে গেল তার। চেতনা শক্তি নিস্তেজ হয়ে গেল।
আচ্ছা‚ সে কি সত্যি কোন মানব সন্তান ছিল? নাকি কোন দৈব শক্তিসম্পন্ন ভিন্ন কোন সৃষ্টি? কোন দৈব শক্তি সম্পন্ন এক রক্ষাকার্তা?
ধীরে ধীরে মায়ার শরীর উষ্ণ হতে আরম্ভ করল। সে নিজের হৃৎস্পন্দন অনুভব করতে পারছে। সেই সাথে খানিকক্ষণ পরপর বুকে শক্ত  চাপ অনুভব করছে। উর্ধ্বশ্বাসে তার চেতনা ফিরে এলো। লোভীর মতো শ্বাস নেওয়ার চেষ্টাতে অল্প কিছু পানি তার শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে। ফলে সে কেশে উঠে। কেউ একজন এক হাতে তার বাহু এবং অপর হাত পিঠে দিয়ে থাকে ওঠে বসতে সাহায্য করে। কাশতে কাশতে মায়ার মুখের অবশিষ্ট পানি বেরিয়ে আসে। ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস কার্য স্বাভাবিক হয়ে উঠে তার। কিন্তু হাঁপাচ্ছে সে। ক্লান্ত দেহে পেছনে হেলান দিলে সে পিঠে কোন মেয়েলি দেহের স্পর্শ অনুভব করে। অস্পষ্ট সকল গুনগুন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে কর্ণকুহরে প্রবেশ করে।
“মায়া…লক্ষ্মীসোনা আমার। ঠিক আছিস?”
ডাক শুনে মানুষটিকে চিনতে মস্তিষ্কে জোর খাটাতে হলো না তাকে। মস্তিষ্ক নিজেই জিহবা পরিচালনা করে দুর্বল সুরে উচ্চারণ করতে বাধ্য করল‚
“রিদিপু…”
উষ্ণ দেহের আলিঙ্গন অনুভব করে সেই আলিঙ্গনকে আশ্লেষে জড়িয়ে নিল মায়া। ভেজা মাথায় উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেল সে।
“এইতো আমি‚ সোনা। কিচ্ছু হয়নি।”
মায়া আভিয়ানের সুগন্ধি পেল। সেও তার আশেপাশেই আছে। একজোড়া বলিষ্ঠ অথচ ভেজা হাত তাকে পিচঢালা রাস্তা থেকে পাঁজাকোলে উঠিয়ে নিল? তবে কি যাকে সে নিজের দৈব শক্তিসম্পন্ন রক্ষকর্তা ভেবেছে সে আভিয়ান ছিল? মায়া দ্বিতীয়বারের মতো অচেতন হলো।

সন্ধ্যাবন্দনা Where stories live. Discover now