৫ম পর্ব

1 0 0
                                    

ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে গাড়ির নিকটবর্তী হওয়ার সময় মায়া তার গাড়িতে হেলান দেয়া কয়েকজন পুরুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ধুমপান করছে তারা। এবং কোন বিষয়ে হাসাহাসি করছে।
স্বাভাবিকভাবে মায়া নিজের গাড়ির নিকটবর্তী হলো। সে লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলল‚
“আপনারা একটু সরে দাঁড়ান। আমি গাড়ি বের করব।”
লোকগুলো মায়ার দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে হৈহল্লা করে উঠল। একজন শিসও বাজাল। কিন্তু মায়া যথাসম্ভব নিজেকে ইতিবাচক রাখার চেষ্টা করল। একজন সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বাকি অংশ পায়ের নিচে পিষে ফেলল। মায়ার মুখে ধোঁয়া ছেড়ে সে বলল‚
“ডাক্তারনী দেখছি গাড়ি আরোহণের সাথে চালাতে জানে! তা আর কি কি আরোহণ এবং চালাতে শিখেছ?”
তাদের ইঙ্গিত যে অশ্লীল কোন বিষয় তা বুঝতে মায়ার সময় লাগে না। তার চোখমুখে কাঠিন্য প্রকাশ হতেই ভুরু যুগল কপালের মাঝে তিনটি ভাঁজ ফেলে একত্রে সংকুচিত হলো। তবুও সে শান্ত কণ্ঠে আবারও বলল‚
“সরে দাঁড়ান।”
ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে মায়া। গাড়িতে চড়ে বসার আগ মুহূর্তে লোকটা তার বাম হাত চেপে ধরে। ভয়ের কারণে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় তার। লোকটার হাতের দিকে তাকালে সে কব্জিতে একটি সাপের ট্যাটু দেখতে পায়। হাত থেকে লোকটার মুখমণ্ডলে তার দৃষ্টি স্থানান্তর হলে লোকটা আবারও নিচু স্বরে বলে উঠে‚
“না-ই-বা চালালে। চিকিৎসাটুকু করে যাও।”
মায়া হঠাৎ মুচকি হাসে। সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে হাতের দিকে ইশারা করে বলে‚
“অবশ্যই। কেন নয় ডাক্তার যেহেতু আমি চিকিৎসা করা আমার প্রধান কাজ। কিন্তু হাতটা আগে ছাড়ুন।”
লোকগুলো কৌতুহলী হয়ে উঠে। হাতে ট্যাটু সম্পন্ন লোকটির ঘাড় কাঁধের দিকে হেলে পড়ে এবং সে তার হাত ছেড়ে দেয়। মায়া গাড়ির ভেতর প্রবেশ করে না। বরং ব্যাগ হাতড়ে মোবাইলের সাইজের একটি ইলেক্ট্রিক স্টান গান বের করে নেয়। লোকটা কিছু বুঝে উঠার আগেই সে নিজ দৃষ্টিতে বিভিন্ন রঙের চালচলন দেখতে পায়। তার সমস্ত শরীর ঝাঁকিয়ে  অসাড় হয়ে উঠতে আরম্ভ করে। সে কিছু বলতে বা করতে পারে না।  একই স্থানে দাঁড়িয়ে কাঁপতে থাকে যতক্ষণ না মায়া তাকে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছে। লোকটার সঙ্গীরা ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয় এবং ভয়ার্ত হয়।
সেল্ফ ডিফেন্স/আত্মরক্ষার জন্য এই ইলেক্ট্রিক স্টান গান সে অনেক আগে থেকেই নিজের সাথে রেখেছিল। আজ এর প্রথম ব্যবহার এই লোকটার উপর করল। সে তাকে ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে। এরপর মায়া দেরি করে না। দ্রুত গাড়িতে চড়ে সে ভেতর থেকে দরজা-জানালা বন্ধ করে সেই স্থান ত্যাগ করে। বাড়ির পথে ড্রাইভিং করার সময় শুধুমাত্র একটি দুশ্চিন্তা তাকে আকড়ে ধরে। এরপর সে ক্লিনিকে যাবে কীভাবে? লোকগুলো নিঃসন্দেহে তার প্রতি ক্ষোভ পুষে রাখবে।

সন্ধ্যাবন্দনা Where stories live. Discover now