২য় পর্ব

1 0 0
                                    

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ৩টার ঘরে। হঠাৎ মায়া ঘুমের মাঝে আঁতকে ওঠে।  শরীর ঝাঁকিয়ে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে সে। বুকের বাম পাশে হাত চেপে দ্রুত বিছানায় উঠে বসে। হৃৎস্পন্দন অত্যাধিক বেড়েছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
বিছানার বিপরীত পাশে ঘুমানো রিদি আকষ্মিক নড়াচড়া অনুভব করে জেগে ওঠে। চোখ মেলে তাকালে মায়াকে অস্থির অবস্থায় বসে থাকতে দেখে সে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যায়। হাতড়ে টেবিল লাইট জ্বালালে ঘুম ভাব চোখে আলো খানিকটা বিঁধলেও সেই অনুভূতি দূরে ঠেলে সে মায়ার পিঠে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দেয়। বিনা বাক্যে পানির গ্লাস এগিয়ে তাকে পান করতে সহায়তা করে।
“কিছু হয়নি‚ প্রিন্সেস। বড় শ্বাস নাও। ধীরে ধীরে। এক…দুই…”
গণনা করে রিদি মায়াকে শ্বাস নিতে সাহায্য করে৷ তার ইশারায় এবং কণ্ঠ অনুসরণ করে কয়েকবার বুক ভরে অক্সিজেন টেনে নিলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কিছুটা স্বাভাবিকতা অনুভব করে। রিদির দিকে অশ্রুসিক্ত ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠস্বরে জানায়‚
“আপু‚ একই দুঃস্বপ্ন। আমায় ঘুমাতে দিচ্ছে না।”
রিদি পরম যত্নে ছোট বোনকে নিজের দিকে টেনে নেয়। মায়া তার কোলে মাথা রাখলে সে মাথায় বিলি কেটে দিতে থাকে। স্নিগ্ধ কণ্ঠস্বরে আশ্বাস দিয়ে বলে‚
“ভয় পায় না‚ লক্ষীসোনা। ওটা একটা দুঃস্বপ্ন। তুমি আমার কাছে নিরাপদে আছ। তুমি আমার সাহসী প্রিন্সেস তো। ঘুমাও। আমি আছি।”
মায়া ঘুমাতে পারে না। কিন্তু বুকের ভেতরকার ভয় ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিদির কণ্ঠস্বর এবং তার মাথায় বিলি কাটার দিকে মনোযোগ দেয়।
সম্পর্কে দুজন খালাতো বোন হলেও রিদি মায়াকে খুব ভালোবাসে‚ যত্ন করে আগলে রাখে। পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার পর থেকে মায়া রিদির কাছেই থাকে। নিজের বাড়িতে অতিথির মতো যাতায়াত তার। অকারণে নয়। কারণ তো অবশ্যই আছে।

শনিবার। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় আজ ক্লিনিকে যায়নি মায়া। সে পেশায় একজন হৃৎরোগ বিশেষজ্ঞ বা কার্ডিওলজিস্ট। অথচ নিজেই হৃৎরোগে আক্রান্ত।
সকাল থেকে এটা-সেটা করে কাটিয়েছে সে। রাতে ঘুমাতে পারেনি বলে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে রিদির ধমকে সে বালিশে মাথা রেখেছিল। সেই থেকে সন্ধ্যা অবধি বেশ ভালো একটা ঘুম হয়েছে। নিদ্রাই বলা চলে। চারপাশ যখন প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন তখন মাথায় শীতল হাতের আলতো স্পর্শ এবং পুরুষ কণ্ঠের মৃদু সুরে নিজের নাম শুনে মায়ার ঘুম ভাঙে। বুকে বালিশ চেপে উপুড় হয়ে শুয়েছিল সে। তন্দ্রাচ্ছন্ন অভিব্যক্তিতে বন্ধ চোখেই ওঠে বসে। পরিচিত সুগন্ধি শুঁকতেই সে তন্দ্রাচ্ছন্ন মাতাল কণ্ঠে বলে‚
“ভাই! কখন এসেছিস?”
মুচকি হাসে আভিয়ান। বিছানার এক কোণায় বসে জবাবে বলে‚ “এইতো আধঘন্টা হবে। ঘুম হলো ঠিক করে?”
বাচ্চাদের মতো চোখ কচলাতে কচলাতে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায় সে।
রিদি রুমে এসে আলমারি থেকে সাদা-নীল রঙের মিশ্রণের থ্রিপিস বের করে মায়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। অলস অভিব্যক্তিতে একবার হাতের কাপড়ের দিকে আরেকবার রিদির দিকে দৃষ্টির স্থানান্তর করে।
“আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
থমথমে কণ্ঠে রিদি চোখ রাঙিয়ে বলে‚ “তোর মতামত জানতে চাইনি। আমরা বের হচ্ছি। তুই সাথে আসছিস।”
কপাল কুঁচকে আভিয়ানের দিকে বাচ্চাসুলভ অভিব্যক্তিতে তাকিয়ে মায়া বায়নার সুরে বলে‚ “ভাই‚ কিছু বল না।”
“হ্যাঁ।” মাথা নেড়ে আভিয়ান রিদির দিকে তাকায়। “রিদি‚ এক কাজ কর। গতবার আমি যে ঝুমকা এনে দিয়েছিলাম ওগুলোও ওকে পরিয়ে দিস। পেতনীকে দারুণ মানায় ওগুলোতে।”
রিদি মুখ টিপে বিজেতার হাসি হাসে। আভিয়ানের কথা শুনে অসহায় ভঙ্গিতে বসে থাকে মায়া। বুঝতে পারে তার মতামতের সত্যি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। এবং এমনটা রিদি কেন করছে তা তার অজানা কোন বিষয় না।

সন্ধ্যাবন্দনা Tempat cerita menjadi hidup. Temukan sekarang