ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ওয়াশরুমে মায়া হাত-পা ধুয়ে নিচ্ছে। তার পাশেই রিদি দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিন ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা তাকে শুনাচ্ছে। খানিকটা লাজুক অভিব্যক্তি তার। মায়া তার প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে শুনছে। কোথাও হাসছে‚ কোথাও মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছে আবার কোথাও মতের বিরোধিতা করছে।
রুমে ফিরে এসে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে থেকে মায়া রিদিকে প্রশ্ন করে‚
“ছেলের নাম যেন কি বললে?”
কিছুটা লাজুকভাবে রিদি জবাবে বলল‚ “ফয়সাল চৌধুরী।”
মায়া নিরবে হাম্ তুললো। দৃষ্টি তার নিজের পায়ের দিকে। পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে থেকে সে কিছু ভাবল।
“ছবি আছে?”
“হ্যাঁ‚ আছে তো। কেন? দেখবি?”
রিদি মায়ার জবাবের অপেক্ষা করল না। দ্রুত হাতে নিজের মোবাইল ফোনটা উঠিয়ে গ্যালারিতে সেকেন্ড কয়েক ঘাটাঘাটি করল। এরপর একটি ছেলের ছবি বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে দিল। মায়া বেশ খানিকক্ষণ মনোযোগ সহকারে ছেলেটার ছবি দেখল। এরপর অনাগ্রহ প্রকাশে বলল‚
“এই প্রস্তাবে মত না দেওয়াটাই ভালো হবে। সুবিধার মনে হচ্ছে না।”
রিদি কপাল কুঁচকালো। একবার ছবির দিকে তাকিয়ে আবারও মায়ার দিকে তাকাল সে। মায়ার জবাবে সে কিছুটা বিভ্রান্ত।
“মানে? তুই সামান্য ছবি দেখে কীভাবে বলতে পারিস সুবিধার নয়?”
মায়ার ঠোঁটের কোণা অলক্ষ্যে প্রশস্ত হলো। বালিশ ঠিক করতে করতে বলল‚ “আমি তো শুধুমাত্র আমার মতামত জানালাম। বেশ‚ উপদেশ বলতে পারো। বাকিটা তোমার উপর নির্ভর করে। কারণ জীবন তোমার। জীবনসঙ্গীও তোমার হবে।”
রিদি কোন জবাব দেয় না। নির্বাক ও বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মায়া একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানার দিকে ইশারা করে আবারও বলে‚
“রাত অনেক হয়েছে। এখন ঘুমান‚ ম্যাডাম।”
রিদি সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে। বাতি নিভিয়ে মায়ার পাশে শুয়ে পড়ে। খানিকক্ষণের নিরবতা। রিদি মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেও মায়া কপালে এক হাত ঠেকিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে৷
“তুই এমনটা কেন বললি?”
আবারও হাম্ তুলে মায়া রিদির দিকে তাকায়। মুচকি হেসে জবাবে পালটা প্রশ্ন করে‚
“ছেলেটাকে ভালো লেগেছে তোমার?”
রিদি এবারও সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে। অকাতরে মায়ার জবাবের অপেক্ষা করে।
“ভেবে চিন্তে‚ সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিও। এটা সম্পূর্ণ জীবনের বিষয়। লম্বা যাত্রা। ক্ষণিকের না। প্রয়োজনে লোকটাকে কিছুদিন যাচাই করো।”
রিদি মায়ার কথার অর্থ এবং ইঙ্গিত বুঝতে পারে। সে আর কোন কথা বাড়ায় না। অসুস্থতার কারণে ঔষুধ সেবন করায় ক্ষণিকের ভেতর তার চোখজোড়া ঘুমের কারণে ভারী হয়ে আসে। ঘুমিয়ে যায় সে।
“তোমায় স্পর্শকারী সকলের পরিণতি এমন অথবা এর থেকেও ভয়ঙ্কর হবে।”
নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া। তার মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুমাত্র এই একটি কথার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কারণ অজানা। ঢোক গিলে গলা ভেজানোর চেষ্টাতে ব্যর্থ হয় সে। উঠে বসে পাশের টেবিল থেকে পানি পান করে।
হঠাৎ এক আতঙ্ক তাকে ঘিরে ধরে। তার স্মরণ হয় রিকার্দোর কথা। সেদিন রিকার্দো তাকে বিভিন্ন কারণে-অকারণে স্পর্শ করেছিল। রিয়ন তার কোন ক্ষতি করবে না তো?
হৃদস্পন্দন স্পষ্টত অস্বাভাবিক হয়ে উঠে তার। ঘাড় বাঁকিয়ে ঘুমন্ত রিদির দিকে তাকায় সে। নিঃশব্দে নিজের মোবাইল উঠিয়ে নিয়ে সে নিজের রুম থেকে বারান্দায় চলে যায়। কনটাক্ট লিস্ট খুঁজে রিকার্দোর নাম্বার বের করে অবিলম্বে তাকে কল করে। কল হচ্ছে‚ কিন্তু রিসিভ করা হলো না। বিরক্তবোধ করে মায়া। রিকার্দো কি এত দ্রুত ঘুমিয়েছে? সে আরো কয়েকবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
একই স্থানে থমকে দাঁড়িয়ে মেঝের অনির্দিষ্ট স্থানে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকল সে। এরপর কল লিস্ট থেকে রিয়নের নাম্বার বের করে নিল। আজ অবধি বেশ অনেকবার রিয়ন তার সাথে যোগাযোগ করতে কল করেছিল। কিন্তু মায়া তাকে উপেক্ষা করেছে। এক পর্যায়ে নাম্বার ব্লকও করেছিল। ভাগ্যবশত তা মুছে দেয়নি।
আকম্পিত আঙুল মোবাইলের স্ক্রিনে স্পর্শ করে রিয়নকে কল করে। তার মনে বাসা বাঁধা ভয় আরো দ্বিগুণ রূপ ধারণ করে যখন সে উপলব্ধি করে রিয়ন নিজেও কল রিসিভ করছে না। যতটুকু সে রিয়নকে জানে এভাবে তার কল এড়িয়ে চলার পাত্র রিয়ন নয়। যতো ব্যস্ততা হোক বা গভীর রাত।
ŞİMDİ OKUDUĞUN
সন্ধ্যাবন্দনা
Vampir"আমি তোমার জীবনের এমন এক অধ্যায় যার সূচনা তোমার হাতে হয়েছিল‚ মন-ময়ূরী। যাকে তুমি স্বেচ্ছায় আশ্লেষে আলিঙ্গন করেছিলে। কিন্তু এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি লিখব আমি। এবং কেবলমাত্র আমি।"